খোলা বাজার২৪, বুধবার, ৭ ডিসেম্বর ২০১৬:
চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ছয় দশমিক ৩০ শতাংশ। তবে এ সময়ে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। আর নভেম্বর মাসে আগের অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাত দশমিক ২৬ শতাংশ। যা গেল মাসের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাঁচ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি। রপ্তানিকারক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন অর্থবছরের প্রথমে রপ্তানি বাণিজ্যে ধীরগতি থাকলেও এখন তা স্বাভাবিক গতিতে ফিরেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৪২৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে এক হাজার ৩৬৯ কোটি এক লাখ ডলার। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চার দশমিক ১৭ শতাংশ কম আয় হয়েছে। গত বছর একই সময়ে আয় হয়েছিল এক হাজার ২৮৭ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। মূলত প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক খাতের মধ্যে ওভেন পোশাকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পিছিয়ে পড়ায় সার্বিকভাবে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
একক মাস হিসাবে নভেম্বরে মোট ২৮৯ কোটি ৯৩ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই মাসে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৭৪ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। সে হিসাবে আগের অর্থবছরের নভেম্বর মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের নভেম্বর মাসে ১৫ কোটি ডলার বেশি রপ্তানি হয়েছে। নভেম্বর মাসের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৭০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সাত দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি রপ্তানি হয়েছে।
ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা বলেন, অর্থবছরের প্রথম দিকে রপ্তানি তুলনামূলক কম হয়। তবে শেষের দিকে বেশ ভাল রপ্তানি হয়। লক্ষ্যমাত্রা পূরন না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এবার ওভেন পোশাক খাতে রপ্তানির যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তার চেয়ে অনেক কম হয়েছে। ফলে সার্বিক রপ্তানি খাতে তার প্রভাব পড়েছে। এ বিষয়ে রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বসে বিষয়টি বিশ্লেষন করা হবে বলে জানান তিনি।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি খাত মূলত পোশাক নির্ভর। রপ্তানিতে পোশাক খাতের অবদান দিন দিন বাড়ছেই। এ কারনেই রপ্তানি আয়ে উল্লেখ করার মত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হচ্ছে। আর এ খাতে যখন রপ্তানি কমে যাচ্ছে সার্বিকভাবে তখন রপ্তানি কমে যাচ্ছে। তিনি রপ্তানি আয় আরো বাড়াতে প্রচলিত বাজার ছাড়াও অনেক নতুন বাজারের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পোশাকের পাশাপাশি অন্য পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর প্রতি মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন।
ইপিবি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি আয়ের প্রধান হাতিয়ার তৈরি পোশাকের মধ্যে নিটওয়্যার খাতে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে। তবে ওভেন পোশাক খাত লক্ষমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এ দু খাতেই আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে নিট পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৫৬৩ কোটি ২৭ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় দুই দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি। এ সময়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৪৭ কোটি ১১ লাখ ডলার। এ সময়ে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সাত দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আয় হয়েছিল ৫২৩ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। গত জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ে ওভেন পোশাক রপ্তানি করে ৫৪৯ কোটি ৮৬ লাখ ডলার আয় হয়েছে। যা আগের অর্থবছরে একই সময়ের তুলনায় পাঁচ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি। তবে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ কম।
এ সময়ে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২৫ কোটি ৯২ লাখ ডলার। আর গত অর্থবছরে একই সমেয় এ খাতে আয় হয়েছিল ৫২২ কোটি ৬০ লাখ ডলার। স্পেশালাইজড টেক্সটাইল খাতের প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা দুটোই নেতিবাচক। আর হোম টেক্সটাইল অল্প প্রবৃদ্ধি হলেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য কিছু পণ্যের লক্ষ্যমাত্রা প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হলেও অনেক পণ্যে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ভাল প্রবৃদ্ধি হয়েছে।