Thu. Jun 19th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬:  10 কুমিল্লার লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা জুড়ে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা চলছে দেদারছে। অথচ ওদের কোন বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নেই। উপজেলা দুটোর বিভিন্ন অলি-গলিসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ড্রাগ লাইসেন্স বিহীন তথাকথিত ডাক্তার, কবিরাজ, হেকিমদের অপচিকিৎসা ও নিুমানের ওষুধ বিক্রেতাদের চরম দৌরাত্ম্যে এলাকার সহজ সরল মানুষ চিকিৎসার নামে প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট ওষুধ প্রশাসন নিরব ভূমিকায় এলাকার জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া উপজেলা দুটোর সর্বত্র চিকিৎসার নামে যেন অপচিকিৎসায় সয়লাব।
জানা যায়, দু’উপজেলায় এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার পাশাপাশি বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি কিংবা অন্যান্য চিকিৎসা চলে আসছে প্রতিনিয়ত। গাছ-গাছড়ার ভেষজ চিকিৎসা থেকে শুরু করে আকুপাংচার, হাইড্রোথেরাপী, অ্যারোমাথেরাপীসহ বিভিন্ন ব্যাতিক্রমী চিকিৎসা চালু রয়েছে স্থানীয় সরকারী-বেসরকারী ক্লিনিক ও চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে। বিশেষ করে হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদ কিংবা ইউনানী চিকিৎসা এখন এলাকার লোকজনের কাছে অতি পরিচিত। অথচ ওইসব ব্যবসায়ী ও চিকিৎসকদের কোন বৈজ্ঞানিক সনদ, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওইসব চিকিৎসকরা নিজেদেরকে হরেক-রকম আজগুবি উপাধিতে তুলে ধরে বিভিন্ন কাল্পনিক স্থান থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে এসেছেন বলে সাধারন মানুষের সাথে প্রতারনা করে যাচ্ছেন। কেউ কেউ ধর্ম গ্রন্থকে জ্ঞানের উৎস দাবী করে দেশ-বিদেশের মহান অলি-আল্লার নাম ভাঙ্গিয়ে নিজের তৈরী বিভিন্ন রোগের মহাঔষধ হিসাবে চালিয়ে দিচ্ছেন। এলাকার বিভিন্ন হাটাবাজারে ওইসব চিকিৎসকদের জলসার সামনে হরেক রকম গাছ-গাছড়ার বাকল, শিকড়, ফল-ফলাদি ও বিভিন্ন জলজ-বনজ কিংবা উভয়চর প্রাণীর অংশ বিশেষ দেখা যায়। হাটে-বাজারে পথচারীদের ওইসব হাতুড়ী চিকিৎসরা ডেক্সসেট, টিভি, ডিভিডি, পত্র-পত্রিকার কাটিং ও বিভিন্ন দেশী-বিদেশী নায়ক-নায়িকাদের বিভিন্ন আর্কষনীয় ছবি দেখিয়ে নানাহ প্রলোভন দিয়ে ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিচ্ছেন অর্থ ও মালামাল।
দু’উপজেলার স্থানীয় লোকজন জানায়, শহর এলাকার অলি-গলিসহ গ্রামের পাড়া-মহল্লায় গড়ে ওঠেছে সাইনবোর্ড সর্বস্ব অসংখ্য ডাক্তারখানা, হেকিমি দাওয়াখানা, কবিরাজ ঘর, তৈল পানি পড়া হুজুরের আসন, হোমিও মেডিসিন হাউস, প্রাইভেট ক্লিনিক, তথাকথিত ডাক্তার চেম্বার, পীর দরবেশের দরবার, তাবিজ তোলাসহ হরেক রকম রোগ নিরাময়ের কবিরাজি চেম্বার। এসব হাতুড়ে ডাক্তার-কবিরাজদের গাছ-গাছড়ার বড়ি, হালুয়া, সিরাপ, বিক্রি আর বর্ণচোরা যাদুমন্ত্র বিশারদদের তেলেসমতি ব্যবসা চলছে খোদ স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায়। ডাক্তার-কবিরাজখানায় ষ্টেরয়েড, সিনড্রোম, ভায়াগ্রা, ফরমালিন, প্যারিয়াকট্রিন, জেনেরিক, হাইড্রোক্লোরিক এসিডসহ হরেক রকম মাদকদ্রব্য, রেকটিফাইট ¯প্রীট, এ্যালকোহল পণ্য, উচ্চ মাত্রায় নেশা জাতীয় ও যৌন উত্তেজক ওষুধসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ ওইসব চিকিৎসকদের তৈরী ঔষুধে হরেক-রকম বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য ও কালার রং ব্যবহার করলেও ওইসব দ্রব্যের বৈজ্ঞানিক ব্যবহার এবং বিষাক্ত প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তাদের কোন ধারনা নেই।
সূত্রটি আরো জানায়, এলাকার স্বল্প শিক্ষিত যুবক-যুবতী ও বৃদ্ধরা নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বলে তাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকই ওইসব চিকিৎসকদের খরিদ্দার। ভেষজ ও হারবালের নামে স্বাস্থ্য ভাল করা, ওজন কমানো- বাড়ানো, যৌন সমস্যা, চর্ম, হাঁপানী, বাত-ব্যাথা, দাঁত-চোখের সমস্যা, অশ্ব-গেজ, ভগন্দর, হ্যাপাটাইটিস, এইডস্, ক্যান্সার, ডায়বেটিসসহ হরেক রকম রোগে চিকিৎসা করছেন তারা। যার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
সুত্রটি আরো জানায়, এলাকায় কবিরাজসহ অনেকগুলো হারবাল এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক আছেন। তাদের চেম্বারে সাধারন রোগীর চাইতে স্থানীয় ক্যাডারদের আনাগোনা বেশি। এতে এলাকায় বখাটে মাস্তান ও মাতালদের উপদ্রব ব্যাপক হারে বেড়ে চলেছে। সংশ্লিষ্ট ওষুধ বিভাগের অনুমোদন বা কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই চটকদার পোষ্টার, বিজ্ঞাপন, প্রচার-প্রপাগান্ডা আর ফাঁদে পা দিয়ে সাধারন মানুষ প্রতারিত হচ্ছে।
স্থানীয় এক হারবাল চিকিৎসক জানান, দেশ-বিদেশের গাছ-গাছড়া তৈরীর হারবাল ও ভেষজ ঔষধ বেচা-কেনা হচ্ছে প্রচুর। এ ক্ষেত্রে অনেক অভিজ্ঞ জ্ঞানী চিকিৎসক ও হেকিম বৈজ্ঞানিক স্বীকৃত পদ্ধতিতে কার্যকর ঔষধ সঠিক পন্থায় ব্যবহার করলে পাশ্ব-প্রতিক্রিয়া থাকে না। তবে তাদের বেশীর ভাগ ওষুধই স্বপ্নে পাওয়া কিংবা বাপ-দাদা কর্তৃক প্রাপ্ত।
এ ব্যাপারে দু’উপজেলা ও জেলার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ নিয়ে কোন অভিযোগ পায়নি তবে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। গত রমজান মাস থেকে থেমে থেমে স্থানীয় প্রশাসন বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট চালু অব্যাহত রেখেছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।