Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬: 54 চারদিকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। এক দল উড়ে যাচ্ছে নীল দিগন্তে, আরেক দল ডানা ঝাঁপটাচ্ছে মেঘনার বুক চিড়ে জেগে উঠা চরে। আবার এক দল ভাটার সময় সাগরের নীল অলস জলে ভাসছে। চোখ ধাঁধানো মনোমুগ্ধকর এ দৃশ্য দেখতে এখানে আসছেন অনেক পর্যটক।
সাইবেরিয়াসহ শীতপ্রধান দেশ থেকে আশা লাখ লাখ বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির জন্য এখানে দুঃসংবাদও রয়েছে। পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল চরাঞ্চলে প্রতিদিন বিষটোপ ও জাল দিয়ে শত শত অতিথি পাখি শিকার করছে শিকারিরা।
নির্বিচারে পাখি শিকারের কারণে পাখিদের আগমনও কমে যাচ্ছে। এতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসম্য এবং সৌন্দর্য হারাচ্ছে মনোমুগ্ধকর চরগুলো। অতিথি পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে স্থানীয় বন-বিভাগ ও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় শিকারিরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
প্রতি বছরের মতো এবারও হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে শীতপ্রধান দেশ থেকে আসা লাখ লাখ অতিথি পাখি উপকূলীয় দ্বীপজেলা ভোলার মাঝের চর, চরফ্যাশসনে তারুয়া, কুকরী-মুকরী, গাসার কন্যা, মনপুরার ঢালচর, চর পালিতাসহ অন্তত ২০/৩০টি চরে এসছে সাময়িক একটু উষ্ণতা ও নিরাপদ আবাসের জন্য। বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের কলকাতনে মুখর হয়ে উঠেছে চরাগুলো। অতিথি পাখিগুলো এতো দূর থেকে এসে উষ্ণতা পেলেও পায়নি নিরাপদ আবাসস্থল। শিকারিদের কারণে তাদের নিরাপত্তা নেই।
খাদ্যের সন্ধানে রংবেরংয়ের পাখা মেলে এসব পাখি উড়তে গিয়েই মারা পড়ছে শিকারিদের হাতে। ধানের সঙ্গে বিষাক্ত রাসয়নিক দ্রব্য বিষটোপ ও জাল ফেলে নির্বিচারে চলছে পাখি শিকার।
চর নেয়ামপুরের বাসিন্দারা জানান, এক শ্রেণির লোক চরে ধানের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে বিকালে চরে ফেলে রাখে। সকালে অতিথি পাখি এসে তা খায়। কিছু পাখি মারা যায় আর কিছু অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন শিকারিরা এসে জবাই করে বাজারের ব্যাগে করে বিভিন্ন হোটেল ও বাসা বাড়িতে ফেরি করে বিক্রি করে। এসব পাখি প্রতিটি ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা দরে বিক্রি হয়।
পাখিপ্রেমী জসিম উদ্দিন বলেন, দেশে অন্যন্য অঞ্চলের চেয়ে দেশের ৬০ ভাগ পাখি ভোলার চরাঞ্চলে আসে। অথচ এসব পাখি রক্ষায় সরকারিভাবে কোনো নজরদারি নেই; নেই প্রচার-প্রচারণাও।
তিনি আরো বলেন, পাখি শিকারের বিরুদ্ধে প্রশাসনের দুর্বল অভিযান ও নজরদারি না থাকায় এ বছর পাখির আগমন কমে গেছে। এতে নষ্ট হচ্ছে চরাঞ্চলের সৌন্দর্য। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভোলায় আর কোনো পাখি আসবে না।
বিষটোপ দিয়ে নিধন করা অতিথি পাখি খাওয়ার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিষাক্ত রাসায়ানক দ্রব্য খাইয়ে নিধন করা এসব অতিথি পাখি মানবদেহের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি বার্ড ফ্লুসহ হতে পারে জটিল ও কঠিন রোগ।
এ ব্যাপারে ভোলার সিভিল সার্জন বলেন, বিষটোপ দিয়ে অতিথি পাথি নিধন করে তা যদি খাওয়া হয়, তাহলে বিষক্রিয়া থেকে লিভার এবং কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
এদিকে ভোলা উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, শিকারিদের হাত থেকে পাখি রক্ষায় বনবিভাগ তৎপর রয়েছে। ইতিমধ্যে অতিথি পাখি সংরক্ষণে প্রযোজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সহায়তা চেয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার, কোস্টগার্ডকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বনবিভাগের প্রতিটি রেঞ্জে একটি করে টিম টহল দিচ্ছে।
ভোলা কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের অপারেশন অফিসার জানান, তাদের টহল টিম সব সময় নদীতে থাকে। অতিথি পাখি রক্ষায় তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তারা কোনো অভিযোগ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।