Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

2nbsখোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০১৬: মিয়ানমারের নিরপরাধ নিরস্ত্র জনগণের উপর দেশটির সেনাবাহিনীর চালানো নৃশংস গণহত্যার ভিডিও প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের একটি টিভি চ্যানেল।
যুক্তরাজ্যের দ্য ইনডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার খবরে বলা হয়, ওসমান গণি নামে এক শিক্ষক মোবাইল ফোনে ধারণ করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ওই গণহত্যার খণ্ড চিত্রটি পাঠিয়েছেন।
এতে দেখা যায়, তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে প্রথমে সেনা সদস্যরা গুলি করে হত্যা করে। এরপর মৃতদেহে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
গত অক্টোবরে বাংলাদেশ সীমান্তে টহল দেয়ার সময় অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের হামলায় মিয়ানমারের ১০ সীমান্তরক্ষী পুলিশ (বিজিপি) নিহত হওয়ার পর থেকে দেশটির মুসলিম সংখ্যালঘু গোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের উপর নির্বিচারে সরকার জাতিগত শুদ্ধি অভিযান শুরু করে।
ভিডিওতে দেয়া সাক্ষাৎকারে মোহসিনা বেগম (২০) নামে এক রোহিঙ্গা নারী কেইরাফারা নামে তাদের গ্রামে সেনা অভিযানে চালানো নৃশংসতার ভয়াবহ বর্ণনা দেন।
তিনি বলেন, সেনা সদস্যরা এসেই এখানকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মেরে ফেলে। তারপর পুরুষদের ধরে নির্মমভাবে পিটাতে থাকে আর নারীদের ধরে ধর্ষণ করতে থাকে।
পরে অন্য পুরুষদের সঙ্গে তার স্বামীকেও হত্যা করে সেনা সদস্যরা। এরপর তারা নারী ও কিশোরীদের ধরে নিয়ে গিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এসময় তার ছোট শিশুকে সঙ্গে নিতে পারেন নি।
কোনোভাবে তিনি প্রাণ বাঁচিয়ে আসতে পারলেও স্বামী-সন্তান কাউকেই আর জীবিত পাননি তিনি।
আশ্রয় কেন্দ্রে সুফিয়া বেগম নামে বৃদ্ধা রোহিঙ্গা গণমাধ্যমকে রাখাইন রাজ্যে তাদের গ্রামে চালানো সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, গ্রামে ঢুকে একে একে গুলি করে তারা রোহিঙ্গাদের হত্যা করতে থাকে।
পরে চলে যাওয়ার সময় বাড়িঘরে আগুন দিয়ে যায়। গুলি করার সময় তিনি মাটিতে মরার মতো শুয়ে ছিলেন বলে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।
সেনা অভিযানের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় রাখাইনে গ্রামের পর গ্রাম হেলিকপ্টার গানশিপ দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে সরকারি বাহিনী। দিশেহারা মানুষ পাগলের মতো ছুটছে। এ অবস্থায় তাদের উপর হেলিকপ্টার থেকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করছে।
একটি মানবাধিকার সংগঠন ভূ-উপগ্রহ থেকে নেয়া রাখাইন রাজ্যের ছবিতে দেখতে পায়, সেখানকার এক হাজার দুইশ’ পঞ্চাশটি স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী।
তবে মিয়ানমার সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, তাদের সেনাবাহিনী রাখাইনে বিজিবির উপর হামলাকারীদের ধরতে অভিযান চালিয়েছে মাত্র। সেখানে কোনো শুদ্ধি অভিযান চালায়নি।
রোহিঙ্গাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে গিয়ে কেউ কেউ বিষয়টি অতিরঞ্জিত করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু রাখাইনে চালানো গণহত্যার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে কোনো সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকেও ঢুকতে দিচ্ছে না মিয়ানমার।
রোহিংঙ্গা গণহত্যার প্রতিবাদে মিয়ানমারের কড়া সমালোচনা করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। স্পষ্ট ভাষায় তিনি অং সাং সুচিকে বলেন, যথেষ্ট হয়েছে, এবার থামেন। ‘জাতিগত শুদ্ধি অভিযান’ বন্ধ করুন। তিনি গণহত্যা বন্ধে মিয়ানমারকে চাপ দিতে বিশ্ববাসীর প্রতিও আহ্বান জানান।