Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
15645229_1358999044173782_1332905549_nখোলা বাজার২৪, বুধবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬: ২০১৬ সালে মরণোত্তর সম্মাননা পাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম সামছুল আলম তালুকদার আমার বাবা সেরাদের সেরা ফারজানা আক্তার নিপা মহান বিজয় দিবসে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান তার প্রিয় বাবাকে স্মরণ করতে গিয়ে বলেন, আমার বাবা সেরাদের সেরা। তিনি সবচেয়ে প্রিয় বাবা ছিলেন। আমি গর্বিত, আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তাঁর কোন মোহ ছিল না। সাধারণ মানুষের পাশে থাকতেই তিনি বেশি পছন্দ করতেন। আজীবন সংগ্রামী মানুষটি মৃত্যুর শেষ মুহূর্তে তাঁর প্রিয় দল বিএনপি ছেড়ে অভিমান করে ২০ দলীয় জোটের জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর আহমেদ)-এর দলে যোগ দিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। আমি শিশুকাল থেকেই বাবার কাছ থেকে রাজনীতির হাতেখড়ি নিয়েছি। তিনি আমাকে শিখিয়েছিলেন কীভাবে মানুষের পাশে থেকে রাজনীতি করতে হয়। পেশায় আমি একজন আইনজীবী হয়ে আমার বাবার আদর্শকে মনেপ্রাণে লালন করে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ১৯ দফা কর্মসূচিকে লালন করে কাজ করে যাচ্ছি। কী পাব আর কী পাব না, এই আশা নিয়ে রাজনীতি করছি না। রাজনীতি একটি বড় ম্যারাথন। এখানে টিকে থাকতে হবে। অল্পতে হতাশ হলে রাজনীতিতে ছিটকে পড়ে যেতে হয়, যা আমার বাবার জীবন থেকেই শিখেছি। ভবিষ্যতে নারীদের উন্নয়নে এবং ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে কাজ করতে আমার আগ্রহ রয়েছে। বাবার আদর্শকে সামনে নিয়েই অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই। বিজয়ের এই মাসে বাবার সাথে অন্য যারা বীর মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছিলেন, আজ তাঁদেরকেও গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। বাবার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য “বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুল আলম তালুকদার স্মৃতি সংসদ” কমিটি গঠন করার মধ্য দিয়ে কাজ করতে চাই। যারা তাঁকে ভালোবাসেন তাদেরকে অবশ্যই আমার পাশে পাব বলে আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে কাঁদিয়ে গত ৩১ মে ২০১৪ শনিবার ভোর রাতে বাগেরহাটের বরেণ্য রাজনীতিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুল আলম তালুকদার চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। ঢাকার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি স্ত্রী, ৫ ছেলে ও ৩ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুল আলম তালুকদার মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সুন্দরবন অঞ্চলের সাব-সেক্টরের কমান্ডার দায়িত্ব পালন করেন। তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে শুরু হয় তার রাজনৈতিক জীবন। তিনি বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের জিএস, মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর স্নেহধন্য এই নেতা ভাসানী ন্যাপের বৃহত্তর খুলনা জেলার সাধারন সম্পাদক, বাগেরহাট বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়ামের সদস্য ছিলেন। বাগেরহাটের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও সামাজিক আন্দোলনে অসাম্প্রদায়িক এ নেতা জেলার মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলায় অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এই নেতা। মরহুমের পারিপারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৮ মে অসুস্থ হয়ে পড়লে সামছুলকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া করা হয়। শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। সকালে স্বজনরা ঢাকা থেকে তার মরদেহ নিয়ে বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। শনিবার দুপুরে মরহুম এই নেতার প্রথম নামাজে জানাযা বাগেরহাট শহরের মুনগঞ্জ বটতলা মাঠে, দ্বিতীয় নামাজে জানাযা বাগেরহাট কলেজিয়েট স্কুল মাঠে, বিকেলে মোড়েলগঞ্জে উপজেলার সন্নাসী বাজারে ও সন্ধ্যায় শরনখোলা সদরের রায়েন্দায় নামাজের জানাযা শেষে তার প্রতিষ্ঠিত শরনখোলা ডিগ্রী কলেজের মসজিদ প্রাঙ্গনে দাফন করা হয়। সামছুল আলম পিরোজপুরের ভা-ারিয়া উপজেলার ইকরি গ্রামের প্রয়াত মনুচেহের তালুকদারের ছেলে। ষাটের দশকে তিনি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের পশ্চিম খোন্তাকাটা গ্রামে জমি কিনে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন। ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এই মুক্তিযোদ্ধা বাগেরহাট পিসি কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলায় অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এই নেতা। বাগেরহাটের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও সামাজিক আন্দোলনে অসাম্প্রদায়িক এ নেতা ছিলেন অগ্রণী ভুমিকায়। ১৯৬৪ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন খুলনা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হন এবং পরের বছর সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৬৭ সালে এই সাক্ষী ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন ও এক বছর পরে সহসভাপতি হন। ১৯৬৯ সালে তালুকদার মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগ দেন এবং ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে অংশ নেন। ১৯৭৮ সালে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। ২০০৮ সালে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি নেন। মৃত্যুর শেষ মুহূর্তে অভিমান করে তিনি কাজী জাফরের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। তাঁর মৃত্যুতে জাতীয় পাটি (কাজী জাফর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা: টিআই ফজলে রাব্বি, মহাসচিব মোস্তাফা জামাল হায়দার, মুক্তিযুদ্ধকালীন সুন্দরবন অঞ্চলের সাব সেক্টর কমান্ডার মেজার (অব:) জিয়াউদ্দিন, এনডিপি’র চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর শওকাত আলী বাদশা, জেলা বিএনপি’র সভাপতি এমএ সালাম, সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা বাবু প্রমুখ নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। যারা মৃত্যুর পর আমার বাবার পাশে বিভিন্নভাবে শোকবাণী ও নামাযে জানাযায় উপস্থিত হয়েছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। নতুন প্রজন্মকে আবেগে না চলে সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। যারা বিভিন্নভাবে ইতিহাস বিকৃত করছে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সন্তানদের ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করতে হবে। নইলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট হবে। সবাই মিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই বিভ্রান্তি ও পথভ্রষ্টতা থেকে দূরে থেকে সঠিক ইতিহাস জেনে দেশের উন্নয়নের কাজ করতে আগুয়ান হয় প্রত্যাশা। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ৭১ মিডিয়া ভিশন ও শেরে বাংলা গবেষণা পরিষদ-এর নেতৃবৃন্দকে। তারা আমার বাবাকে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য আগামী ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ইং তারিখে সুপ্রীম কোর্ট মিলনায়তনে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করছেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক প্রধান বিচারপতি তাফাজ্জল ইসলাম, সভাপতিত্ব করবেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের দৌহিত্র এবং সাবেক সচিব সৈয়দ মারগুব মোর্শেদ।