খোলা বাজার২৪, রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬:
হ্যাগলি ওভাল ক্রিকেট মাঠে নেটে বোলিং করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। সেটাই শ্যেনদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিলেন কোচ কোর্টনি ওয়ালশ।
বাংলাদেশ দল ক্রাইস্টচার্চ এসেছে আগেরদিন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের ভেন্যু হ্যাগলি ওভালে প্রথম অনুশীলন ছিল শনিবার। তবে সবাইকে ছাপিয়ে আগ্রহের কেন্দ্রে ওই একজন, মোস্তাফিজ। বোলিং কোচের পাশাপাশি ফিজিও-ট্রেনার সবাই তাকিয়ে তার বোলিংয়ের দিকে।
যে মাঠে খেলা হবে অর্থাৎ হ্যাগলি ওভালকে পেসারদের পয়মন্ত ভেন্যু বললে অতিশয়োক্তি হবে না। পরিসংখ্যান সেকথাই বলে। কিউই পেসাররা ওই মাঠে ৩৩ উইকেট নিয়েছেন। স্পিনাররা মাত্র চারটি। সুতরাং প্রথম ওডিআইতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নেবেন কিউই পেসাররা। এতে কোনো সন্দেহ নেই। এমন পরিস্থিতিতে মোস্তাফিজের খেলা না খেলা দলের জন্য বিরাট ভাবনার বিষয়।
সবার দৃষ্টি তাই খুঁজছে একটি প্রশ্নের উত্তর, প্রথম ওয়ানডে কি খেলতে পারবেন মোস্তাফিজ? স্বয়ং মোস্তাফিজের কাছ থেকেই শোনা যাক উত্তর! নেটে বোলিং সেরে আসার পর প্রশ্নটি শুনেই হাসলেন রহস্যময় ভঙ্গিতে। উত্তর দেয়ার কোনো আগ্রহ দেখা গেল না। বরং পরিচিত সংবাদকর্মীদের সঙ্গে শুরু করলেন রসিকতা। একজন তার বাঁ-কাঁধে হাত রাখতেই ব্যথা পাওয়ার মুখভঙ্গি করলেন। বেচারার অপ্রস্তুত চেহারা দেখে পর মুহূর্তেই আকর্ণ বিস্তৃত হাসি, ‘ভয় পেয়েছেন? হাত রাখলে সমস্যা নাই, ঘুষি না দিলেই হল!’
এই মুহূর্তে তার কাঁধের অবস্থা নিয়েই কৌতূহল প্রায় সবার মধ্যে। মোস্তাফিজ নিজেই দায়িত্ব নিলেন কৌতূহল মেটানোর। ‘অনেকদিন পর বোলিং করছি, একটু তো অস্বস্তি থাকবেই। এমনিতে সব ভালো যাচ্ছে। অল্প ব্যথা আছে, তবে কাঁধে না, শরীরের পাশে। ফিজিও বলছেন ওটা থাকবেই। আরও বেশকিছু দিন পর আস্তে আস্তে চলে যাবে। কোচ-অধিনায়ক, সবাই যদি চান, তাহলে খেলব প্রথম ম্যাচে।’
এটুকু শুনে আশাবাদী হওয়াই যায়। নিজেই জানালেন, নতুন বলে এখন না করলেও পুরনো বলে কাটার অনুশীলনও করছেন। পাশাপাশি ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি নিয়েও কাজ করছেন টুকটাক। দীর্ঘ পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার পর প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে বৃহস্পতিবার ফিরেছেন মাঠে। দুই স্পেলে বোলিং করেছেন ৭ ওভার। সেদিন সব কিছু পরিকল্পনামতো হওয়ার পর শনিবারের অনুশীলন। সব দেখে আশার কথা শোনালেন বোলিং কোচ ওয়ালশও। ‘এখন পর্যন্ত সব ঠিক। কিছু জড়তা, হালকা ব্যথা। এতদিন পরে ফিরলে এসব থাকবেই। সে ঠিক পথেই আছে। খুব ভালোভাবে খেয়াল রাখা হচ্ছে ওর অগ্রগতি।’
‘খেলবে কিনা (প্রথম ম্যাচে), এখনও আমরা জানি না। আজ ও কাল অবস্থা দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তবে আজকে নেট সেশনে বড় কোনো অস্বস্তি ছিল না। আমরা আশাবাদী’, যোগ করেন ওয়ালশ। স্বস্তির পাশাপাশি দুর্ভাবনাও আছে। ফিল্ডিংয়ে এখনও আছে দুশ্চিন্তার অবকাশ। থ্রোয়িং করতে পারছেন না পুরোপুরি, ডাইভ দেয়া বারণ। মাঠে নেমে সব সময় সাবধানে থাকাও কঠিন।
ফিল্ডিংয়ে সহজাত প্রবণতা থেকেই ডাইভ দিলে কাঁধ আবার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সব মিলিয়ে শংকার চোরাকাঁটা টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনাকে বিদ্ধ করছে। সিরিজের প্রথম ম্যাচ সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। মোস্তাফিজের মতো একজনকে খেলানোর লোভ সামলানো কঠিন। তবে ভবিষ্যৎ ভাবনায় বিন্দুমাত্র ঝুঁকি নেয়াটাও সমীচীন নয় কোনোভাবেই। মোস্তাফিজকে নিয়ে সিদ্ধান্ত আটকে এখন এই দুই ভাবনার টানাপোড়েনে। ম্যাচের আগেরদিন অনুশীলনে হয়তো আরেকটু পরিষ্কার হবে চিত্র। বোঝা যাবে, বক্সিং-ডের উৎসবেই সবুজ পোশাকে হ্যাগলি ওভালের সবুজ প্রান্তর চিরে ছুটবেন মোস্তাফিজ, নাকি আরেকটু দীর্ঘায়িত হবে অপেক্ষা।
খেলার শিডিউল
২৬ ডিসেম্বর : প্রথম ওয়ানডে (ক্রাইস্টচার্চ, ভোর ৪টা)
২৯ ডিসেম্বর : দ্বিতীয় ওয়ানডে (নেলসন, ভোর ৪টা)
৩১ ডিসেম্বর : তৃতীয় ওয়ানডে (নেলসন, ভোর ৪টা)
৩ জানুয়ারি : প্রথম টি ২০ (নেপিয়ার, বেলা ১২টা)
৬ জানুয়ারি : দ্বিতীয় টি ২০ (মাউন্ট মাউনগানুই, সকাল ৮টা)
৮ জানুয়ারি : তৃতীয় টি ২০ (মাউন্ট মাউনগানুই, সকাল ৮টা)
১২-১৬ জানুয়ারি : প্রথম টেস্ট (ওয়েলিংটন, ভোর ৪টা)
২০-২৪ জানুয়ারি : দ্বিতীয় টেস্ট (ক্রাইস্টচার্চ, ভোর ৪টা)