খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬:
ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়ের ৪৫ বছর পূর্ণ হল আজ। কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান সেই অকুতোভয় বীরদের, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এসেছে এ বিজয়, বিশ্বের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ সারা দেশে স্মৃতির মিনারগুলো আজ ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। জাতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় গাইছে মুক্তির জয়গান। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বাণী দিয়েছেন। পৃথক বাণীতে তারা স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বলে আখ্যায়িত করেছেন। ১৬ ডিসেম্বর প্রথম প্রহর থেকেই শুরু হয় দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জনকারী মুক্তিযোদ্ধা আর সব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। রাতের শীত আর কুয়াশা উপেক্ষা করে লাখো বাঙালি সুশৃংখলভাবে তাদের প্রাণের অর্ঘ্য নিবেদন করেন জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ শহীদ বেদিগুলোতে। ভোর থেকে মিছিলের স্রোত গিয়ে মিলে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে।
জাতি আজ শ্রদ্ধাবনত হৃদয়ে স্মরণ করেছে স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নায়ক বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরে তার প্রতিকৃতির সামনে দাঁড়িয়ে নতুন করে শপথ নেন নতুন প্রজন্মের মানুষ। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তার মাজারেও শ্রদ্ধা জানান লাখো মানুষ। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করা হয় মহান মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বন্ধু রাষ্ট্র ভারতকে। দেশটি ওই সময় এক কোটি মানুষকে আশ্রয়, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং আর সাহস জুগিয়েছিল। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ (রাশিয়া) অন্য বন্ধু রাষ্ট্র ও ব্যক্তির অবদানের কথা স্মরণ করা হয় নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
একে একে ছয় শীর্ষ ঘাতকের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় ৪৫তম বার্ষিকীতে বিজয় দিবস ভিন্ন মাত্রায় উদযাপিত হচ্ছে। নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা ও চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দুর্র্ধষ ঘাতক, মিরপুরের কসাই নামে পরিচত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা, যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মতিউর রহমান নিজামী ও মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। ঘাতক এটিএম আজহার, মাওলানা আবদুস সোবহানের ফাঁসি কার্যকরের অপেক্ষায় রয়েছে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সাধারণ ছুটির দিন। ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উড়ছে। ঘরে ঘরে উড়ছে লাল-সবুজ পতাকা। সূর্যোদয়ের সময় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে স্বাধীনতার শহীদদের অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় নেতারা। স্মৃতিসৌধে নামবে স্বাধীনতা প্রিয় জনতার ঢল। বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে যুগান্তরসহ জাতীয় সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। বাংলাদেশ বেতার, বিটিভি, বেসরকারি রেডিও এবং টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সব কিছুর মধ্য দিয়ে জাতি আজ আবারও শপথ নেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকরের পাশাপাশি স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য।
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, বিজয় র্যালি, আলোচনা সভা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী ও শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতাসহ নানা আয়োজন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রথম দিন সূর্যোদয়ের ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। বিকাল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তনে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শুরু হবে বিজয় র্যালি যা ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে শেষ হবে। পরের দিন শনিবার বিকাল ৩টায় রয়েছে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার সন্ধ্যা ৬টায় ধানমণ্ডির রবীন্দ্রসরোবরে রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে দেশের বরেণ্য শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করবেন।
বিএনপির কর্মসূচি : সকাল ৮টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এরপর সেখান থেকে ফিরে এসে শেরেবাংলা নগরে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন তিনি। এর আগে ভোরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বিজয় দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিএনপির আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচি : জাতীয় পার্টি, সিপিবি, গণফোরাম, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধ ‘৭১, আইডিইবি, মহিলা পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নজরুল ইন্সটিটিউট, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ও পুনর্বাসন সোসাইটি, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, সার্চ স্কেটিং ক্লাব, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রভৃতি সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
নৌ বাহিনীর জাহাজ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে নৌ বাহিনীর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও চাঁদপুরের নির্ধারিত জাহাজগুলো সর্বসাধারণের জন্য আজ দুপুর ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে।