খোলা বাজার২৪, শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬:
রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনায় জঙ্গি আস্তানা বলে যে ভবনে অভিযান চলছে ওই ভবনেরই এক ভাড়াটিয়া বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ বাসার মূল ফটকে এসে বিভিন্ন ফ্ল্যাটে কলবেল বাজায়। মোহাম্মদ জানালা দিয়ে পুলিশকে দেখেন। ভয়ে তিনি কোনো সাড়াশব্দ করেননি।
আনুমানিক দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তাদের ফ্ল্যাটের দরজায় পুনরায় শব্দ হয়। তিনজন পুলিশ সদস্য নিচতলার ফ্ল্যাট সম্পর্কে তাদের কাছে তথ্য জানতে চান। মোহাম্মদ তাদের তিনতলায় বাড়িওয়ালার কাছে যেতে বলেন। এরপর পুলিশ চলে যায়।
সারা রাতে আর কোনো শব্দ শোনেননি মোহাম্মদ। ফজরের আজানের পরে পুলিশ মাইকে নিচতলায় জঙ্গিদের উদ্দেশে বলে, ‘আপনারা বের হয়ে আসেন। আপনাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি করব না। আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। আপনাদের কাছে যে মুঠোফোন পাঠানো হয়েছে, সেটা অন করেন।’
কিছুক্ষণ পরই মাইকে একটি ছেলে কেঁদে কেঁদে আকুতি জানায়, ‘আম্মা, তুমি বের হয়ে আসো। ওরা তোমার কোনো ক্ষতি করবে না। আমরা তোমাকে জীবিত দেখতে চাই।’
সকাল সাড়ে নয়টার পরে জানা যায়, বাড়ি থেকে দুই শিশুকে নিয়ে দুই নারী আত্মসমর্পণ করেছেন। পুলিশ বলছে, তাদের মধ্যে একজন মিরপুরে অভিযানে নিহত জঙ্গি ও সাবেক মেজর জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নেসা শীলা ও তার মেয়ে, আরেকজন পলাতক জঙ্গি মুসার স্ত্রী তৃষ্ণা ও তার মেয়ে।
মোহাম্মদ আলী আরো জানান, এক বছর আগে তিনি ওই বাসার দোতলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। সে সময় বাসাটি দোতলা ছিল। পরে তিনতলা হয়। এরপর বাড়িওয়ালার পরিবার নিচতলা থেকে তিনতলায় উঠে যায়। মাঝে এক পরিবার কিছুদিন নিচতলায় ভাড়া ছিল। পরে তারা চলে যায়। এরপর নিচতলার ফ্ল্যাটে কারা ভাড়া নিয়েছে, তিনি জানেন না। তাদের কখনো দেখা যেত না। এমনকি দরজাও সব সময় বন্ধ থাকত।
মোহাম্মদ আলী বলেন, তিনতলা ভবনটির দোতলা ও তিনতলায় তিনটি করে মোট ছয়টি ফ্ল্যাট রয়েছে। নিচতলায় একটিই ফ্ল্যাট। সেটিই ‘জঙ্গি আস্তানা’ বলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাড়িওয়ালা মধ্যপ্রাচ্যে থাকেন। তার পরিবার তিনতলার একটি ফ্ল্যাটে থাকে।
শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার পরে মোবাইল ফোনে মোহাম্মদ আলী জানান, ওই সময় তিনি ওই ভবনের দুইতলার একটি ফ্ল্যাটে মা আনোয়ারা বেগমকে নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে সময় কাটাচ্ছিলেন।
‘জঙ্গিদের’ কাছে গ্রেনেড আছে বলে গণমাধ্যমের খবরে জেনেছিলেন মোহাম্মদ। আতঙ্কিত কণ্ঠে সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘এখন যদি গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়, আমাদের কী হবে?’ মোহাম্মদ বলেন, ‘বারান্দা থেকে পুলিশকে বলেছি। ওনারা বের করে নিচ্ছে না। পুলিশ বলছে, আপনারা যেখানে আছেন, সেখানেই নিরাপদ।’
দুপুর ১২টার পর মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে ফের জানান, উদ্বেগে একপর্যায়ে করিডরে বের হয়ে আসেন তিনি। পুলিশকে বলেন, ‘আমাদের বাঁচান।’ পুলিশ তার বাসায় তল্লাশি করে জাতীয় পরিচয়পত্র রেখে দেয়। এরপর তাদের বের করে নিয়ে আসে। তিনি পাশেই বোনের বাসায় উঠেছেন।