খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬:
আত্মীয়ের বিয়েতে কী দেবেন ভাবছেন ? মোবাইল, ল্যাপটপ না শাড়ি, গয়না ? উপহার পেলে সবাই খুশি হয়। তবে ছত্তিসগড়ের যোগীনগরের কেউ যদি আপনার পরিচিত হয় তাঁকে ভুলেও নেমতন্ন করবেন না! তিনি বিয়েতে এলেই সবাই আঁতকে উঠবে। কারণ ২১টি জ্যান্ত সাপ নিয়ে আসবেন আপনার সেই বন্ধু! সৌজন্য রক্ষার খাতিরে উপহার নিতেই হবে। এটাই দস্তুর ছত্তিসগড়ের মহাসমুন্দ জেলার যোগীনগরের বাসিন্দাদের। তাঁরা বিয়েতে সাপ উপহার দেন। স্থানীয় নিয়মানুসারে সেই ২১টি সাপকে পুরো দু মাস খাইয়ে দাইয়ে তোয়াজ করতে হবে। বুঝুন কাণ্ড! ঘরের মধ্যে একটা বা দুটো হাঁড়িতে ২১টি সাপ অনবরত কিলবিল করছে। মাঝে মধ্যেই ফোঁসফোঁস করে চলেছে। এরকম চলবে পুরো দুটো মাস। তারপর সেই সাপগুলোকে আবার জঙ্গলে ছেড়ে দিতে হবে।
এক অদ্ভুত নিয়ম এই যোগীনগরের। এখানে সাপ সন্তানের মতো পালিত হয় প্রতি বাড়িতে। কেউ যদি সাপ মেরে ফেলেন তাহলে তাঁকে বিশাল অনুষ্ঠান করে শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান করতে হবে। সঙ্গে অনেক খাওয়া দাওয়া।
যোগীনগর এলাকাটি সাপুড়েদের জন্য প্রসিদ্ধ। এখানকার বাসিন্দাদের মূল পেশা সাপ ধরা। আর সাপের খেলা দেখানো। ছোট-বড় সবাই মনের আনন্দে গোখরো, কেউটে, চন্দ্রবোড়া, শাঁখামুটিসহ বিভিন্ন ধরণের সাপ ধরতে ওস্তাদ। যোগীনগরের প্রচলিত রীতি জঙ্গল থেকে সাপ ধরে মাস দুয়েক পর আবার সাপকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া। আবার বিভিন্ন ওষধি গাছের পাতা দিয়ে চিকিৎসা করেন তাঁরা। ছত্তিসগড় বনবিভাগ লাগাতার প্রচার চালিয়েছে-সাপ ধরা নিষেধ। । যোগীনগরের বাসিন্দারা তা মানেননি। তাদের দাবি প্রচুর সাপ ধরলেও তাদের কোনোরকম ক্ষতি করা হয়না। সাপ ধরা তাদের সামাজিক রীতি। সেই রীতি অনুসারে যোগীনগরে কোনও বিয়ে অনুষ্ঠিত হলে কন্যাপণ হিসেবে অন্যান্য উপহারের পাশাপাশি ২১টি সাপ দেওয়া হয়। সাপ না দিলে বিয়েই হবে না। সাপের সংখ্যা কম পড়লে অন্যদের কাছে সাপ ধার করা হয়।
যোগীনগরের আর্থিক অবস্থা খারাপ। অভিযোগ, সরকারী প্রকল্পের অধীনে কোনও কাজ মেলেনা। এলাকায় পৌঁছায়নি বিদ্যুতের লাইন। রোজগারের জন্য তাই সাপ ধরাকেই মূল পেশা হিসেবে রেখে দিয়েছেন যোগীনগরবাসী।