খোলা বাজার২৪, শনিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬: মুন্সীগঞ্জে মামলায় জয়ের জন্য আলমগীর (৪২) নামের এক কোল্ড স্টোরের লেবার কন্ট্রাকটর মিথ্যা অপহরনের নাটক করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানাযায়, মিরকাদিমে অবস্থিত সানফ্লাওয়ার কোল্ড স্টোরে শ্রমিক সর্বরাহের কন্ট্রাকটর হিসাবে কাজ করিত নজরুল, জাহাঙ্গীর ও জিলাল। কোল্ড স্টোরের মালিক পক্ষের সঙ্গে তাদের ২০১৫ সালে শ্রমিক সর্বরাহের খরচ বাবদ ১২ লক্ষ টাকার একটি ডিট হয়। বিনিময়ে আলমগীর লেবার দিবে। ডিট অনুযায়ী ১২ লক্ষ টাকার তিন পার্টনার ভাগ করে নেওয়ার কথা। কিন্তু লেবার দেওয়া বাবদ ১২ লক্ষ টাকা ও প্রায় ৩ শতাধিক শ্রমিক নিয়ে পালিয়ে যায় আলমগীর।
পরে অন্যান্য লেবারগন কাজ করে মালিকের টাকা পরিশোধ করেন। এ নিয়ে জাহাঙ্গীর এর সাথে বিরোধ চলে আসছিল। অনেক শ্রমিকের সাথে আলাপ করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকী পার্টনার জাহাঙ্গীর আর জিলাল তাদের পার্টনার শীপের টাকা চাইতে গেলে আলমগীরের সাথে একাধিকবার শালিশ বৈঠক হয়। পরবর্তীতে পার্টনাররা যাতে টাকা চাইতে না পারে সেজন্য উল্টে আলমগীর বাদী হয়ে ২০-১০-২০১৬ ইং তারিখে মুন্সীগঞ্জ আদালতে জাহাঙ্গীর, নজরুল ও সানফ্লাওয়ারের মালিক মনির বেপারীকে আসামী করে একটি সি আর মামলা দায়ের করেন। যাহার নং- ৩৩৯/১৬ ধারা- ৪০৬/৪২০/৫০৬(।।)/৩৪ দঃবিঃ। গত- ২৪-১১-১৬ ইং তারিখে মামলার ১ নং- আসামী মোঃ জাহাঙ্গীরকে জোর পূর্বক অপহরন করে নিয়ে যায়। পরে মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইউনুচ আলীর প্রচেষ্টায় অপহরনকারী আলমগীর মোঃ জাহাঙ্গীরকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে ২৯-১১-১৬ ইং তারিখে মামলায় হাজিরা দেওয়ার জন্য কোর্টে আসেন মোঃ জাহাঙ্গীর ও মামলার প্রধান স্বাক্ষী জিলাল। প্রথমে জিলান যাতে সত্য স্বাক্ষী না দিতে পারে তখন তাকে রাস্তা থেকে আলমগীরের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা তুলে নিয়ে যায়। পরে খুন করবে বলে হুমকি দিয়ে জিলানকে তার গ্রামের বাড়ী মানিকগঞ্জে পাঠিয়ে দেয়। পরে মামলায় জিতার জন্য অপহরনের নাটকের আশ্রয় নেন আলমগীর। হঠাৎ আদালত চত্বরে চিৎকার করে বলে আমাকে অপহরন করতে চাচ্ছে বাঁচান বলে কোর্টের এজলাসে ঢুকে পড়েন। পরে কোর্ট পুলিশকে বিচারক নির্দেশ দেন তাকে নিরাপদ হেফাজতে তার বাড়ী পৌছে দিতে।
ঘটনার প্রত্যাক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি হাজিরা দেওয়ার পর আমাদের সামনে দাঁড়িয়েছিল অনেকক্ষন। হঠাৎ বলে আমাকে ধরে নিয়ে যাবে বাঁচান। কে তাকে ধরতে আসলো , এমন কাউকে আমরা আদালত চত্বরে দেখিনি। আর কোর্টের ভিতর থেকে বাদীকে তুলে নেওয়ার কারো সাধ্য নেই। লোকটি মামলার জিতার জন্য একটা নাটক তৈরী করেছে। তবে লোকটির মতিগতি সকাল থেকে ভাল ছিল না । তিনি কয়েকজন স্থানীয় সংবাদ কর্মীকে সকাল থেকে কোর্ট চত্বরে এনে বসিয়ে রেখেছিলেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী কোল্ড স্টোরের পার্টনার দৌলত মেম্বার জানান, মামলার বাদী আলমগীর ডিটের ১২ লক্ষ টাকা একা তুলে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। পরে সঙ্গীয় পার্টনার নজরুল আর জাহাঙ্গীর আলমগীরের কাছে টাকা ফেরত চায়। এ নিয়ে আমি একাধিবার বিচার শালিশও করেছি। তিনি আরো বলেন, পরবর্র্তীতে পার্টনারদের টাকা ফেরত দেওয়ার ভয়ে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে কোর্টে টাকা দাবি করে সি আর মামলা করে। ২৯-১১-১৬ইং তারিখের অপহনের বিষয়টি শুধুমাত্র সাজানো নাটক।
বাদী আলমগীরের প্রধান স্বাক্ষী জিলাল শেখ জানান, আমি তার সাথে পার্টনার ছিলাম। মামলায় আমাকে প্রধান স্বাক্ষী করা হয়েছে সেটা আমার জানা নেই। তবুও আমি কোর্টে গিয়েছিলাম সত্য ঘটনাটি বলার জন্য। আলমগীর যখন বুঝতে পারলো আমি সত্য ঘটনা কোর্টকে বলে দিব তখন আলমগীরের লোকজন আমাকে ধরে নিয়ে যায়। মারধর করে বলে মুন্সীগঞ্জে থাকলে খুন করে ফেলবো। এখন আমি আমার গ্রামের বাড়ী মানিকগঞ্জে আছি।
ঘটনার বিষয়ে আলমগীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাহাঙ্গীরকে আমি অপহরন করিনি। ২৪-১১-১৬ ইং তারিখে তাকে হিসাব নিকাশ করার জন্য আমার বাড়ীতে নিয়ে গিয়েছিলাম। আপনাকে যখন অপহরন করতে জাহাঙ্গীরের লোকজন গিয়েছিল তখন তাদের দেখেছিলেন? কোর্টে শত শত লোক ছিল তারাও কি দেখেনি কারা আপনাকে অপহরন করতে কোর্টের ভিতরে গিয়েছিল?।এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি তখন বিষয়টি কাউকে না জানিয়ে বিচারককে বলেছি। বিচারক পুলিশকে বলে দিয়েছে আমাকে নিরাপদে পৌছে দিতে। এ ঘটনার থানায় কোন জিডি কিংবা অভিযোগ করেছেন জবাবে তিনি বলেন, কোন জিডি বা অভিযোগ করা হয়নি।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি ইউনুচ আলী জানান, এই আলমগীরই গত- ২৪-১১-১৬ ইং তারিখে জাহাঙ্গীরকে অপহরন করেছিল। পরে পুলিশী তৎপরতার জন্য ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ওদিন কোর্টে বাদী এবং আসামী পক্ষের লোকজন হাজিরা দিতে এসেছিল। মামলা করার বিষয়টি ওর কাছে জানতে চেয়েছিল কোল্ড স্টোরের মালিক কর্তৃপক্ষ। তখন জবাবে এড়াতে তিনি অপহরনের সুত্র তুলে বিচারকের কাছে নিরাপত্তা চান।