Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

3-7খোলা বাজার২৪, রবিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬:  রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা দিয়াড়পাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল জলিল মোল্লা হাট-বাজারে গান গেয়ে সংসার চলে। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল জলিলের সম্মানী ভাতার টাকায় ছয় সদস্যের পরিবার চালানো জন্য খুবি কষ্ট হয়ে উঠেছে। এ সম্মানী ভাতার টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করতে হয় তার। অন্যের জায়গায় এক চিলতে জমির উপর ঘেঁষাঘেঁষি করে পরিবার পরিজন নিয়ে দৌচালা একটি ঘরে বসবাস করছেন তিনি। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন এই মুক্তিযোদ্ধা। অভাবের তাড়নায় প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে কাঁধে ঝোলা আর গান বাজানোর যন্ত্র নিয়ে মানুষের দারে দারে ঘুরে বেড়ায়। জীবনকে বাজি রেখে দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তবে তিনিই এখন জীবনযুদ্ধে পরাজিত এক যোদ্ধা।

তিনি ৭ নম্বর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল উসমান ও গিয়াস উদ্দীনের অধিনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা আবদুল জলিল বর্তমানে গানবাজনা করে ও মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা দিয়ে ছয় সদসস্যের পরিবারর চলছে। আবদুল জলিল জানান, ১৯৭১ সালে দেশকে রক্ষা আর জীবন বাঁচানোর তাগিদে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে অস্ত্রহাতে নিই যুদ্ধের জন্য। কমান্ডার উসমান এর নেতৃত্বে ৭নং সেক্টরে ১১৩ জন সৈন্য নিয়ে রংপুর, দিনাজপুর, যশোর, বেনাপোলসহ বিভিন্ন জায়গায় বীরত্বের সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

তিনি যশোর কেন্দ্রে নিয়োজিত কমান্ডারের কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর ৯৪ হাজার সৈন্য নিয়ে আত্মসমর্পন করা পর্যন্ত যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন আবদুল জলিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেই বড় আশা নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন তিনি। ৩ বছর চাকরি করার পর দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হওয়ায় চাকরি হারান। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস চাকরি হারানোর সাথে সাথে সবচেয়ে কাছের মানুষ স্ত্রীকেও হারান তিনি। বাড়ির আশেপাশের লোকজনের চক্রান্তে নিজের বাপ-দাদার অনেক জায়গা জমিও বেদখল হয়। চাকরি ও স্ত্রী হারানোর পর আরও অসুস্থ হয়ে পাগলের মত হয়ে যান মুক্তিযোদ্ধা জলিল। পরবর্তীতে একটু সুস্থ হলে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে গান-বাজনা বেছে নেন। বর্তমানে পরিবারে দুই মেয়ে, চার ছেলে। বড় তিন ছেলে ও এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। অপর মেয়ে ও ছেলে কলেজে লেখাপড়া করে। এতবড় সংসার মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা ও গান বাজনা করে যা পায় তাই দিয়েই সংসার চলে। গানবাজনা দিয়ে প্রতিদিন আয় হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা। বড় সংসার চালানো কষ্টকর হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল জলিল মন্ডল তার ছেলে-মেয়ের লেখা-পড়ার দায়িত্ব নেয়ার জন্য সমাজের সুহৃদয় ব্যক্তিদের কাছে আবেদন জানান।