খোলা বাজার২৪, রবিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৬: লালমনিরহাটে দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীনি ও তার মা। গুরুত্বর আহত অবস্থায় তাদের সদর হাসপতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত এসএসসি পরীক্ষার্থীনি চাঁদনী বিল্লার পেটে লাথি ও বুকে জোরালো আঘাত করায় আশংকাজনক অবস্থায় বর্তমানে হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
এ ব্যাপারে মেয়েটির বাবা শাহাজাহান আলী বাদী হয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় বৃহস্পতিবার রাতে একটি মামলা দায়ের করেছে।
মামলার বিবরনে জানাযায়, লালমনিরহাট শহরের হাড়িভাঙ্গা এলাকায় শাহাজাহান আলীর সাথে ৭শতক জমি নিয়ে গোলাম মোস্তফা ও গোলাম রব্বানীর দির্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধওে গত শনিবার দুপুরে চিহ্নিত সন্ত্রাসী আজাদ ও রব্বানী তার দলবল নিয়ে শাহাজাহান আলীর বাড়িতে হামলা চালায়। ইজিবাইক চালক শাহাজাহান আলী বাড়িতে না থাকার সুবাধে দুর্বৃত্তরা তার বাড়িতে ঢুকে তার স্ত্রী মতিয়া বেগম এর উপর আক্রমন করে। দুর্বৃত্তরা মতিয়া বেগমকে লাঠি দিয়ে এলোপাথারী আঘাত করতে থাকলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। আঘাতের কারনে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। মাকে বাচাঁনোর জন্য লালমনিরহাট কবি শেখ ফজলুল করিম বালিকা বিদ্যালয়ের ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষর্থীনি বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্রী চাদনী বিল্লা এগিয়ে এলে সন্ত্রাসী আজাদ, রব্বানী ও তাদের দলবল ওই ছাত্রীকে বেদম মারপিট করে। দুর্বৃত্তদের আঘাতের এক পর্যায়ে ওই স্কুল ছাত্রী মাটিতে পড়ে গেলে দুর্বৃত্তরা তার পেটে ও বুকে পা দিয়ে লাথি মারতে থাকে। সন্ত্রাসীদের এলোপাথারী আঘাতের এক পর্যায়ে ছাত্রীটি সেখানেই পায়খানা করে ফেলে। এক সময় মেয়েটিও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাচাঁর জন্য মেয়েটি তাদের কাছে আকুতি মিনতি করলেও দুর্বৃত্তরা তাকে ছাড় দেয়নি। উপরোন্ত সন্ত্রাসীরা তার বুকের উপর চরে আনন্দ উল্লাস করেছে। পরে এলাকাবাসী তাদের গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। বুকে প্রচন্ড আঘাত পাওয়ায় বর্তমানে মেধাবী ওই স্কুল ছাত্রী ব্যথায় হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
লালমমনিরহাট হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, মায়ের অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও মেয়েটির অবস্থা খুব একটা ভালো না। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত রংপুরে প্রেরন করা প্রয়োজন। তা নাহলে মেয়েটিকে বাছানো কঠিন হয়ে যাবে।
ঘটনার পর পরই মেয়েটির বাবা শাহাজাহান আলী বাড়িতে এলে সন্ত্রাসী আজাদ, রব্বানী তাকে হুমকী দিয়ে বলে এ ব্যাপারে কোন থানা পুলিশ করা হলে তাদের সবাইকে খুন করে ফেলা হবে। স্ত্রী কন্যা হাসপাতালের বেডে আশংকাজনক অবস্থায় ৬দিন থাকার পরও প্রানভয়ে শাহাজাহান আলী এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দেয়নি। ঘটনা জানতে পেরে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকরা সদর হাসপাতালের ৪র্থ তলার ৯নং কেবিনে সরেজমিন গেলে মেয়েটির বাবা কান্না জড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের জানান, আমি একজন অটো চালক। অটো চালিয়ে সংসার চালাই। আমাদের নিজেদের নামীয় ৭শতক জমি দখল করার জন্য সন্ত্রাসী আজাদ, রব্বানী ও তার সন্ত্রাসীরা কিভাবে আমার মেয়ে ও স্ত্রীকে পিটিয়ে আহত করেছে। তাদের ভয়ে আমি আমার স্ত্রী-কন্যার ঠিকমত চিকিৎসা করতে পারছি না। এ সময় দেখা যায় মেয়েটি ব্যথা আর যন্ত্রনায় বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছে আর বলছে আমাকে আপনারা বাচান। আমি বাচতে চাই। ওরা (আজাদ, রব্বানী) আমাকে মেরে ফেলবে। আমি লেখাপড়া করতে চাই। আমাকে আপনারা বাঁচান। এ সময় তার আহাজারিতে উপস্থিত সাংবাদিকসহ সকলের চোখে পানি এসে যায়।
পরে মেয়েটির বাবা শাহাজাহান আলী বাদী হয়ে ১০জনকে আসামী করে বৃহস্পতিবার রাতে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে।
লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পেয়েছি, ঘটনাটি তদন্ত পূর্বক দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। মানবাধিকার কর্মী স্বপ্না জামান জানান, মেধাবী ওই স্কুল ছাত্রী ও তার মাকে অমানুষিকভাবে মারপিট করার ঘটনা কোন ভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না। তিনি প্রশাসনের নিকট অবিলম্বে ওই সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক বিচার দাবী করেন।