Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

1আইএসের সন্দেহভাজন জঙ্গি মোহাম্মদ মুসা বিদেশি পর্যটকদের বিশেষ করে রুশ, মার্কিনী এবং ব্রিটিশদের উপর হামলা করে তাদের হত্যা করার জন্য দিল্লি এবং শ্রীনগর পরিদর্শনে যান বলে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে। এছাড়া তিনি কলকাতার মাদার তেরেসার মিশনারিজ অব চ্যারিটির প্রধান কার্যালয়েও হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে জানানো হয়।

শুক্রবারে দায়ের করা এই অভিযোগপত্র অনুযায়ী, তিনি আবু সুলাইমান দ্বারা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির হামলায় কথিত মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আবু সুলাইমানকে দায়ী করা হয়।
ভারতীয় পত্রিকা হিন্দুস্তান টাইমসের রোববারে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৫ বছর বয়সি সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী মোহাম্মদ মুসা এখন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে আছেন। তিনি কলকাতার মাদার হাউজে নিয়মিত যাতায়াতকারী বিদেশিদের উপর হামলা করতে চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়।
এনআইএ’র তদন্ত কর্মকর্তারা মুসার সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের আইএসের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে ফোনের কথোপকথন উদ্ধার করেন। সেখান থেকে জানা যায়, আবু সুলাইমানের নির্দেশে তিনি ২০১৫ সালের মে-জুন মাস পর্যন্ত কাশ্মীর ছিলেন। এমনকি সেখানে আইএস পতাকা হাতে মুসাকে দেখা গেছে। সেসময় তিনি ডাল লেকের কাছে একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, কাশ্মীরে মুসা আইএসের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। আইএসের পতাকা হাতে তার ভিডিও করেছিল স্থানীয় মিডিয়া। তিনি জানিয়েছিলেন, পতাকা উত্তোলনের সময় তার মুখ ঢাকা ছিল।
ফোনালাপে মুসা নিজেকে আইএসের গুপ্তচর হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি কোনো এক শুক্রবার শ্রীনগরের পুরনো শহরে জামিয়া মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যান। নামাজের পর আইএসের পতাকা প্রদর্শন করেন।
এনআইএ’র অভিযোগপত্রে বলা হয়, মুসা উল্লেখ করেন আনসার–উত-তাওহীদের পুরনো সব সদস্য আইএসে যোগ দিয়েছেন। তিনি আরো জানান, ভারতে আইএসের ১০ হাজার সদস্য রয়েছে।
আইএস নীতি নির্ধারকের সঙ্গে মুসার কথোপকথন থেকে এটা পরিস্কার, তিনি ভারতে হামলার ক্ষেত্রে কম তীব্রতাসম্পন্ন সহিংসতাকেই বেছে নিতে চেয়েছিলেন। এক্ষেত্রে বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে হামলার পরিবর্তে লম্বা ছুরি দিয়ে হত্যা করাকেই শ্রেয় মনে করতেন। এমনকি যখন তাকে গ্রেফতার করা হয় তখন তার কাছে এধরনের একটি ছুরি পাওয়া গিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এটি দিয়েই হয়তো তিনি নিজ জেলা বীরভূমের লাভপুরের ব্যবসায়ী মালয় চ্যাটার্জিকে হত্যা করেছেন।
অভিযোগপত্রের বিবরণ অনুযায়ী, মুসা নিঃশব্দে নির্মমভাবে হত্যা করার পক্ষে ছিলেন। তিনি জানান, আবু সুলাইমান ২০১৫ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে পশ্চিমবঙ্গের লাভপুর এবং মালদহে এসেছিলেন। মুসলমানরা যে নৃশংসতার সম্মুখীন হচ্ছেন তা নিয়ে আলোচনার জন্যই মূলত এই সফর করেছিলেন তিনি।
চলতি বছরের পাঁচ জুলাই সিআইডি এবং রেলওয়ে পুলিশ বর্ধমান রেল স্টেশন থেকে মুসাকে গ্রেফতার করে। আগস্টে বাংলাদেশি গোয়েন্দা দল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এদিকে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবি আই) ঢাকার হলি আর্টিজানের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয় নিয়ে তাকে জেরা করে।
২০১৫-১৬ সালে মুসা মুসলিমাহ হিন্দ, সাবিলিল্লাহ ফি সাবিলিল্লাহ এবং রোনাল্ডো ম্যারাডোনা নামে ফেসবুক একাউন্ট খোলেন। আইএসের মতাদর্শ প্রচারের জন্য তার মোবাইল নম্বর দিয়ে এগুলো নিবন্ধিতও করেন। এছাড়াও এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, সিরিয়া এবং ভারতের আইএস নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করাই তার উদ্দেশ্য ছিল।
এনআইএ’র অভিযোগপত্রে বলা হয়, ভারতে আইএসের গুপ্তচর হিসেবে সন্তুষ্ট ছিলেন না মুসা। তিনি আইএসে যোগদান করতে সিরিয়া যাওয়ার ব্যাপারে মনস্থ করেছিলেন। এজন্য পাসপোর্ট সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু অসম্পূর্ণ ঠিকানা দেয়ার কারণে তা জোগাড় করতে পারেননি। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস