খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬: ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরির পর বৈশ্বিক ব্যাংকিং লেনদেন ব্যবস্থায় অভিনব কৌশলে নতুন নতুন সাইবার হামলার মাধ্যমে অন্যান্য ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরি করেছে হ্যাকাররা।
দি সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক টেলিকমিউনিকেশন (সুইফট)-এর এক কর্মকর্তার দেয়া তথ্য এবং ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো সুইফটের অপ্রকাশিত চিঠি থেকে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
রয়টার্সের হাতে আসা সুইফটের এক চিঠির তথ্যানুসারে, হ্যাকাররা অনেক শক্তিশালী এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে জানায় বিশ্বব্যাপী আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী সংস্থা- সুইফট। লেনদেন ব্যবস্থায় হুমকি বাড়ার বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করে এসব সাইবার হামলা ও হ্যাকিংয়ের নতুন নতুন কৌশল থেকে প্রতীয়মান সুইফটের মেসেজিং ব্যবস্থায় দুর্বলতা বিদ্যমান।
সুইফটের মেসেজিং ব্যবস্থার মাধ্যমে নিদের্শপত্র পাঠিয়ে প্রতিদিন শত শত কোটি ডলার লেনদেন করে থাকে বিশ্বের শীর্ষ ব্যাংকগুলো। সুইফট বলছে, সাইবার হামলার হুমকি বারবার ঘটে চলেছে, ঘটাতে সক্ষম হচ্ছে এবং সূক্ষ্মভাবে তা করা হচ্ছে এবং তা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে গচ্ছিত অর্থ সুইফটের মাধ্যমে পরিশোধের ভুয়া নির্দেশপত্র পাঠিয়ে চুরি করে অজ্ঞাত হ্যাকাররা। এখানে শেষ নয়। সেই থেকে গত কয়েক মাসে অনেক বার হ্যাকিংয়ের চেষ্টা চালানো হয়েছে এবং অর্থও চুরি হয়েছে। এফবি আই, ইন্টারপোল ও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ অর্থ চুরির তদন্ত করছে। কিন্তু এর মধ্যেই নতুন করে অর্থ চুরির ঘটনায় বিশ্বজুড়ে ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
সুইফটের কাস্টমার সিকিউরিটি প্রোগ্রামের প্রধান স্টিফেন জিলডারদেল বৃহস্পতিবার রয়টার্সকে দেয়াকে এক সাক্ষাৎকারে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির পর এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সাইবার হামলা হয়েছে, যার মধ্যে পাঁচবার তারা অর্থ হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে।
সম্প্রতি বিভিন্ন সদস্য ব্যাংকগুলোকে দেয়া সুইফটের চিঠিতে উঠে এসেছে ব্রাসেলস ভিত্তিক একটি সংস্থাসহ বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে হ্যাকিংয়ের কথা। ওই সব ক্ষেত্রেও ভূয়া বার্তা পাঠিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে হ্যাকাররা।
সুইফটে হ্যাকিংয়ের নতুন কৌশলের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় ব্যাংকের টেকনিশিয়ানদের ব্যবহৃত সফটওয়্যারে ঢুকে ভুয়া নির্দেশপত্র পাঠানোর ঘটনা।
সুইফটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির পর আরো সংঘবদ্ধ ও শক্তিশালী হয়েছে হ্যাকারা। দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থাসম্পন্ন সংস্থাগুলোকেই বেছে নিচ্ছে তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির চার মাসের মাথায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজায় সুইফট। এরপর আবারও এই সাইবার হামলার খবরে শংকিত বিশ্বের বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিশ্বের অন্তত ১১ হাজার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সুইফটের মেসেজিং প্লাটফর্ম ব্যবহার করে অর্থ লেনদেনের বার্তা পাঠায়।