খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬:
আশকোনায় জঙ্গি আস্তানায় নিরাপত্তা বাহিনীর আভিযানে আত্মসর্মপনকারী দুই ‘নারী জঙ্গি’ জেবুন্নাহার ওরফে শীলা ও তৃষামনি ওরফে উম্মে আয়েশাকে সাতদিনের পুলিশ রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এদের জিজ্ঞাসাবাদে ‘সুইসাইড মোটিভিশন’ ও নারী আত্মঘাতী জঙ্গি সারিকার ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, শনিবার ভোররাত থেকে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকার পূর্ব আশকোনার একটি বাড়িতে পুলিশি অভিযানে সারিকা আত্মসমর্পণের ভান করে এক পর্যায়ে আত্মঘাতী হয়। নিজের শরীরে বাধা ‘সুইসাইড ভেস্ট’-এর বিস্ফোরণ ঘটায় সে। ফলে সঙ্গে থাকা শিশু সন্তানটি আহত হয়। আর অপর দু’জন নারী জঙ্গি শিলা ও তৃষামনি দুই শিশুকে নিয়ে আত্মসমর্পণ করে।’
আত্মসমর্পণকারী দুই নারীর মধ্যে একজন হলো, মেজর জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী রিমান্ডে নেয়া জেবুন্নাহার ওরফে শীলা। আর তৃষামনি ওরফে উম্মে আয়েশা নব্য জেএমবি-র এখনকার প্রধান আবু মুসার স্ত্রী। পুলিশ মুসাকে খুঁজছে। আত্মঘাতী নারী জঙ্গি সারিকা অন্য এক পলাতক জঙ্গি সুমনের স্ত্রী। গুলিতে নিহত আফিফ কাদেরি আজিমপুরে নিহত তানভীর কাদেরির ছেলে।
সোমবার লাশের ময়না তদন্ত শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ময়নাদন্তকারী চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ জানান, ‘গুলিতেই আফিফ কাদেরি নিহত হয়েছিলেন।’
মাসুদুর রহমান জানান, ‘নারী জঙ্গিরা প্রধানত স্বামী অথবা পরিবারের মাধ্যমে জঙ্গি দলে ভিড়েছে। দুঃখের বিষয়, এই নারীদের ব্যবহার করেই জঙ্গিদের একটি অংশ সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেছিল।’
তিনি জানান, ‘আশকোনার ঐ বাড়ি থেকে মোট তিনটি ‘সুইসাইড ভেস্ট’ উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেনেড দিয়ে তৈরি এই ভেস্ট ব্যবহার করে জঙ্গিরা আত্মঘাতী হামলা চালাতে সক্ষম। আমাদের ধারণা, তিন নারী জঙ্গিই আত্মঘাতী হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। আমাদের অভিযানের সময় মোটিভেশনের মাধ্যমে দু’জনকে আত্মসমর্পণ করাতে পারি। কিন্তু একজন আত্মসমর্পণের ভান করে আত্মঘাতী হামলা চালাতে গিয়ে নিহত হয়।’
এদিকে পুলিশ এখন নব্য জেএমবি-র অন্যতম সমন্বয়ক মেজর জিয়া এবং নতুন নেতা মুসাকে আটকের চেষ্টা করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সংবাদমাধ্যমেকে বলেছেন, ‘এই দু’জনই পুলিশের নজরদারির মধ্যে রয়েছে। আশা করছি তারা অচিরেই ধরা পড়বে।’
মাসুদুর রহমানের কথায়, ‘আমরা মনে করি জঙ্গিদের শক্তি এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। যারা এখনো ধরা পড়েনি, তারা খুব তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে।’
মাসুদুর রহমান জানান, ‘আমরা এখন তাদের মোটিভেশনের নতুন কোনো প্রক্রিয়া আছে কিনা তা জানার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশে প্রথম নারী জঙ্গির আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা জঙ্গিদের আরো গভীর মোটিভেশনের ইঙ্গিত দেয়।’
এদিকে আশকোনায় ফাঁপা বইয়ের ভেতর অস্ত্র আনত জঙ্গিরা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখকে ফাঁকি দিতেই তারা এধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করত। গত শনিবার আশকোনার ‘সূর্য ভিলা’ নামের ওই বাড়িটি থেকে বেশকিছু বই উদ্ধার করে দেখা গেছে ভেতরে ফাঁপা। কেমব্রিজ এ্যাডভান্সড লার্নারস ডিকশোনারির ভেতরে পাতাগুলো এমনভাবে কাটা ছিল যে সেখানে ক্ষুদ্র অস্ত্র সহজেই লুকানো যায়।
আশকোনার ওই বাড়িতে জঙ্গিরা অস্ত্র আনা ছাড়াও গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্যে লুকিয়ে থাকার ডেরা হিসেবে ব্যবহার করত।
কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিটের এ্যাডিশনাল ডেপুটি কমিশনার সানোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, তারা কাঁচামাল সংগ্রহ করে ওই বাড়িতে বোমা ও বিস্ফোরক তৈরি করতো এমন আলামত পাওয়া গেছে। তবে নারী জঙ্গিরা এখনো আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর প্রশিক্ষণে দক্ষ হয়ে উঠতে পারেনি।