Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, সোমবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬: হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার শাহজালাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ূব আলীকে শোকজ করেছে উপজেলা প্রশাসন। গত ২৮ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া বার্ষিক পরীক্ষায় ধর্ষনের শিকার হওয়া স্কুল ছাত্রীকে পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করতে না দেওয়ায় রোববার বিকেলে তাকে শোকজ নোটিশ করেন বাহুবল উপজেলা নির্বাহি অফিসার সাইফুল ইসলাম।

উল্লেখ্য, জেলার বাহুবলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক ধর্ষিতাকে স্কুল থেকে বের করে দেয় শাহজালাল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে চলতি বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারায় ওই ছাত্রীর শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়ে। এবছরে ১৯ জুলাই ভোরে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ওই কিশোরীকে অপহরণ করে ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। এ ব্যাপারে ছাত্রীর পিতা বাহুবল মডেল থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ দু’অপহরণকারীকে গ্রেফতার ও আদালতে চার্জসীট প্রদান করে। কিন্তু মূলধর্ষক এখনো পলাতক রয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের চিচিরকোট গ্রামের (হরিধন চক্রবর্তী এর কন্যা শাস্তা চক্রবর্তী) নিকটবর্তী নতুনবাজার শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। গরীব শ্রমজীবী পরিবারের ওই ছাত্রীদের বাড়িতে পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে প্রায়ই আসা-যাওয়া করতো পার্শ্ববর্তী হিমারগাঁও গ্রামের সিদ্দিক আলীর স্ত্রী ফাতেমা বেগম (২৩)। সে ওই ছাত্রীকে ঢাকায় নিয়ে ভাল বেতনে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখায়। গত ১৯ জুলাই ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ওই ছাত্রীকে ফুসলিয়ে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসে ফাতেমা বেগম। পরে তাকে তোলে দেয় যশপাল গ্রামের মৃত হোসেন আলীর পুত্র জাহির হোসেন (৩৫) ও একই গ্রামের আজগর আলীর পুত্র সামছুদ্দিন প্রকাশ সামছু প্রকাশ সমশের উদ্দিন (৩২) এর হাতে। তারা সারা দিন একটি পিকআপ ভ্যান গাড়িতে করে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করে বাহুবল উপজেলার মিরপুর বাজারস্থ সানি ফার্নিচার মার্ট নামক দোকানে রাত্রী যাপন করে। সেখানে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। পরদিন ওই ছাত্রীকে অন্যত্র পাচারের চেষ্টাকালে বাজারের পাহারাধারের হাতে আটক হয়।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী জানান, ঘটনার পরপরই বিদ্যালয়ের বৃহত্তরে স্বার্থে ম্যানেজিং কমিটি ওই ছাত্রীটিকে টিসি দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই তাকে ২৮ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া যায়নি। সত্যিকার অর্থে আমার কিছুই করার ছিল না। বিষয়টা সম্পূর্ণ ম্যানেজিং কমিটির ব্যাপার। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হাশিম মিয়া মোবাইল ফোনে জানান, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ছাপের মুখে আমরা তাকে টিসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি অনেক আগে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমাদের সাথে কেউ যোগাযোগ করেনি। একটি কুচক্রিমহল আমাকে হেও প্রতিপন্ন করার তাগিদে তারা এখন ছাত্রীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহনের সুযোগ চাইছে। গত পাঁচ মাসের ভিতরে ছাত্রী বা অভিভাকের কোন সদস্য আমাদের স্কুলে আসেনি।

এ ব্যাপারে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, তার সাথে মানবিক দৃষ্টি দেখানোর পরিবর্তে অমানবিক আচরন করছেন প্রধান শিক্ষকসহ স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে কারন দর্শাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর কোন ব্যতয় ঘটলে প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আমি নিজে তাকে গাড়ি করে পরিক্ষার হলে নিয়ে গিয়েছি। ইতোমধ্যে ওই ছাত্রী রবিবারের পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছে। তার পরেও যদি কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রীর পরিক্ষা নিয়ে আর কোন ধরনের টাল-বাহানা করে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।