Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

4kখোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬: অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য সুনামগঞ্জের, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর ও ধর্মপাশা এবং সদর উপজেলার সুরমা ও জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নসহ উত্তর পাড়ের ৫০ হাজার কৃষক শীতকালীন সবজি চাষাবাদের কাঙ্খিত লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়,সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ও সুরমা এই দুটি ইউনিয়ন সবজির অন্যতম ভান্ডার হিসেবে খ্যাত হলেও জেলা শহরের ধারারগাওঁ ও হালুয়ারঘাটের মাঝখানে সুরমা নদীর উপর ব্রীজ না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন এখানকার হাজারো সবজি চাষীরা। এদিকে ধান চাষ থেকে সবজি চাষে বেশি লাভজনক হওয়ায় উত্তরপাড়ের দুইটি ইউনিয়নের চাষীরা বছরের বারো মাস সবজি চাষাবাদ করে থাকেন। কিন্তু নদীতে ব্রীজ না থাকার কারণে পরিবহণ বিড়ম্বনায় চাষীদের সবজি চাষের অধিকাংশ লাভ চলে যায় মধ্যসত্ত্বভোগীদের হাতে। সদর উপজেলার সৈয়দপুর, কৃষ্ণনগর, কোনাগা, বেরীগাও, বালিকান্দি, পূর্বসাহেবনগর, ইব্রাহীমপুর, মঈনপুর, সাহেবনগর, বেলাবরহাটি, ষোলঘর, পার্বতীপুর, তেরাপুর, সদরগড়, অক্ষয়নগর, মুসলিমপুর, রহমতপুর, নারায়নতলা, গুদিগাও, আমপাড়া, ঝরঝরিয়া, ফেনিবিল, ডলুরা, কাইয়ারগাও, কোনাপাড়া মোকামপাড়া, মঙ্গলকাটা, কামারগাও, পুরাতন গুদিগাও, বাগেরগাও, আইমাগাও, নুরুজপুরসহ অর্ধশতাধিক গ্রামে শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করেন কৃষকরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে আরো জানাযায়, এসব এলাকার মাটি সবজি চাষের উপযোগী তাই কৃষকরা বাধাঁকপি, লাউ, মুলা, করলা, বেগুন, সীম,টমেটো,মিষ্টি কুমরা, লালশাক, বাটিশাক, ডাটাশাক, কলমিশাক, পুইশাক, রাইশাক, পালংশাক, শালগম,গাজর ইত্যাদি সবজির চাষাবাদ করেন। চলতি মওসুমে ১০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ করা হয়েছে। এতে ২ লাখ ১৮ হাজার ৬০৮ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হবে।

উৎপাদিত সবজির বাজার মূল্য শতকোটি টাকা হবে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়। কিন্তু সুরমা নদীতে সেতু না থাকায় ও অভ্যন্তরীন সড়ক গুলো মালামাল পরিবহণের অনুপোযোগী হওয়ায় কৃষকরা মধ্যস্বত্তভোগীদের কাছে নাম মাত্র মূল্য তাদের সবজি বিক্রী করে দেন। ফলে কৃষকদের লাভের টাকা চলে যায় দালাল ও ফড়িয়াদের হাতে। শত নিরাশার মধ্যে আশার আলো এই জেলার একমাত্র বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত হাটটি সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার সীমান্ত হাটের তিন কিলোমিটারের মধ্যে যেসব গ্রাম পড়েছে সেখানকার চাষীরা ভারতের মেঘালয় রাজ্যে সবজি বিক্রী করতে পারেন। দিনদিন সবজি চাষবাদে চাষীদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সেই সংগে বাড়ছে,সার,বীজ ও কীটনাশকের দাম অন্যদিকে দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বাজার সংকটের কারণে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

স্থানীয় হালুয়ারঘাট এলাকার চাষী মোঃ সুলতান মিয়া, আবু তাহের,মোঃ আব্দুল কাদির, রশিদ মিয়া এবং ব্যবসায়ী এরন মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, জেলা শহরের পাশে সুরমা নদীতে ব্রীজ(সেতু) না থাকায় সরাসরি শহরে এসে সবজি বিক্রী করতে পারলে তাদের লাভ দ্বিগুন হতো। এজন্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের উধর্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দ্রুত ধারারগাওঁ- হালুয়ারঘাট এলাকার সুরমা নদীতে ব্রীজ নির্মাণের জোর দাবী জানান।

স্থানীয় সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার বলেন, দিনদিন উত্তরপাড়ের মানুষজন সবজি চাষের দিকে আগ্রহী হচ্ছে। কিন্তু এই নদী পারাপারে চাষীরা ভোগান্তির কারণে আগামীতে চাষীরা সবজি চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। তাই দ্রুত ব্রীজ নির্মাণের দাবী জানান।

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ জাহেদুল হক বলেন, সবজি চাষীদের প্রশিক্ষণ ও কৃষি উপকরন দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তিনি আশাবাদা ব্যক্ত করে বলেন,সুনামগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি সবজি চাষের উপযোগী হওয়ায় দিন দিন চাষীর সংখ্যা বাড়ছে তাই এই জেলার প্রায় ২৩ লাখ মানুষের চাহিদা মিটিয়ে দেশ তথা বিদেশে সবজি রপ্তানী করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে জানান।