খোলা বাজার২৪,বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬: রাজশাহীর রাজনীতি থেকে প্রভাবশালী দুই নেতা মিজানুর রহমান মিনু ও অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফার বিদায় হয়েছে। জেলা ও মহানগর কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়েই তাদের বিদায় নিতে হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহীতে মাইনাস টু ফর্মুলাই কার্যকর হল। কক্ষচ্যুত হয়ে গেলেন রাজশাহী অঞ্চলের দাপুটে এ দুই নেতা।
মঙ্গলবার সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষণা দেয়া হয়, মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট (আংশিক কমিটি) বিএনপি রাজশাহী মহানগর নির্বাহী কমিটি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশক্রমে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনুমোদন করেছেন। একইভাবে অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন তপুকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট একেএম মতিউর রহমান মন্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট (আংশিক কমিটি) বিএনপি রাজশাহী জেলা নির্বাহী কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। আগের কমিটিতে মহানগরের সভাপতি ছিলেন মিজানুর রহমান মিনু ও জেলার বিএনপির সভাপতি ছিলেন নাদিম মোস্তফা।
নতুন কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন জেলার সাধারণ সম্পাদক কামরুল মনির এবং পদোন্নতি হয়নি মিলনের। এবারও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রাখা হয়েছে তাকে। জেলার নতুন কমিটির সভাপতি তপু ও সাধারণ সম্পাদক মন্টুর পদোন্নতি হয়েছে। তপু ছিলেন আগে কমিটির সহসভাপতি এবং মন্টু ছিলেন জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক।
এ কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে বড় ধরনের পরিবর্তনে রাজশাহীতে বিএনপির রাজনীতি নয়া মেরুকরণের দিকেই এগিয়ে গেল। দলের নেতাকর্মীদের একটি অংশের ধারণা, সরকারবিরোধী আন্দোলনে হাইকমান্ডকে খুশি করতে না পারায় পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হল মিজানুর রহমান মিনু ও নাদিম মোস্তফাকে। তবে মিজানুর রহমান মিনু ও নাদিম মোস্তফা তাদের বিরুদ্ধে ওঠা এমন অভিযোগ মানতে চান না। তারা উভয়ই বলেন, তাহলে বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে যে মামলা হয়েছে, তা কি কারণে? আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম বলেই এসব মামলা দিয়েছে সরকার।
নাদিম মোস্তফা নতুন কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, উল্লিখিত কমিটি দেয়ার জন্য দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করি, নতুন নেতৃত্ব সামনের দিনে দলকে সংগঠিত করতে ভূমিকা রাখবে।
এদিকে রাজশাহীর রাজনীতিতে মিনু-নাদিমের মাইনাস হয়ে যাওয়ার বিষয়টিই এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে। কারণ মিজানুর রহমান মিনু মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন। তিনি বিএনপির আগের কমিটিতে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিবও ছিলেন। বিএনপির রাজনীতিতে রাজশাহী অঞ্চলে এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা মিনু এখন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাত্র।
আরেক দাপুটে নেতা এবং তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ নাদিম মোস্তফা আগের কমিটিতে ছিলেন বিশেষ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি। নতুন নির্বাহী কমিটিতে তাকে শুধু সদস্য করা হয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, রাজশাহী মহানগর বিএনপিতে যেমন মিজানুর রহমান মিনুর কথাই শেষ ছিল। তবে শফিকুল হক মিলন নেতাকর্মীদের মাঝে মিনুর ‘একান্ত অনুগত’ হিসেবেই পরিচিত। ফলে মিনুর সিদ্ধান্তের বাইরে কখনও যাননি মিলন। তবে ২০১৩ সালে বুলবুল মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই মিনু তার সঙ্গে দূরত্ব রেখে চলা শুরু করেন।
২০১৪ সালের আগস্টে মহানগর যুবদলের কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে কোণঠাসা করে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন মিনু। কিন্তু তাতে সফল হতে পারেননি। তীব্র বিরোধিতার মুখে যুবদলের ওই কমিটি বাতিল করা হয়। তখন থেকেই মূলত বুলবুল অনুসারী নেতাকর্মীরা মিনুর বিপক্ষে ঐক্যবদ্ধ হন। তারা বলছেন, মিজানুর রহমান এতদিন একাই বিএনপির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। তার বাইরে মতামতের কোনো গুরুত্ব ছিল না। ফলে নেতাকর্মীরা মিনুর চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তই মেনে নিতেন। তবে মহানগর বিএনপির সভাপতি হিসেবে বুলবুল আসায় এটিকে তাদের বিজয় হিসেবেই দেখছেন। মিনুর বাদ পড়া বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চান দলের স্থানীয় পর্যায়ের সিনিয়র নেতারা। তবে মহানগর বিএনপির সদ্য সাবেক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সাইদুর রহমান পিন্টু বলেন, হাইকমান্ড যা করেছে ভালো করেছে। তাদের সিদ্ধান্তে আমরা খুশি।
ওই কমিটির আরেক যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট রইসুল ইসলামও বলেন, দলের হাইকমান্ড নিশ্চয়ই ভালো-মন্দ বিচার-বিশ্লেষণ করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে কারও কিছু বলার থাকে না।
তবে এ ব্যাপারে মিজানুর রহমান মিনু বলেন, আমি দুই মেয়াদে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এবারের ঘোষিত কমিটিতে স্থান পাওয়া বা না পাওয়ার বিষয়টি এমন বড় কোনো ইস্যু নয়। কারণ দলে আমার বর্তমান যে রাজনৈতিক অবস্থান তাতে এসব পদে আমি আগেই দায়িত্ব পালন করেছি। এছাড়া দলের হাইকমান্ড কাকে দায়িত্ব দেবে, আর কাকে দেবে না- সেটা নীতিনির্ধারকদের ব্যাপার।
এদিকে একই অবস্থা ছিল নাদিমেরও। নাদিমের মতের বাইরে যাওয়ার সাহস দেখাননি তার কমিটির কোনো নেতা। হরহামেশাই কমিটির পদে পরিবর্তন আনতেন নাদিম। তার আচরণে অনেক নেতাকর্মী নাখোশ ছিলেন। গত বছর বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনে জেলা কমিটির তেমন কোনো কার্যক্রম ছিল না।
জেলা বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নাদিম মোস্তফা জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি জেলার রাজনীতিতে সবার অভিভাবক। তার কারণেই জেলা বিএনপি এখনও দু’ভাগে বিভক্ত। এ বিষয়ে নাদিম মোস্তফা বলেন, দলের চেয়ারপারসন যা করেছেন ভালোই করেছেন। এখানে আমার কোনো বক্তব্য নেই।