Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

16kখোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬: সম্প্রতি এক তরুণ বাবা বড়াই করে বলছিলেন, তার ১৬ মাসের ছোট্ট শিশুটি ট্যাবলেট এবং স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারে। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, শিশুটি কোনো রঙ্গীন খড়ি বা পেন্সিল হাতে নিতে পারে কিনা।
তখন ওই বাবা বলেন, তার বাচ্চা পেন্সিল হাতে নেওয়ার মতো যথেষ্ট বড় হয়নি। স্কুলে যাওয়া শুরু করলে পেন্সিল হাতে নেবে।
কিন্তু এই বোকা বাবা জানেন না তার বাচ্চাটি ডিজিটাল গ্যাজেট হাতে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট বড় হয়নি। ১৮ মাসের কম বয়সী বাচ্চাদের স্ক্রিন মিডিয়া ব্যবহার করা উচিৎ না। শুধুমাত্র ভিডিও চ্যাটিংয়ে অংশগ্রহণ ছাড়া। এমনটাই পরামর্শ দিয়েছে শিশুরোগ চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ প্যাডিয়াট্রিকস।
আর দুই বছরের বাচ্চাদের স্ক্রিন ব্যবহার অবশ্যই প্রতিদিন এক বা দুই ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
কারণ স্ক্রিনে বেশি সময় ব্যয় করলে শিশুরা বড় হওয়ার আগেই নানা জটিলতার শিকার হয়। এছাড়া আরো নানা ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। টেক্সট-নেক, শুষ্ক চোখ এবং টেক্সটিং-থাম্ব ইনজুরি এর মধ্যে কয়েকটি। এখানে শিশুর আরো যেসব সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে তার একটি তালিকা দেওয়া হলো:
কল্পনাশক্তি হারানো
গল্প বলা, বই পড়া, কথা বলা, ছবি আঁকা এবং খেলার জায়গায় এখন ট্যাবলেট, ল্যাপটপ এবং ফোনে টেক্সটিং, সার্ফিং, ভিডিও দেখা, গেম খেলা এবং গান শোনায় আসক্ত হয়ে পড়ছে শিশুরা।
স্ক্রিনে বেশি সময় ব্যয় করলে কল্পনা শক্তি এবং সৃজনশীলতা কমে যায়। আর এর ফলে শিশুরা বিনোদনের জন্য বাহ্যিক উদ্দীপক বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয়। কিন্তু নিজে নিজে খেলা করলে শিশুরা নিজেদের কল্পনা শক্তি ব্যবহার করে চারপাশের দুনিয়ার সঙ্গে আরো বেশি সংশ্লিষ্ট হতে পারবে।
দূর্বল সামাজিক দক্ষতা
স্ক্রিনে বেশি সময় ব্যয় করলে সহানুভূতি কমে আসে এবং সহপাঠী বা বন্ধ্বুান্ধবদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ দক্ষতা কমে আসে। যে শিশুরা স্ক্রিনে বেশি সময় ব্যয় করে তাদের বন্ধু সংখ্যা অনেক কম থাকে এবং এদের মনোযোগ সমস্যাও দেখা দেয়।
স্থুলতা
বেশিক্ষণ স্ক্রিনের সামনে বসে থাকলে শিশুরা অল্প বয়সেই স্থুলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। আর এর পাশাপাশি যদি বাজে খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়তা থাকে তাহলে তো কথাই নেই।
যে শিশুরা ঘরের বাইরে কম সময় ব্যয় করে এবং বেশি সময় ঘরে বসে ব্যয় করে তাদের মধ্যে বাজে খাদ্যাভ্যাসের প্রবণতাও বেশি দেখা যায়। যে কিশোর বয়সীরা স্ক্রিন ডিভাইসে প্রতিদিন পাঁচ ঘন্টারও বেশি সময় ব্যয় করে তারা অনেক বেশি পরিমাণে মিষ্টি পানীয় পান করে। এবং যথেষ্ট শারীরিক তৎপরতায় লিপ্ত হয় না। এর ফলে যারা স্ক্রিনে কম সময় ব্যয় করে তাদের তুলনায় এদের স্থুলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় ৪৩%।
নিদ্রাহীনতা
স্ক্রিনের আলো দেহের ঘুম-জাগা চক্র নষ্ট করে। কম ঘুমানো এবং রাতে ঘুমের মধ্যে বেশ কয়েকবার জেগে ওঠার ফলে শিশুরা বিরক্তিকর হয়ে ওঠে এবং পরেরদিন শক্তিহীন হয়ে পড়ে। এছাড়া ঘুম কম হলে ওজনও বাড়ে।
দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ
শিশুকালে যথেষ্ট প্রাকৃতিক আলো না পেলে দৃষ্টিশক্তি কমে আসে। অন্ধকার ঘরে দীর্ঘসময় ধরে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখে ব্যাথা হয়। এবং চোখের পলক পড়ার হার কমে আসে। এর ফলে চোখ শুকিয়ে যাওয়া, ধুলো-ময়লা আটকানো এবং ব্যাথা করার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
বিদ্যালয়ের রেজাল্ট খারাপ করা
অনলাইন শেখার মডিউল ব্যবহার করার ফলে পরীক্ষায় কম স্কোর আসে। এমনকি সবচেয়ে বুদ্ধিমান এবং অনুপ্রাণিত শিক্ষার্থীরাও কম স্কোর করে। জার্নাল সাইকোলজিক্যাল সায়েন্সের এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়। বিদ্যালয়ের পড়া তৈরি করার পাশাপাশি সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহার, ইমেইল পড়া এবং অন্যান্য অনলাইন তৎপরতায় লিপ্ত হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের ফলাফল খারাপ হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে নোট করা হাতে লিখে নোট করার চেয়ে কম সহায়ক।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস