খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬: ইতিহাস, ঐতিহ্য আর বহু কীর্তিমান মনীষির স্মৃতিধন্য মুন্সীগঞ্জ জেলা। পীর, আওলীয়া, জ্ঞানী, গুনিদের জনপদ মুন্সীগঞ্জ। এমনই একজন গুনি, জ্ঞানী ও মহিলাদের উন্নয়নের রূপকার ডা. আসমা বানু। মুন্সীগঞ্জের গনকপাড়ার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম, বাবা ঢাকা চাকুরীর সুবাধে তার জন্ম স্থান ঢাকা আজিমপুর। ঢাকা আজিমপুরে ১৯৫৮ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি এস.এসসি ১৯৭৩ সালে, এইচ.এস.সি ১৯৭৫ এবং ১৯৮২ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারী পাশ করে ঢাকায় তিনি অসহায় ও দুস্থ্যদের ফ্রি চিকিৎসা সেবা প্রদানের কাজ শুরু করেন। দুস্থ মহিলাদের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান করার জন্য তিনি শাপলা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি সামাজিক সংগঠন গঠন করেন। তিনি জেলা থেকে শ্রেষ্ঠ সংগঠক হিসেবে পুরস্কৃত হন-২০১৫-২০১৬ সালে। তার দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে যাদের মধ্যে বড় মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.বি অনার্স পড়া শুনা করছেন অন্যজন ছোট মেয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে শান্তামরিয়ম ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করছেন।
তিনি প্রথমে ঢাকায় ফ্রি হসপিটাল করেন। গোপিবাগ বাজারে ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তার এই ফ্রি চিকিৎসা সেবা চালু ছিল। এই চিকিৎসালয় কেন্দ্রের নাম ছিল শাপলা দাতব্য চিকিৎসালয়। দুস্থ্য মহিলা ও শিশুদের ফ্রি চিকিৎসা দেওয়া হতো এই চিকিৎসালয়। শনিবার ১ দিন করে ৫বছরের নীচের শিশুদের পুষ্টির কথা মাথায় রেখে ফ্রি দুধ দেওয়া হতো এখান থেকে। এক সময় অর্থের অভাবে এই চিকিৎসালয় বন্ধ হয়ে যায়।
তার মা ফাতেমা খাতুন। তার ছেলেরা আমেরিকা থাকায় বিশেষ করে মুন্সীগঞ্জের মানুষ বেশীরভাগ প্রবাসী হওয়ায় পিতা ও মাতার দেখাশুনা করতে পারে না। বৃদ্ধ বয়সে তাদের দেখার কেউ থাকে না। যেহেতু তার ছেলেরা বিদেশ থাকায় এমনটিই তিনি অনুভব করেছেন। সেই অনুভূতি থেকেই তিনি মুন্সীগঞ্জে চালু করেছিলেন বৃদ্ধ নিবাস। গনকপাড়ায় নিজ বাড়ীতে ৩/৪জন বৃদ্ধা নিয়ে চালু হলেও তাদের চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে পরবর্তীতে তিনি এটা বন্ধ করে দেন। বর্তমানে এই মহিয়সী নারী ডা. আসমা বানু তার মায়ের চিন্তাকে সফল করার লক্ষ্যে ৫০ জন বৃদ্ধকে দেখা শুনা করার জন্য বৃদ্ধাশ্রম চালু করার জন্য কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ২০১৮ সালে এই বৃদ্ধনিবাস চালু করার আশা করছেন তিনি।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার গনকপাড়া গ্রামের মৌলভীবাড়ীর ডা. আসমা বানু পিতা: মৃত আনোয়ার উদ্দিন আহম্মেদ, মাতা ফাতেমা খাতুন (আমেরিকা প্রবাসী), স্বামী: আহসানুল হোসেন ইঞ্জিনিয়ার বর্তমান: অবসরপ্রাপ্ত ঢাকায় নিজ ব্যবসা দেখা শুনা করেন। তার পিতার ইচ্ছা ছিল মেয়েকে ডাক্তার বানিয়ে অসহায় ও দু:স্থ্যদের ফ্রি চিকিৎসা প্রদান করা। সেই ইচ্ছাকে সামনে রেখে এই মহিয়সী নারী ফ্রি চিকিৎসা সেবা শুরু করেছিলেন।
শাপলা সমাজ উন্নয়ন সংস্থ্যা নামের সংগঠনটি ১৯৯৪ সালে ঢাকায় গোপীবাগে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি চিন্তা করেন মুন্সীগঞ্জের অসহায় দু:স্থ মহিলাদের জন্য কিছু করা প্রয়োজন বলে মনে করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০০৯ সালে নিজ মাতৃভূমিতে সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করেন। বর্তমানে এই সংগঠনটির কার্যক্রম কাটাখালি বাজারস্থ গাজী ভিলায় ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তিনি।
শাপলা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে তিনি পাট দিয়ে যত ধরনের আসবাব পত্র তৈরী করা যায় তা তৈরী করেন এবং বাজারজাত করেন। বিশেষ করে পাটজাত দ্রব্য দিয়ে বাচ্চাদের খেলনা, শিক্ষা উপকরণ, এবং হস্ত কুটির শিল্পের কাজ করে যাচ্ছেন।
বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষনার্থী রয়েছে ৩০জন। এদের মধ্যে যাদের হাতের কাজ ভালো তাদের মজুরি দিয়ে কাজ করান। ইতোমধ্যে তিনি মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ২২৩জনকে সার্টিফিকেট প্রদান করেছেন। এক একজন দু:স্থ মহিলা যেন নিজে স্বাবলম্বী হতে পারে সে জন্যই এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। তার সংগঠন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে মাশরুম চাষ পদ্ধতিতে চাকুরী করছেন। অপরজন শিক্ষা অধিদপ্তরে চাকুরী নিয়েছেন।
একান্ত সাক্ষাতকারে ডা. আসমা বানু বলেন, তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা অসহায় ও দুস্থ মেয়েদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলাই তার মূল লক্ষ্য। এ ছাড়া তিনি নিজ বাড়িতে বৃদ্ধ নিবাসও তৈরী করবেন। তিনি আরো জানান, ২০১৩-১৪ অর্থ সালে সরকার থেকে একটা (ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল) সফলতার সাথে কার্যক্রম শেষ করেছেন। ২০১৬-২০১৮ সালে তিনি আবার এই প্রকল্পের কাজ হাতে পেয়েছেন। এবারও তিনি সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করছেন।