খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৬ :
সুবল রায়, দিনাজপুর : আমন মাড়াই মৌসুম শুরু হতে আরও প্রায় দেড়মাস বাকী থাকলেও দিনাজপুরসহ এই অঞ্চলে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে আমন ধান কাটা। আগাম জাতের স্বল্প মেয়াদী এসব ধান এসময়ে তুলতে পেরে কৃষকরাও ভালো দাম পেয়ে বেশ লাভবান। আর অন্যান্য বছর এসময়ে কাজ না থাকলেও অভাবের মাস হিসেবে পরিচিত এই কার্ত্তিক মাসে কাজ পেয়ে পরিবারের আহার যোগাতে পেরে আনন্দিত কৃষি শ্রমিকরাও।
দিনাজপুরসহ এই অঞ্চলে গ্রামীণ একটি প্রাচীন প্রবাদ রয়েছে, যা হলো- “হাত্তিক (হাতি) ঠেলা যায়, তো কার্ত্তিক ঠেলা যায় না”। অর্থ্যাৎ সবচেয়ে বড় ও বেশী শক্তিশালী প্রাণী হাতিকে ঠেলে পার করা যায়, কিন্তু অভাবের মাস হিসেবে পরিচিত কার্ত্তিক মাস পার করা কঠিন। কারন এই মাসে কৃষকের ঘরে কোন ফসল থাকেনা। আর মাঠে কোন কাজ না থাকায় কৃষি শ্রমিকরা বেকার হয়ে বসে থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে ও অর্ধাহারে মানবেতর জীবন যাপন করে। ফলে এই মাসের দিনগুলো পার করতে বেশ কঠিন হয়ে যায় তাদের।
কিন্তু ধীরে ধীরে এই প্রবাদের বাস্তবতা এখন বিলুপ্তির পথে। কারন কার্তিক মাস শুরু হতে না হতেই দিনাজপুরসহ এই অঞ্চলে শুরু হয়েছে আমন ধান কাটা। স্বল্প মেয়াদীর আগাম জাতের এসব ধান কাটা শুরু হওয়ায় কৃষি শ্রমিকরা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ফসলের মাঠে।
আর অভাবের এই মাসে কাজ পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোভাবে দিন পার করতে পেরে খুশী কৃষি শ্রমিকরা। তারা জানান, আগাম জাতের এই ধান আবাদ করে অসময়ে ফসল পেয়ে কৃষকদেরও লাভ, আর এই সময়ে কাজ পেয়ে পরিবারের আহার যোগাতে পেরে তারাও বেশ খুশী।
কৃষকরা জানান, আগাম জাতের স্বল্প মেয়াদী আমন ধান কাটার পর একই জমিতে বাড়তি ফসল হিসেবে আলুসহ অন্যান্য রবিশষ্য আবাদ করবে তারা। আর বর্তমানে বাজারে ভালো দাম থাকায় তারাও এই ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন। তাছাড়া, এ সময় কাজের চাপ না থাকায় তুলনামুলক কম দামেই শ্রমিক পাচ্ছেন তারা। এ ক্ষেত্রে আগাম এই ধান আবাদ করে উভয় দিক থেকেই লাভবান বলে জানালেন তারা।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, দিনাজপুর জেলায় এবার মোট ২ লাখ ৫৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের বিনা-৭, ব্রি-ধান ৬২, ব্রি-ধান-৫৬, ৫৭ এবং ভারতীয় সোনামুখী ধান আবাদ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এসব ধান কাটা-মাড়াই শুরু করেছে কৃষকরা। আগাম জাতের এই ধানের ভালো দাম পেয়ে কৃষকরাও লাভভাবন আর কৃষি শ্রমিকরাও অভাবের এই মাসে কাজ পেয়ে বেশ উপকৃত হচ্ছেন বলে জানালেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে ইতিমধ্যেই মঙ্গা পীড়িত এলাকার বদনাম ঘুচিয়েছে এই অঞ্চল। আর আগাম জাতের এই আমন ধান আবাদ করে কার্ত্তিকের অবর্ণনীয় অভাবকে বিদায় জানাতে শুরু করেছে এই অঞ্চলের কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা।