Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬:17বিদ্যুত, গ্যাস , পানি, রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ নানা সমস্যার কারনে ২৯ বছরেও পূর্ণতা পায়নি ফেনীর ছাগলনাইয়ার নিজকুঞ্জরা শিল্পনগরী। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কের সমিতি বাজার এলাকায় গড়ে ওঠায় এ শিল্পনগরী থেকে সরকারের অবহেলার কারনে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন শিল্প উদ্যোক্তরা। লোকসানের মুখে পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে কয়েক শিল্পকারখানা। প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধার অভাবে অনেকে শিল্প ইউনিট বরাদ্দ নিয়েও চালু করতে পারেননি।
এদিকে বিসিক এলাকায় সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পরিবেশ দুষিত হয়ে পড়েছে। সড়কগুলো খানাখন্দে ভরা। সীমানা প্রাচীর না থাকায় রাতে বসে মাদক সেবীদের হাট। যে সকল প্রতিষ্ঠান কোনোভাবে চালু রয়েছে তাও বিসিক কর্তৃপক্ষের উদাসিনতার কারনে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
নিজকুঞ্জরা বিসিক শিল্পনগরী এলাকা সম্প্রতি পরিদর্শন করে জানা যায়, ১৯৮৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘেষা ছাগলনাইয়ার নিজকুঞ্জরা গ্রামে ১৭ একর জায়গার উপর গড়ে তোলা হয় বিসিক শিল্পনগরী। এ জায়গার উপর তৈরি করা হয় ৪৪টি শিল্প ইউনিট । মাত্র ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকায় ১ একর জায়গাা উদ্যোক্তাদের মাঝে ইজারা দেয়া হয়। বর্তমানে যার ইজারা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে একর প্রতি ১ কোটি ১১ লাখ টাকা। মাঝারি শিল্প ও ক্ষদ্র শিল্প উদ্যোক্তাদের মাঝে ৯৯ বছরের জন্য ইউনিট ইজারা দেয়া হয়। কিন্তু গ্যাসের অভাবে এখন পর্যন্ত ১৮টি শিল্প ইউনিটে কোন কারখানা চালু করা যায়নি। গ্যাস সংযোগ হবে হচ্ছে বলে বছরের পর ঘুরেও তা হয়ে ওঠেনি। এতে লাখ লাখ টাকা লোকসানের মুখে পড়েছে উদ্যোক্তরা। উপায় না দেখে অনেকে ব্যবসার ধরন পাল্টানোরও উদ্যোগ নিচ্ছে।
শিল্প উদ্যোক্তা মেসার্স আলীম এন্টারপ্রাইজের মালিক মোঃ সিরাজ উদ্দিন জানান, হোমিও ওষুধের বোতল ও মারবেল তৈরির জন্য তিনি শিল্প ইউনিট বরাদ্দ নেন। কারখানায় গ্যাস সংযোগের জন্য ২০০৯ সালের ১২ আগস্ট ৮ লাখ ৮৮ হাজার ১০৫ টাকার জামানত প্রদান করেন।

তার কারখানায় রাইজারও ওঠানো হয়। অথচ এখন পর্যন্ত তার কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়নি। এতে তিনি আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।
বিসিক অফিস জানায়, কারখানা র্পুনাঙ্গভাবে চালুর আগেই ব্যাংক লোনের যাতাকলে পড়ে দেউলিয়া হয়ে যায় ইশরা পেপার এন্ড বোর্ড। এ কারখানা নিয়ে এখনো আদালতে মামলা চলছে।
জমজম সুইটস এন্ড বেকস লিমিটেডের ম্যানেজার আনোয়ার মির্জা জানান, দিনে রাতে থাকে লোডশেডিং। কারখানায় পর্যাপ্ত উৎপাদন করা যাচ্ছেনা। তাছাড়া নিরাপত্তার অভাবও রয়েছে। সন্ধ্যার পর ঘুটঘুটে অন্ধকার। রাতে অপরিচিত লোকের আনাগোনা বেড়ে যায়। মাদকসেবীরাও আড্ডা জমায়। বিসিকের নিজস্ব কোন লাইটিং নেই। পানি নিষ্কাসনের ব্যবস্থাও সুষ্ঠু নেই। প্রভাবশালীরা ড্রেনের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে উপচে পড়া ড্রেনের র্দুগন্ধময় পানিতে উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। তাছাড়া নিরাপদ পানির ব্যবস্থাও নেই। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের কথা থাকলেও বিসিক তা করেনি।
