Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬:40
একদা পীর আউলিয়ার দেশ বলে বিবেচিত এই উপমহাদেশে যেসব সুফী সাধকের আগমন ঘটেছিল তাদের প্রেরণাতেই পরবর্তীকালে মুসলিম শাসন ও মোগল আমলে এখানে বহু মসজিদ গড়ে উঠে। ধর্ম প্রচার ও প্রসারের পাশাপাশি মুসলিম সাধকরা ইসলাম অনুসারীদের আকৃষ্ট করতে শিল্পময় উপসনালয় তৈরিতে মনোনিবেশ করেন।
এই ধারাতেই নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর শহরের ইসলামবাগে ১৮৬৩ সালে তৈরি হয় ঐতিহাসিক ‘চিনি মসজিদ’। প্রথমে এটি ছিল একটি দোচালা টিনের ঘর। পরবর্তীতে ১৯২০ সালে ইমাম হাজী হাফিজ আবদুল করিমের উদ্যোগে মসজিদের ৩৯ ৪০ ফুট আয়তনের পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়। এর নকশা তৈরি করেন হাজী করিম নিজেই। ১৯৬৫ সালে এর দ্বিতীয় অংশটিরও নির্মাণ শেষ হয়। এসময় কলকাতা থেকে ২৪৩ টি শংকর মর্মর পাথর এনে মসজিদে লাগানো হয়। মসজিদের স¤পূর্ণ অংশ চিনামাটির টুকরা দিয়ে আবৃত করতে বগুড়ার একটি গ¬াস ফ্যাক্টরী মসজিদে ২৫ মেট্রিক টন চিনামাটির পাথর দান করে। এই পাথরেই মোড়ানো হয় মসজিদের ৩২টি মিনারসহ ৩টি বড় গম্বুজ। নির্মাণ করা হয় উত্তর ও দক্ষিণে দু’টি ফটক। মসজিদের গোটা অবয়ব ঢেলে সাজানো হয় রঙিন চকচকে পাথরে। মসজিদের বারান্দা বাঁধানো হয় সাদা মোজাইকে। দেয়াল জুড়ে চিনামাটির পাথরেই আঁকা হয় নানান সুদৃশ্য নকশা। জনশ্র“তি আছে, মসজিদের পুরো অংশ চিনামাটি দিয়ে তৈরী বলে একে বলা হয় ‘চিনি মসজিদ’। মসজিদকে ঘিরে আছে নানা কাহিনী। বিভিন্ন কারণে এটি আকৃষ্ট করেছে শিল্প পুজারীদের। মসজিদটি নিছক উপাসনালয়ই নয়, নয়নাভিরাম স্থাপত্যশৈলীর এই মসজিদটি দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছেও সমান আকর্ষণীয়, তেমন ধর্মানুরাগী মুসলমানদের মনেও মসজিদের আবহ সঞ্চার করে এক দারুণ আধ্যাতিœক অনুভূতি। নয়ন মনোহর ও ঐতিহ্যমন্ডিত মসজিদটির দ্বিতীয় তলায় পর্যটকদের থাকার বিশেষ ব্যবস্থা আছে। ফলে প্রতিবছরই দেশ-বিদেশের উলে¬খযোগ্য সংখ্যক পর্যটক, প্রথিতযশা ব্যক্তি ঘুরে আসেন এ মসজিদ। এ পর্যšত দেশের দু’জন রাষ্ট্রপ্রধানও পরিদর্শন করেন এ মসজিদ। মসজিদটি স¤প্রসারণের দাবি উঠলেও এর বাঁয়ে একটি ইমাম বাড়া, ডানে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিমে গা ঘেঁষে খ্রিষ্টীয় স¤প্রদায়ের কবরস্থান, পূর্বে পাকা সড়কের কারণে মসজিদটি বাড়ানোর সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে। তবে এরই মধ্যে ডানদিকে কিছুটা স¤প্রসারণ করা হয়েছে। ধর্মানুরাগী ও বিচক্ষণ আবদুল করিম এলাকায় নির্মাণ করেন বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৯ সালে তিনি পরলোকগমন করেন। ‘চিনি মসজিদ’ এ অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করতে রেখেছে অনন্য ভুমিকা।
ময়নুল হক,নীলফামারী।