খোলা বাজার২৪, শনিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬: আজ ৩ ডিসেম্বর, বরগুনা হানাদার মুক্ত দিবস। একাত্তরের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমনের মুখে বরগুনায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তানী হানাদাররা। তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সত্তারের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা ফজরের আযানকে টাইম কোড ধরে এক যোগে ওপেন ফায়ার করে দখলে নেয় বরগুনা থানা। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে নিহত হয় শামসুল হক রাজাকার ওরফে শামসু রাজাকার। গণ আদালতে বিচারের পর ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয় বরগুনার কুখ্যাত রাজাকার আজিজ মাষ্টার, হোসেন মাষ্টার, মোতালেব মাষ্টার এবং আজিজ কেরানিকে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বরগুনার বিভিন্ন থানা ও তৎকালীন মহাকুমা সদরে পাক বাহিনী অবস্থান করে পৈশাচিক নারী নির্যাতন ও নির্বিচারে গণহত্যা চালায় এবং ৭১ এর ২৯ ও ৩০ মে বরগুনা জেলখানায় ৭৬ জনকে গুলি করে নির্মম ভাবে হত্যা করে। সময়ের ব্যবধানে কয়েক মাসের মধ্যেই বরগুনার মুক্তিযোদ্ধারা শক্তি অর্জন করে মনোবল নিয়ে এলাকায় ফিরে আসেন। বরগুনা, বামনা, বদনীখালী ও আমতলীতে যুদ্ধের পরে পাকবাহিনীর সদস্যরা বরগুনা ট্রেজারী, গণপূর্ত বিভাগের ডাকবাংলোয়, জেলখানা ও থানায় অবস্থান নেয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বরগুনা ছিল নবম সেক্টরের অন্তভূক্ত বরগুনার বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া সাব-সেক্টরের অধীনে। বরগুনার বুকাবুনিয়ার মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ এর ২ ডিসেম্বর রাতে বরগুনা বেতাগী থানার বদনীখালী বাজারে আসেন। এরপর রাত তিনটার দিকে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সত্তার খানের নেতৃত্বে ২১ জন মুক্তিযোদ্ধা নৌকা যোগে বরগুনার খাকদোন নদীর পোটকাখালী এলাকায় অবস্থান নেন। পরে রাতেই কারাগার, ওয়াপবদা কলোনী, জেলা স্কুল, সদর থানা, ওয়ারলেস ষ্টেশন, এসডিওর বাসাসহ বরগুনা শহরকে কয়েকটি উপ-বিভাগে ভাগ করে ফজরের আযানকে টাইম কোড করে এক যোগে ৬টি স্থান থেকেই হামলা শুরু করেন। এ সময় দলনেতা সত্তার খান ছিলেন কারাগার এলাকায়। তিনি জেলখানায় অবস্থানরত পুলিশ ও রাজাকারদের আত্মসমর্পন করিয়ে এসডিও অফিসের সামনে নিয়ে আসেন। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা গিয়ে স্বাধীনতাকামী তৎকালীন এসডিও আনোয়ার হোসেনকে আত্মসমর্পন করান। দুপুর বারোটার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রশাসনিক দায়িত্ব এসডিওকে সাময়িকভাবে বুঝিয়ে দিয়ে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে বুকাবুনিয়া সাব-সেন্টারে চলে যান।
মুক্তিযোদ্ধা মো. আনোয়ার হোসেন মনোয়ার বলেন, ৭১ এর সেই রনাঙ্গনের কথা মনে পড়লে আজও আমাদের চোখে পানি এসে যায়। মাত্র ২১ জনের একটি দল নিয়ে আমরা বরগুনাকে মুক্ত করে ছিলাম। আমাদের প্রবল আক্রমনের এক পর্যায়ে আতœসমর্পন করেতে বাধ্য হয়েছিলো অর্থশতাধিক রাজাকার ও পুলিশ।
মুক্তিযোদ্ধা সুখরঞ্জন শীল বলেন, বরগুনার গণপূর্ত বিভাগের ডাকবাংলোয় নারীদের ধরে এনে পাশবিক নির্যাতন চালাত হানাদাররা। ৭১ এর ২৯ ও ৩০ মে স্থানীয় নিরীহ অধিবাসীদের বন্দী করে বরগুনা জেলখানায় গণহত্যা চালায় পাক হানাদাররা। পাকিস্তানীদের গুলীতে বিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় লাশের স্তুপ থেকে হামাগুড়ি দিয়ে পালানোর সময় স্থানীয় অধিবাসী কেষ্ট ডাক্তারকে কোদাল দিয়ে নৃসংশভাবে পিটিয়ে হত্যা করে রাজাকাররা।
বরগুনার জেলা প্রশাসক ডঃ মোহাঃ বশিরুল আলম বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের আত্মত্যাগ কোনোদিন ভুলবার নয়। শ্রদ্ধা অবনত চিত্তে তাদের যুগ যুগ ধরে স্মরণ করে যেতে হবে আমাদের। তবে শহিদ পরিবারকে ভাতা দেওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের। তবু আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে শহিদ পরিবারের জন্য যাতে ভাতার ব্যবস্থা করা যায় সে বিষয়ে কথা বলবো।