খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬: পত্রিকা ব্যবসায়ী আবদুল করিম । জেলায় যতজন পত্রিকা ব্যবসায়ী রয়েছেন তাদের মধ্যে তার অবস্থান অন্যতম স্থানে রয়েছে এটা একবাক্যে বলা যায়। তার জীবনটা শুরু হয়েছিল অতি কষ্টের মধ্যে দিয়ে। এমন দিন গেছে যেদিন নুন আনতে যেন পান্তা ফুরাতো। আবদুল্লাপুর হাইস্কুলের বি এস সি শিক্ষক জনাব আঃ হাকিম সাহেবের অনুপ্রেরণায় দৈনিক সংগ্রাম দিয়ে তার হকারী জীবনের যাত্রা শুরু। এখন সে জেলার ১নং হকার বনে গেছে নিঃসন্দেহে। অন্যান্য হকার যা বিক্রি করে সে যেন একাই একশ”। হকারী করতে করতে সে নতুন বাড়ী করেছে এবং জীবন চালিয়ে মেয়েও সুন্দর জায়গায় বিয়েও দিয়েছে।
যেন থেমে নেই আঃ করিম। সাইকেলের টুং টাং শব্দে ছুটে চলে তার দুরন্ত জীবন। তার সাইকেলের আওয়াজ শুনলেই মানুষ বুঝতে পারে করিম এসেছে। ব্যাস, করিম তুলে দেয় পত্রিকা গ্রাহকের হাতে। গাহক আপন মনে ডুবে যায় পত্রিকার ভেতর। অতি চঞ্চল মেজাজের এই হকার মাঝে মাঝে কিছু মিথ্যেও বলে যান গুছিয়ে। কখনো ধরা পড়ে গেলে হেসে তাকে এমনভাবে সমাধান করেন যেন ক্ষিপ্ত হতে গিয়েও থেমে যেতে হয়। এই হলো আব্দুল করিম হকার। জীবনে চলার পথে হাজারো গল্পের সাক্ষী সে। কোনটি ভালো আবার কোনটি মন্দময়। কোন গল্পের সাক্ষী হতে তার ভালো লেগেছে আবার কোনটির হতে ভালো লাগেনি। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে স্ত্রী আর সন্তানই যেন তার অবলন্বন।
খুব ভোরে বাড়ী থেকে বের হওয়া আর পাখির মত সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা যেন তার এখন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। জীবনে চলার পথে অনেক মন্দ ব্যবহার তার কপালে এসে জুটেছে। কিন্তু সবই যেন হাসির ছলে উড়িয়ে দিয়ে বাস্তবতাকেই বরণ করতে কখনোই পিছপা হয়নি করিম। তার মনে একটা শান্তনা, কোটি টাকার মালিক কে কেউ না চিনলেও আঃ করিমকে যেন সবাই চিনে। রাস্তায় বের হলেই করিম ডাক শুনে নিজেকে কখনো রাজাও মনে হয় তার । কারণ, মানুষের এতো ভালোবাসা পেলে রাজা ভেবেও যেন শান্তি তার। কিন্তু কিছুদিন যাবত এ রাজার মনে অশান্তির আগুন যেন দাউ দাউ করে জ্বলে চলেছে। আগুনের এ লেলিহান শিখা তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
একমাত্র সন্তানকে তিল তিল করে পয়সা জমিয়ে মালায়শিয়া পাঠিয়েছিল করিম। আশা ছিল ছেলের আয়ে কিছু একটা করা যাবে। কিন্তু সবই যেন মিথ্যে মরিচিকা। স¤প্রতি সন্তানকে দেখার জন্য সে মালায়শিয়া গিয়েছিল। কিন্তু ছেলের করুণ অবস্থা দেখে তার চোখে কান্না আসে। ছেলে বাবাকে দেখা দেয়াতো দূরের কথা তার জীবন নিয়েই যেন কষ্টের গল্প লেখা। দিনের বেলা ছেলে পালিয়ে কাজ করলেও সন্ধ্যা ৭থেকে সকাল পর্যন্ত গহীন জঙ্গলে গিয়ে রাত কাটায়। জঙ্গল থেকে বের হয় সূর্য উঠার পর। তার সাথে শত শত বাঙালীর এ দশা। সারা রাত কালো বড় বড় বন্য মশার কামড়ে তাদের অবস্থা যেন অতি কস্টময় হয়ে উঠে। ছেলের এ অবস্থা দেখে অঝোরধারায় কাঁদে করিম । টাকা নয় সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে পারলেই যেন বেঁচে যান করিম।