খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬: দীর্ঘদিন ধরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূল এলাকায় বসবাসরত রোহিঙ্গাদের শিগগিরই ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে তাগাদা দিয়েছে বাংলাদেশ।
ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত মায়ো মিন্ট থানকে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে এ তাগাদা দেওয়া হয় বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দমন-পীড়নের মুখে বাংলাদেশ পানে নতুন করে রোহিঙ্গা-স্রোতের মধ্যে ঢাকার পক্ষ থেকে এই পদক্ষেপ নেওয়া হল।
কয়েক যুগ ধরে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বহন করছে বাংলাদেশ। বারবার বলা সত্ত্বেও মিয়ানমার সরকার তাদের দেশের এই মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ফেরত নিতে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
এই প্রেক্ষাপটে এবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করেই রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে না দেওয়ার পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ সরকার।
তার মধ্েযও গত ৯ অক্টোবর থেকে ৫০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে বলে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (বাইলেটারাল ও কনসুলার) কামরুল আহসান।
মন্ত্রণালয়ে তিনি মিন্ট থানের সঙ্গে কথা বলেন এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে মুসলিম রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকায় ঢাকার উদ্বেগের কথা তাকে জানান।
রাখাইন রাজ্যের তিনটি সীমান্ত পোস্টে গত ৯ অক্টোবর ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ হামলায় সেদেশের নয় সীমান্ত পুলিশের মৃত্যুর পর আশপাশের রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত জেলাগুলোয় দেশটির সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের খবর আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। এর পরপরই বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা বেড়ে যায়।
বৈঠকে বাংলাদেশে থাকা মিয়ানমারের সব নাগরিককে শিগগির ফেরত নেওয়ার জন্য দেশটির রাষ্ট্রদূতের কাছে দাবি জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কামরুল।
এই ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত বলে রাষ্ট্রদূতকে জানানো হয়।
রোহিঙ্গাদের এরকম দেশ ছাড়ার মূল কারণ খুঁজে দেখতেও মিয়ানমার সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান কনসুলার বিষয়ক সচিব কামরুল।
বৈঠকে গত মঙ্গলবার সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার মধ্যে মাছ ধরা নৌকা ‘এফভি জানিভা খালেদা ১’ এ মিয়ানমারের একটি ট্রলার থেকে কোনো কারণ ছাড়াই গুলিবর্ষণের প্রতিবাদ জানানো হয়।
ওই গুলির ঘটনায় চার বাংলাদেশি জেলে গুরুতর আহত হন। ওই ট্রলারে থাকা অস্ত্রধারীরা আহত একজনসহ বাংলাদেশি জেলে ও তাদের মাছধরা নৌকাটি কাছের মিয়ানমারের একটি নৌঘাঁটিতে নিয়ে যায়। সেখানে মিয়ানমারের নৌসদস্যরা জেলেদের কাছে থাকা থাকা জিনিসপত্র রেখে দিয়ে চার ঘণ্টা পর তাদের মুক্তি দেয়।
ভবিষ্যতে মিয়ানমারের নৌসেনারা বাংলাদেশের নির্দোষ জেলেদের ওপর হামলা থেকে যেন বিরত থাকে, সেজন্য এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান সচিব কামরুল।