Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬: 53শ্যামবর্ণ, দীর্ঘদেহী, স্বাস্থ্যবান, শ্মশ্র“মণ্ডিত মুখমণ্ডল এবং চোখে চশমা পড়া এক ব্যক্তি মোহাম্মদ ইমতিয়াজ।

তিনিই গত সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকার আশকোনায় সূর্য ভিলা নামক নবনির্মিত ত্রিতল ভবনটির নিচ তলার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন।
বাড়িওয়ালার মেয়ে জোনাকি রাসেল তার কাছে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেন, তিনিই বাড়িটির দেখভাল করেন। তার পিতা প্রবাসী।
জোনাকি রাসেল নিজে অবশ্য ওই বাড়িতে থাকেন না, তিনি থাকেন পাশেই তার শ্বশুরালয়ে।
সূর্য ভিলার তিন তলায় থাকেন তার মা এবং এক বোন। বিবিসি বাংলার সঙ্গে আজ কথা হয়েছে মিসেস রাসেলের, তিনি মোহাম্মদ ইমতিয়াজের চেহারার এই বর্ণনা দিচ্ছেন এবং বলছেন, মি. ইমতিয়াজের স্ত্রী, চল্লিশ দিন বয়স্ক সন্তান এবং আরেক মহিলা—মোট চার জন থাকার কথা ফ্ল্যাটটিতে।
বাসা ভাড়া নেয়ার শর্ত হিসেবে সবার জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ করেন মি. ইমতিয়াজ, বলছিলেন মিসেস রাসেল। এসব কাগজপত্র ও তাদের পূরণ করা ভাড়াটিয়া ফর্ম যথারীতি থানায় জমাও দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মিসেস রাসেল।
বাড়ি ভাড়া নেয়ার পর তারা যথাসময়ে বাসায় ওঠেন। কিন্তু কখনো খুব একটা বাইরে বের হতেন না। “আমরা বলতাম, আপনি বের হন না কেন? উনারা হিজড়ার অজুহাত দিত সবসময়। বলতো ছোট বাচ্চা আছে, হিজড়ারা অনেক বিরক্ত করে। সামনের বাসা থেকেও নাকি তারা দশ হাজার টাকা নিয়ে গেছে”, বলছিলেন জোনাকি রাসেল।
“আমি যতবার গেছি তখন ছোট বেবি আর ওয়াইফটাই ছিল”। যে কিশোরটি পুলিশী অভিযান বাসার মধ্যে নিহত হয়েছে, তাকে কখনো দেখেননি বলে জানান মিসেস রাসেল, এমনকি যে মহিলা আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে তাকেও তিনি দেখেননি।
তবে মোহাম্মদ ইমতিয়াজের সঙ্গে অনেকবারই দেখা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। “অনেক সময় ভাড়া নেয়ার জন্য যেতাম, তখন উনি দরজা খুলত। ভাড়াটা দিত। অনেক সময় পানি না থাকলে বলত, পানি নাই”।
কিন্তু শনিবারের অভিযানের পর ওই ভবনটিতে মারা যাওয়া বা গ্রেপ্তার হওয়া কারো মধ্যে জোনাকি রাসেলের বর্ণনা করা এই মোহাম্মদ ইমতিয়াজ নেই।
বোঝাই যাচ্ছে, সে ভাড়াটিয়া হিসেবে যে পরিচয়পত্র সরবরাহ করেছে সেটি জাল ছিল।
আর ওই ফ্ল্যাটটিকে বিভিন্ন সময় নিহত অভিযুক্ত জঙ্গিদের স্ত্রী ও সন্তানদের একটি আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যাবহার করা হত, যেটির ব্যবস্থাপনায় ছিল এই কথিত মোহাম্মদ ইময়িাজ।
কিন্তু সে আসলে কে? আর কোথায়ই বা গেল?
পুলিশ বলছে, সে পলাতক, তাকে খোঁজা হচ্ছে। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম বিবিসিকে বলছেন, গতকাল (শনিবার) যে দুজন মহিলাকে আটক করা হয়েছে আশকোনার ওই বাড়িটি থেকে, তাদের নিয়েই এই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
“আমরা যাকে খুঁজছি, নব্য জেএমবির আরেকজন নেতা, মুসা, সে-ই ইমতিয়াজ নাম নিয়ে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল”, বলছেন মি. ইসলাম।
এ ব্যাপারে কিছু গোয়েন্দা তথ্যও পুলিশের কাছে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই তথ্যের ভিত্তিতেই এখন অভিযান চালানো হচ্ছে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, শনিবারের অভিযানের সময় আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে এই অভিযুক্ত মুসার স্ত্রী তৃষ্ণা এবং তাদের কন্যাও রয়েছে বলে পুলিশ এর আগে জানিয়েছে।