খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬:
রাজধানী ঢাকার আশকোনায় জঙ্গিদের একটি আস্তানায় অভিযান শেষ করার একদিন পরে সেখান থেকে অস্ত্র উদ্ধারের কাজ করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, সূর্য ভিলা নামের তিন তলা বাড়ির নিচতলার ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে একটির পর একটি অস্ত্র উদ্ধার করে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
গ্রেনেড ও সুইসাইডাল ভেস্ট:
কিন্তু ঘরের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় এখনও বেশ কয়েকটি সুইসাইডাল ভেস্ট এবং গ্রেনেড পড়ে ছিল। পুলিশ বলছে, কয়েকটি গ্রেনেডের পিন খোলা। যে কোন সময় এগুলো বিস্ফোরিত হতে পারত।
অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা বলছেন, জানালা দিয়ে বাইরে থেকে তারা দেখতে পাচ্ছেন ভেতরে ‘জঙ্গি কিশোর’ আফিফ কাদরীর মরদেহ পড়ে রয়েছে। তার মৃতদেহের পাশে পড়ে আছে একটি ফায়ার আর্মস, কিছু গ্রেনেড এবং একটি সুইসাইডাল ভেস্টও।
তিনটি গ্রেনেডের পিন খোলা:
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন, যিনি এই অভিযান পরিচালনা করছেন, ঘটনাস্থল থেকে তিনি টেলিফোনে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, বাইরে থেকে তারা দেখতে পাচ্ছেন কয়েকটি গ্রেনেডের পিন খোলা।
মি. রহমান বলেন, ‘তিনটি গ্রেনেডের পিন খোলা। মনে হয় জঙ্গিরা এগুলো দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু তখন বিস্ফোরিত হয়নি। সেগুলো ফায়ার্ড অবস্থায় রয়েছে।’
ঘরের ভেতরে ঢোকার পর প্রথম কক্ষটিতে বেল্টের মতো পেঁচানো একটি জিনিস, তার ভেতরে গ্রেনেডের মতো ছটি বস্তু এবং তার পাশে একটি সুইচ ও ব্যাটারি পড়েছিলো। দেখে মনে হয় সেটা একটা সুইসাইডাল ভেস্ট। ওই রুম থেকে বাকি দুটো রুমে যাওয়ার পথে সেখানেও আরো একটি সুইসাইডাল ভেস্ট পড়ে থাকতে দেখা যায়।
পুলিশ বলছে, বাড়িটির ভেতরে তারা দুটো সুইসাইডাল ভেস্ট দেখতে পেয়েছেন।
গ্যাসের কারণে ঢোকা যাচ্ছে না:
অভিযান শেষ হয়ে যাওয়ার এতো সময় পরেও ভেতরে ঢোকা দেরি কেনো জানতে চাইলে ছানোয়ার হোসেন বলেন, অভিযানের সময় এর ভেতরে টিয়ার গ্যাস ছোঁড়া হয়েছিলো। এই গ্যাসের কারণে ভেতরে যাওয়া কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। পরে ভেতরে বাতাস প্রবাহ করার মাধ্যমে এই গ্যাস পরিষ্কার করার হয়েছে।
তিনি বলেন, জানালা দিয়ে দেখতে গেলেও চোখে ও নাকে ওই গ্যাসের ঝাঁঝ লাগছিল। পুলিশ বলছে, ওই ফ্ল্যাটের ভেতরে মোট তিনটি কক্ষ আছে। জানালা দিয়ে তারা দুটো ঘর আর রান্না ঘরের ভেতরে দেখতে পেয়েছেন। রান্না ঘরেও কিচেন ক্যাবিনেটের ওপর একটি গ্রেনেড পড়ে ছিল।
‘খাটের পাশে ফ্লোরের ওপর একটি গ্রেনেড পড়ে আছে। আরেকটি রয়েছে ড্রেসিং টেবিলের ওপরে। রান্না ঘরের তাকের ওপরে একটি গ্রেনেড দেখা যাচ্ছে।’ রোববার দুপুরে কথা গুলো বলছিলেন মি. হোসেন। পুলিশ ওই ফ্ল্যাটের ভেতরে ১৬টির মতো গ্রেনেড দেখতে পেয়েছেন।
হাতে বানানো গ্রেনেড:
ছানোয়ার হোসেন জানান, তারা খুব সতর্কতার সাথে কাজ করেছেন। কারণ তারা নিশ্চিতভাবে জানেন না কোন গ্রেনেড কি অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে এসব ভেস্ট ও গ্রেনেড আস্তানায় ভেতরেই জঙ্গিদের হাতে বানানো। এসবের উপকরণ হয়তো এদিক সেদিক থেকেও আসতে পারে।’
অপারেশন রিপল ২৪:
ঢাকায় এর আগে পুলিশ জঙ্গিদের যেসব আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে তার সাথে আশকোনার আস্তানার কতোটা মিল বা অমিল এই প্রশ্নের জবাবে ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আজিমপুরে চালানো অভিযানের সাথে এর কিছুটা মিল আছে। কারণ সেখানেও নারী ও শিশুরা অবস্থান নিয়েছিলো। তবে অন্যান্য অপারেশনের সাথে এর বড়ো রকমের তফাৎ রয়েছে কারণ আশকোনায় তারা ভেতরে অবস্থানকারী নারী ও শিশুদেরকে নিরাপদে এবং সমঝোতার মাধ্যমে বের করে আনার চেষ্টা করেছেন।’
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয়ে শনিবার বিকেল পর্যন্ত ওই বাড়িটি ঘিরে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ‘অপারেশন রিপল ২৪’ নামে ওই অভিযানে নিহত হন দুই ‘জঙ্গি’। তাদের মধ্যে একজন নারী আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোর ঘটিয়ে নিজেকে হত্যা করে। আত্মসমর্পণ করেন দুই শিশুসহ দু’জন নারী। আহত এক শিশুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।