Thu. Jun 19th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, বুধবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬:29 ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের গঙ্গানন্দপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত হোসেন শরীফ মরার আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেখে যেতে চান। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে ছিলেন তিনি। দেশকে ভালবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য দারে দারে ঘুরছেন তিনি। বর্তমানে তিনি অসুস্থ অবস্থায় মানবেতার জীবনযাপন করছেন। মুক্তিযুদ্ধা হিসেবে ইউনিয়ন ও উপজেলা তালিকায় তার নাম থাকলেও মূল তালিকায় তার নাম অন্তর্ভূক্ত না হওয়ায় চরম হতাশায় ভারাক্রান্ত এই বীর সেনানী। যুদ্ধ শেষে তৎকালীন মুজিব বাহিনীর কমান্ডার শাহ মো. আবু জাফরের নিকট অস্ত্র জমা দেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ১৯৭৬ সালে যোগদান করেন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) এ। ২০০৪ সালে চাকরী থেকে অবসরে যান তিনি।
হেমায়েত হোসেন শরীফের নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভূক্ত করার জন্য ২০০৪ সালের ২৪ জুলাই উপজেলা যাচাই বাছাই কমিটি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে নাম প্রেরণ করেন যার স্মারক নং উনিঅবো/বিবিধ/০৪-৬৮৩। প্রেরিত ওই তালিকায় ৪ নম্বরে তার নাম ছিল কিন্তু রহস্যজনক কারণে তার নাম বাদ পড়ে যায়। এ ঘটনায় হতাশায় মুষড়ে পড়লেও তিনি দমে যাননি। তার নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্তির জন্য নানা মহলে ধরনা দিতে শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় পুনরায় ২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তালিকায় অন্তর্ভূক্তির জন্য আবেদন করেন হেমায়েত শরীফ। এ জন্য সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নওয়াব উদ্দিন টোকন মিয়া হেমায়েত শরীফকে একাধিকবার সনদপত্র দিয়েছেন।
স্বীকৃতি চাওয়া মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত শরীফ আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, অনেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়েও মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছে। সে জন্যই তার যন্ত্রনাটা অনেক বেশি। ১৬/১৭ বছরের টগবগে তরুন হেমায়েত শরীফ তখন হাটে হাটে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর এলাকার যুবক ছেলেদের নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। মুজিব বাহিনীর প্রধান শাহ মো. আবু জাফরের নির্দেশে দেশের ভিতরে প্রশিক্ষন নিয়ে তিনি দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার জন্য ঝাপিয়ে পড়েন। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া ও আলফাডাঙ্গার শিরগ্রাম যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন বলে জানান হেমায়েত শরীফ। যুদ্ধ শেষে শাহ জাফরের নিকট অস্ত্র জমা দেন। তার নিকট জেনারেল ওসমানির সনদ ছিল কিন্তু সেটি হারিয়ে ফেলেছেন বলে জানান তিনি। হেমায়েত হোসেন শরীফ বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ কামনা করে বলেন, মরার আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলে অত্যন্ত শান্তিতে মরতে পারতাম।
সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নওয়াব উদ্দিন টোকন মিয়া বলেন, হেমায়েত শরীফের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভূক্ত না হওয়াটা দুঃখজনক। সে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। সে রনাঙ্গনে মুজিব বাহিনীর একজন সক্রিয় যোদ্ধা ছিল। হেমায়েত শরীফের নাম মুক্তিযোদ্ধাতের তালিকায় অন্তর্ভূক্তির দাবি জানান তিনি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অধ্যাপক আব্দুর রশিদ বলেন, ২০০৪ সালের জুনে পাঠানো ওই তালিকা বাদ হয়ে যায়। আবেদন করে থাকলে সেই অনুযায়ী যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে হেমায়েত শরীফ মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হতে পারবেন।