নিটল টাটা মটরসের প্রকৌশলী সোহেল চাকমা বলেন, আমাদের পাশের জুতার কারখানার বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া বর্জ্যের র্দুগন্ধের কারনে পরিবেশ মারাত্মক দুষণ হচ্ছে।
নিফাজ ফুডসের নির্বাহী পরিচালক ফখরুল জানান, ফোরলেনের কারনে বিসিকের দুটি সড়কের মধ্যে একটি বন্ধ হয়েগেছে। বাকি সড়কটি ভাঙাচোরা। এ অ্যাপ্রোচ সড়কটি ফোরলেন কর্তৃপক্ষ মেরামতের কথা থাকলেও তারা তা করেননি। ফলে বিসিকের ভেতর ভারী কোন যানবাহন ঢুকতে পারেনা। গ্যাস না থাকায় জালানি খরচেও তারাও ব্যবসায় লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে তিনি জানান।
শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল বারী মহসীন বলেন, শুধু মাত্র বিদ্যুত ও গ্যাসের কারনে শিল্প কারাখানাগুলো চালু করতে পারছেনা মালিকরা। বিদ্যুত ও গ্যাসের জন্য যদি ৪০/৫০ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয় তাহলে কিভাবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তরা শিল্প গড়ে তুলবে। আমরা যারা বিসিকে প্রথম থেকে আছি তারা না পারছি থাকতে , না পারছি চলে যেতে। ৪৪ টি কারখানার মধ্যে মাত্র ৭টিতে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। বাকি কারখানাগুলোতে আদৌ গ্যাস সংযোগ দিবে কিনা বলতে পারছিনা। আমরা বিষয়টি ফেনী জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি।
শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি হুমায়ুন জানান, প্রতি বছর সরকার নির্ধারিত সার্জ পরিশোধ করার পরও বিসিক কর্তৃপক্ষ তাদের দিকে কোন নজর নেই।
নিজকুঞ্জরা বিসিকের শিল্পনগরী কর্মকর্তা মাহমুদুল হক জানাান, যারা শিল্প কারখানা চালু করেনি তাদেরকে আগামি ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে কারখানাা চালু করতে বলা হয়েছে। এনিয়ে গত ২০ তারিখ জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে চালু না হলে পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে। গ্যাসের বিকল্প ব্যবস্থা নিতেও তাদের বলা হয়েছে। আমাদের হেড অফিস থেকে এমন নির্দেশনা এসেছে। আমরা ব্যবসায়ীদের খাত পরিবর্তন করতেও বলেছি। তবে গ্যাাস সংযোগ না থাকায় শিল্প উদ্যোক্তাদের ইতিমধ্যে কোটি কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। তিনি জানান, আমরা ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য প্রাক্কলন পাঠিয়েছি। এছাড়া সড়ক মেরামত এবং বিকল্প সড়ক বের করার বিষয় ডিসি স্যার বিসিকে পরিদর্শনে যাবেন।
ফেনী বাখরাবাদ গ্যাসের ম্যানেজার আবু তাহের সিকদার বলেন, জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের চাপ কম। শিল্প কারখানায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ রেখেছে সরকার। মন্ত্রনালয়ের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে গ্যাস সংযোগ নিতে হবে।
ছাগলনাইয়া পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম মোঃ কামাল পাশা বলেন, দুর্গাপুরের নতুন সাবস্টেশন থেকে সরাসরি বিসিকের জন্য পিডার সংযোগ দেয়া হবে। এছাড়া আগামি দুয়েক বছরের মধ্যে শুধু মাত্র বিসিকের জন্য আলাদা সাবস্টেশন করা হবে। এজন্য আমরা বিসিকের পাশে জমি কেনার প্রক্রিয়া চালাচ্ছি। এতে দূর হবে শিল্পনগরীর বিদ্যুত সমস্যা।
এসব প্রসঙ্গে ফেনী জেলা প্রশাসক আমিন উল আহসান বলেন, আমি ওদের নিয়ে ( শিল্প মালিক সমিতি) বসেছিলাম। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। সহসা আমি বিসিকে পরিদর্শনে যাব।