খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় প্রার্থীদের নেয়াসহ বিভিন্ন শর্ত শিথিলের দাবিতে ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
শুক্রবার সকাল থেকে এ বিক্ষোভ হচ্ছে। এতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এদিন সকাল ৮টায় ক্যাটালগার পদে নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যে ছাত্রলীগের নব-মনোনীত সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা চতুর্থ বিজ্ঞান ভবনে গিয়ে পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ৮টায় প্রথম শিফটের পরীক্ষা শুরুর আগে থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা প্রধান ফটক ও কাজলা ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ফটক দু’টির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।
নেতাকর্মীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা নিয়োগ প্রার্থীদের সঙ্গে থাকা প্রবেশপত্র কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় বেশ কয়েকজন প্রার্থীকে ধাওয়া দিতেও দেখা যায়।
পরে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, উপপ্রচার সম্পাদক মীর ইসতিয়াক লিমন, মতিহার থানার সাধারণ সম্পাদক মো. আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে স্থানীয় ৩০-৩৫ জন নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে মহড়া দিতে থাকে। এতে গোটা ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে সকাল ১০টায় দ্বিতীয় শিফটে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ঘোষণা ছাড়াই তা বন্ধ হয়ে যায়। ক্ষমতাসীন দলীয় নেতাকর্মীদের বাধায় প্রার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না পারায় পরীক্ষা বন্ধ করা হয়েছে বলছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আজ বিকাল ৩টায় তৃতীয় শিফটে গ্রন্থাগার সহকারী পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।
দুপুর ১২টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিক্ষোভকারী ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন।
সেখানে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজিবের সঞ্চালনায় রাজশাহী মহানগর, মতিহার থানা ও বিভিন্ন ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা অভিযোগ করেন, বর্তমান প্রশাসন দলীয় লোকদের মূল্যায়ন করছেন না। যোগ্যতার ধোঁয়া তুলে জামায়াত-শিবির দ্বারা নির্যাতিত নেতাকর্মীদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করার ফন্দি আঁটছেন।
রাবির ভিসি অধ্যাপক মিজানুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে বলে আজ আপনি ভিসি হয়েছেন। যে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে আপনি ভিসি হয়েছেন, সেই রাষ্ট্রপতি মহোদয়ও আমাদের দলীয় লোক। তাই টালবাহানা না করে দ্রুত অযৌক্তিক শর্ত শিথিল করে দলের ত্যাগী ও নির্যাতিতদের চাকরির সুযোগ করে দেন।
এদিকে পরীক্ষার আগের দিন রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান ও আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক খাদেমুল ইসলাম মোল্ল্যার বাড়িতে গিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা আজকের পরীক্ষা বন্ধের হুমকি দিয়ে আসেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক সারওয়ার জাহান বলেন, আমরা পূর্বনির্ধারিত সময়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, বহিরাগতরা এসে বিশৃংখলা করে পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে। আপাতত এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ক্যাটালগার, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও গ্রন্থাগার সহকারী পদে ২৭ জনকে নিয়োগের জন্য সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর নির্ধারণ করা হয় এবং অভিজ্ঞতাসহ বেশ কিছু শর্ত দেয়া হয়।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বয়সসীমাসহ এসব শর্ত তুলে দিয়ে আগের নিয়মে নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছেন। গত ২১ ডিসেম্বর একই দাবি জানিয়ে তারা রাবি স্কুলের নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়। আগামী এক মাসের মধ্যে আরও বেশ কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে আগামী ২২ মার্চ। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী চাইছেন, বর্তমান প্রশাসনের আমলে যাতে কোনো নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হয়। তাদের আশংকা- এই প্রশাসন দলীয় পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেবে না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্বে সৃষ্টি হয়েছে।