খোলা বাজার২৪, রবিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬: নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী গবেষণায় দেখেছেন, গর্ভবতী মা চিত হয়ে শুয়ে থাকলে তার মৃত শিশু (স্টিলবার্থ) প্রসবের ঝুঁকি বেশি থাকে। গর্ভবতী মা চিত হয়ে শুয়ে থাকলে গর্ভস্থ শিশুর হৃৎস্পন্দন ও নড়াচড়া কমে যায়। এটা ইঙ্গিত দেয় যে অক্সিজেন কমে যাওয়ায় শিশুটি খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে।
গবেষকেরা দেখেছেন, গর্ভকালের তৃতীয় পর্যায়ে মায়ের অবস্থানের সঙ্গে গর্ভস্থ শিশু বা পরিণত ভ্রূণের আচরণ ও তার হৃৎকম্পনের সম্পর্ক আছে। মা চিত হয়ে শুয়ে থাকলে ভ্রূণ সবচেয়ে কম সক্রিয় থাকে, অনেকটা ঘুমানোর পরিস্থিতিতে থাকে। এটা ভ্রূণের অক্সিজেন কম পাওয়ার পরিস্থিতি নির্দেশ করে। উপসংহারে গবেষকেরা বলেছেন, মায়ের চিত হওয়া অবস্থান শিশুর জন্য ভালো নয় এবং এটা শিশুর মৃত্যু ঘটানোর জন্য যথেষ্ট।
এই গবেষণা যুক্তরাষ্ট্রের দ্য জার্নাল অব ফিজিওলজিতে ছাপা হয়েছে। গবেষণার এই ফলাফলকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক রওশন আরা বেগম। তিনি বলেন, ‘কয়েক দশকের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, মা চিত হয়ে থাকলে গর্ভস্থ শিশুর শরীরে রক্তপ্রবাহ কমে যায়।’
যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসা সাময়িকীর এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বছরে ৮২ হাজার মৃত শিশু প্রসব হয়। নতুন বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে গবেষকেরা বলেছেন, মায়ের ভিন্ন ভিন্ন দেহভঙ্গিমার প্রভাব গর্ভস্থ শিশুকে কীভাবে প্রভাবিত করে, তা মূল্যায়ন করাই ছিল গবেষণার উদ্দেশ্য।
অকল্যান্ডের ন্যাশনাল উইমেন হসপিটালে ভর্তি হওয়া ২৯ জন মায়ের ওপর এই গবেষণা হয়েছে। মায়েদের প্রত্যেকের বয়স ছিল ১৮ বছরের বেশি। এতে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে রেখে মায়েদের তথ্য নেওয়া হয়। একটি অবস্থানে ৩০ মিনিট করে থাকতে হয়। পরীক্ষার পুরো সময় গর্ভস্থ শিশুর ইসিজি, ইলেক্টেরাহিসটেরোগ্রাম ও মায়ের হৃৎস্পন্দন রেকর্ড করা হয়।
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, ‘হৃৎপিণ্ড থেকে একটি বড় রক্তনালি (ইনফেরিওর ভেনাকেভা) শিরদাঁড়ার একটু ডান পাশ দিয়ে মায়ের শরীরের নিচের দিকে নেমেছে। গর্ভস্থ শিশুও ওই রক্তনালির সঙ্গে যুক্ত থাকে। গর্ভধারণের তৃতীয় সপ্তাহে শিশুর ওজন অনেক বেশি থাকে। মা চিত হয়ে শুয়ে থাকলে রক্তনালিতে চাপ পড়ে এবং শিশুর শরীরে রক্ত চলাচল বিঘিœত হয়, এটাই অক্সিজেন কম পাওয়ার মূল কারণ।’
তিনি বলেন, এ কারণেই গর্ভবতী মাকে বাঁ দিকে কাত হয়ে শোয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরাও দেখেছেন, মায়ের বাঁ দিকে কাত হওয়া অবস্থানে শিশুরা বেশি অক্সিজেন পায়, বেশি সক্রিয় থাকে।