খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬: গাইবান্ধার সকল রুটে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার দিনভর গাইবান্ধায় পরিবহন ধর্মঘট পালিত হয়। ট্রাক মালিক সমিতির এক নেতাকে মারধর ও তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার প্রতিবাদে এই ধর্মঘটের ঘোষণা দেয় জেলা মোটর মালিক সমিতি ও জেলা ট্রাক মালিক সমিতি। এ ছাড়া একই ঘটনার প্রতিবাদে জেলা শহরের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ধর্মঘট শুরু করে গাইবান্ধা শিল্প ও বণিক সমিতি। অবশ্য আজ দুপুর একটায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট স্থগিত করা হয়।
জেলা ট্রাক মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন আজ রাত সাড়ে আটটায় মুঠোফোনে জানান, শহীদ বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবসের কারণে আজ রাত আটটায় জেলা প্রশাসক মো. আবদুস সামাদের মধ্যস্থতায় আগামি ১৭ ডিসেম্বর ভোর পর্যন্ত ধর্মঘট স্থগিত করা হয়।
গাইবান্ধা সদর থানার পুলিশ ও জেলা ট্রাক মালিক সমিতি সুত্র জানায়, গত মঙ্গলবার সকালে নিজস্ব মিলনায়তনে গাইবান্ধা শিল্প ও বণিক সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বণিক সমিতির এক সদস্য সমিতির সাবেক সভাপতি আবুল খায়ের মোরছালিনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। এনিয়ে বর্তমান বণিক সমিতির সভাপতি শাহজাদা আনোয়ারুল কাদির ও সাবেক সভাপতি আবুল খায়েরের সমর্থকদের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতি হয়। এসময় বেশকিছু চেয়ার ভাংচুর করা হয়। পরবর্তীতে পরিস্থিতি শান্ত হলে সভার কাজ শেষ হয়।
এই ঘটনার জের ধরে মঙ্গলবার বিকেলে আবুল খায়ের মোরছালিনের সমর্থকরা বর্তমান সভাপতির পক্ষের জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোক্তাদুর রহমানের শহরের ডিবি রোডস্থ শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এ সময় বাঁধা দেওয়ায় তারা মোক্তাদুর রহমান, তাঁর ছোটভাই বাবুল মিয়া, শ্যামলী কাউন্টারের ব্যবস্থাপক সুমন মিয়াকে মারধর করে। পরে বর্তমান সভাপতির পক্ষের ব্যবসায়ী পিয়ারুল ইসলামের শহরের হকার্স মার্কেট এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে ছয়জন আহত হন। তাদেরকে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এনিয়ে ব্যবসায়ী পিয়ারুল ইসলাম বাদী হয়ে ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪৩ জনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এসব ঘটনার প্রতিবাদে জেলা মোটর মালিক সমিতি ও জেলা ট্রাক মালিক সমিতি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ঘোষণা করে। শহীদ বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবসের কারণে আজ রাত আটটায় জেলা প্রশাসক মো. আবদুস সামাদের মধ্যস্থতায় আগামি ১৭ ডিসেম্বর ভোর পর্যন্ত ধর্মঘট স্থগিত করা হয়।
বর্তমান বণিক সমিতির সভাপতি শাহজাদা আনোয়ারুল কাদির বলেন, সভায় বার্ষিক প্রতিবেদনে সাবেক সভাপতির কিছু অনিয়ম উঠে আসে। এতে সাবেক সভাপতির সমর্থকরা হৈচৈ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা চেয়ার ভাংচুর করে। এ ছাড়া অনিয়মের কারণে সাবেক সভাপতির সদস্যপদ বাদ দেওয়ায় তাঁর সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে শহরে ভাংচুর ও মারধরের ঘটনা ঘটায়।
গাইবান্ধা শিল্প ও বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি আবুল খায়ের মোরছালিন জানান, সমিতির সভা চলাকালীন সময়ে সাধারণ সদস্যরা মতামত ব্যক্ত করতে চাইলে বর্তমান সভাপতি বাঁধা দেন। তাঁর এই ভূমিকা নিয়ে সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এদিকে পরিবহন মালিককে মারধরের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গাইবান্ধা বাসটার্মিনাল এলাকায় পলাশবাড়ী সড়কের উপর বাস-ট্রাক রেখে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। অবশ্য শহীদ বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবসের কারণে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সড়কের ওপর বাস-ট্রাক সরানো হয়। পাশাপাশি একই কারণে গতকাল দুপুর একটায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট স্থগিত করা হয়।
পরিবহন ধর্মঘটের কারণে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত দুরপাল্লার যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হন। গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।