Wed. Jun 18th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬: 85সমূলে নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত বিশেষ সভায় তিনি একথা বলেন।

জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িতদের উদ্দেশ্যে আইজিপি বলেন, আপনারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন। সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে। না হলে পরিণতি হবে ভয়াবহ।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ জঙ্গিদের আস্তানা হতে পারে না। এসময় জঙ্গি দমনে অব্যাহত সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য দেশের জনগণ এবং গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
সভায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (গোপনীয়) মো. মনিরুজ্জামান সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর আজিমপুর, গাজীপুরের জয়দেবপুর, পুরনো জেএমবি এবং রাজধানীর দক্ষিণখানে জঙ্গি অপারেশনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
সভায় বিভিন্ন অভিযানের কথা উল্লেখ করে জানানো হয়, পুলিশ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আজিমপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায়। পুলিশ ওই আস্তানা থেকে ৬ ও ১ বছর বয়সী দুই শিশুকে উদ্ধার করে। তিন নারী জঙ্গিসহ জঙ্গি আবদুল করিমের ছেলেকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। অভিযান শেষে জঙ্গি তানভীর কাদেরী ওরফে জামশেদ ওরফে আবদুল করিমের লাশ পাওয়া যায়। গ্রেফতার এড়াতে তিনি আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা করা হয়।
পুলিশ জঙ্গি আস্তানা থেকে গুলশান হামলার পরিকল্পনাকারী নজরুল ইসলাম ওরফে মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তি (২৫), তামিম আহমেদ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা (৩৫), তামিম আহমেদ চৌধুরীর অপর ঘনিষ্ঠ সহযোগী বাসারুজ্জামান ওরফে চকলেটের স্ত্রী শায়লা আফরিন (২৩) এবং তানভীর কাদেরীর স্ত্রী তাহরিম কাদের ওরফে রাসেলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
পুলিশ গত ৮ অক্টোবর গাজীপুরের পাতারটেকে জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন স্পেট ৮’ অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানকালে পুলিশ এবং জঙ্গিদের মধ্যে ৪/৫ ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলির পর জেএমবির ঢাকা বিভাগের অপারেশন কমান্ডার মো. ফরিদুল ইসলাম ওরফে আকাশ ওরফে প্রভা ওরফে সানোয়ারসহ সাত জেএমবি সদস্য নিহত হয়।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এলআইসি এবং জেলা পুলিশ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন অঞ্চলে পুরনো জেএমবি সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ১৩ জন পুরনো জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করে। এসময় বিপুলসংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
পুরনো জেএমবি সদস্যরা জঙ্গি কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে গাজীপুর, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ এবং আশপাশের এলাকায় ডাকাতি করতো।
কাউন্টার টেরোরিজম এবং ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট গত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার দক্ষিণখানের আশকোনা পূর্বপাড়ায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায়। পুলিশ দুই নারী জঙ্গিকে আটক এবং তিন শিশুকে উদ্ধার করে। অভিযানে দুই জঙ্গি নিহত হয়। এর মধ্যে একজন আত্মঘাতী নারী জঙ্গি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহত্যা করে।
আটককৃত নারী জঙ্গিদের মধ্যে রয়েছে- মেজর (অব.) মুরাদ ওরফে জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী জেবুন্নাহার ইসলাম এবং তাদের সন্তান পলাতক জঙ্গি মুসার স্ত্রী তৃষ্ণা ওরফে তৃষা এবং তাদের পাঁচ বছরের সন্তান।
গত ৮ অক্টোবর গাজীপুরের হাড়িনাল ও ঢাকার আশুলিয়ার জঙ্গি আস্তানায় র‌্যাবের অভিযানে তিন জঙ্গি নিহত ও একজনকে আটক করা হয়। নিহতদের মধ্যে একজন জেএমবির অন্যতম নেতা সারোয়ার জাহান ওরফে নয়ন।
এসব অভিযানে পুলিশ জঙ্গি আস্তানা থেকে পিস্তল, ম্যাগাজিন, বুলেট, ল্যাপটপ, জিহাদি বই, চাপাতি, রামদা ও গ্রেনেড উদ্ধার করে।
জঙ্গিবিরোধী এসব অভিযান পরিচালনাকারী পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এলআইসি, সিটিটিসি ইউনিট, র‌্যাব, ডিএমপির উত্তরা ও লালবাগ ডিভিশন, গাজীপুর ও বগুড়া জেলা পুলিশের সদস্যদের পুরস্কৃত করা হয়।
সভায় ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, সিটিটিসির ডিআইজি মনিরুল ইসলাম, সিটিটিসির অতিরিক্ত ডিআইজি আমিনুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। এ সময় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এবং সিটিটিসি ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।