Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬: 47
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিয়ে সারা দেশে উদযাপিত হচ্ছে ৪৬তম বিজয় দিবস।

শুক্রবার সকাল থেকেই হাতে লাল সবুজের পতাকা আর রঙ-বেরঙের ফুল নিয়ে দূর-দুরান্ত থেকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসেন লাখো জনতা। ছেলে-বুড়ো সব বয়সের মানুষ তাদের হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়ে স্মরণ করেন স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ সূর্য সন্তানদের। এ সময় তারা সন্ত্রাস জঙ্গিবাদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার শপথ নেন।
সকাল সাড়ে ৬ টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সালাম জানায়; বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কিছু সময় নিরবে দাঁড়িয়ে একাত্তরের সেই শহীদদের স্মরণ করেন।
এরপর জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে পরে আবারও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা।
এরপর জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পরে জনসাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুর কাদের বলেন, ‘সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে হবে। দেশকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সবাইকে এক মঞ্চে আসতে হবে।’
এদিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের (ইনু) সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘জঙ্গিবাদের জঞ্জাল, সামরিক স্বৈরশাসকের জঞ্জাল ও যুদ্ধাপরাধের জঞ্জাল সরিয়েছি। এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের দিকে এগোচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বাকি জঞ্জালও সরানো হবে।’
এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘মহাজোট সরকার যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।’
অন্যদিকে সকাল ১১ টায় দলের জ্যৈষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এসময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, আমীর খসরু, আমান উল্লাহ আমান, শিমুল বিশ্বাস, সেলিনা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুক, আবদুল কাইয়ুম, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, শ্যামা ওবায়েদ, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবুসহ দলের সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমান শাসন ব্যবস্থায় মানুষ তার অধিকার হারিয়েছে। এখন এমন একটি অবস্থা তৈরি হয়েছে মানুষ নিজের ভোট দিতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্বেও বিরোধী দলীয় মত পোষণ কারীদের রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে ডাকা হয় না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল স্বাধীনতার সুফল সবার কাছে পৌঁছানো এবং সোনার বাংলাদেশ গড়া। এখন সময় এসেছে দেশের ১৬ কোটি মানুষের কাছে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছানোর। নবীন প্রজন্মের কাছে মুক্তযুদ্ধ এবং একাত্তরের তাৎপর্য তুলে ধরা গণমাধ্যমের কাজ। তারাই আগামীর বাংলাদেশের হাল ধরবে।’
সময় বাড়ার সাথে সাথে জাতীয় স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে। একে একে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বীর শহীদদের স্মরণে শহীদ বেদিতে পুস্পার্ঘ অর্পণ করেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলানগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-শিক্ষার্থী, সরকারি কর্ম কমিশন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, একাত্তরে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেডিসি), সোনালী ব্যাংক, সচেতন নাগরিক কমিটি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বাংলাদেশ পশু সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিএলআরআই), বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি), বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা চিকিৎসক পরিষদ, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট, শেখ হাসিনা জাতীয় যুব কেন্দ্র, গণবিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব), বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, নজরুল ইন্সটিটিউট, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গামের্ন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন, জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল (জাসদ), শ্রমিক কর্মচারী ঐক্যপরিষদ (স্কপ), কর্মজীবী নারী, বাংলাদেশ গামের্ন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিট, এ্যাডাব, জাতীয় পার্টি কাজী জাফর, এনজিও সমন্বয় পরিষদ সাভার, বাংলাদেশ নারী মুক্তি সংসদ, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ৭১, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার সাভার, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা, গণমুক্তি ইউনিয়ন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বাংলা একাডেমি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি, ঢাকা জেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, সচেতন নাগরিক কমিটি, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষাবোর্ড কর্মচারী ইউনিয়ন, নিরাপদ সড়ক চাই, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, গণফোরাম, খেলাঘর আসর, সাভার প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদি দল, হিউম্যান রাইটস অব বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পরমানু শক্তি কমিশন, নতুন ধারা বাংলাদেশ এনডিবি, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট।
এদিকে বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে চট্টগ্রাম শহীদ মিনারে তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
সিলেটে শহীদ মিনারে ঢল নামে লাখো মানুষের। ৪৬তম বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তারা।
এছাড়া পাবনা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ফেনী, রংপুর, বগুড়া, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্মৃতি সৌধে শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ।
নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এ দিনটিতে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছিল। দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে এদিনটিতেই স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যালোকে উদ্ভাসিত হয়েছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। সরকারি-বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারিত হচ্ছে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ অন্যান্য উপাসনালয়ে দেশ-জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত এবং প্রার্থনা করা হয়। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে।