Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬:  38 কুমিল্লা দক্ষিণাঞ্চলের লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, সদর দক্ষিন ও নাঙ্গলকোট উপজেলাসহ জেলা সদরের অধিকাংশ রাস্তায় দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে লাইসেন্সবিহীন ও চোরাই মোটর সাইকেল। আর এসব মোটর সাইকেলে দুর্ঘটনায় কবলে পড়ে অনেকেই আহত ও নিহত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে জোর তৎপরতা চালালেও ওইসব অবৈধ মোটর সাইকেলের দৌরাত্ব যেন থামছে না।
জানা গেছে, কুমিল্লার লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, সদর দক্ষিন ও নাঙ্গলকোটের অলিগলি এবং সড়ক পথে ব্যাপকহারে টানা-চোরাই মটর সাইকেলের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া, ওইসব যান এলাকায় জনদুর্ভোগ বাড়ার পাশাপাশি সরকারের নিবন্ধন ফি বাবত রাজস্ব খাতে বিপুল অর্থ ফাঁকি দিচ্ছে। এ অঞ্চলের সড়ক পথে অন-টেষ্টসহ হরেক রকম লেখা বিপুল সংখ্যক মোটর সাইকেলের ব্যবহার মারাত্মক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় কোনটি বৈধ কিংবা কোনটি চোরাই বুঝা মুশকিল। আবার প্রায় সড়কের পাশে হোটেল-রেস্তোরা, মার্কেট, ব্যাংক-বীমা কিংবা সরকারী -বেসরকারী অফিসের সামনে এমনকি অলি-গলিতে মোটর সাইকেল পার্কিং করে রাখায় যানজটে জনদুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। এতে প্রায় সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে বৈধ মালিক ও চালকদের।
লাকসাম উপজেলা সদরের বাসিন্দা মোটর সাইকেল মালিক সোহেল আরমান ও আবদুস ছাত্তার জানান, পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন সড়কে শত শত ভারতীয় চোরাই মটর সাইকেল রয়েছে। এগুলোর কোন সরকারি নিবন্ধন নেই। এ সকল গাড়ী বেপরোয়া চলাচলসহ জন দুর্ভোগের সৃষ্টি করছে। বর্তমানে মোটর সাইকেল ব্যবসা জনপ্রিয় হয়ে উঠায় দেশী ও বিদেশী কোম্পানীর অনেক শো-রুম গড়ে উঠেছে শহর এলাকায়। এসব শো-রুম থেকে নগদ কিংবা সহজ কিস্তিতে মোটর সাইকেল কিনছেন ক্রেতারা। শো- রুমের গাড়ীর চাইতে চোরাই বা ছিনতাইকৃত মটর সাইকেল প্রায় অর্ধেক দামে পাওয়া যায় জেলার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন হাটে। অপর এক মালিক মীর হোসেন জানান, ‘মোটর সাইকেলটি এক-দেড় বছর আগে কিনেছি। ড্রাইভিং লাইসেন্স ও সরকারি নিবন্ধন সনদ এখনো নেইনি। কি দরকার! গাড়ী নিরাপদেই চালাচ্ছি, কোন অসুবিধা হচ্ছে না। তিনি জানান, ‘আমার মত অনেকেই নম্বরবিহীন শত শত মটর সাইকেল চালাচ্ছেন এ অঞ্চলের বিভিন্ন সড়ক পথে। এ পর্যন্ত কারো কোন ক্ষতি কিংবা অসুবিধা হয়েছে বলে জানা নেই। হরেক রকম ব্রান্ডের নামী-দামী মটর সাইকেল এখন বিলাসিতার অন্যতম উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেলার দক্ষিনাঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, এসব এলাকায় সংঘটিত অপরাধের সাথে বেশিরভাগই অবৈধ মোটর সাইকেল অন্যতম উপাত্ত হিসাবে কাজ করছে। ছিনতাইকারী, চটি মাস্তান, এমনকি চোর-ডাকাতরা মোটর সাইকেল ব্যবহার করছেন হরহামেশা। আবার এদের অধিকাংশেরই নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। প্রশাসনিকভাবে মাঝ মধ্যে মোবাইল কোটসহ বিশেষ অভিযান চালালেও এদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আবার বিশেষ বিশেষ এলাকায় মাঝে মধ্যে নামকাওয়াস্তে স্থানীয় প্রশাসন মোবাইল কোর্টের অভিযান চালালেও যৎসামান্য মোটর সাইকেল ধরে নামমাত্র জরিমানা (!) করে ছেড়ে দেয়। তাছাড়া, ঘর থেকে রাস্তায় বেরুলেই শত শত মোটর সাইকেল দোকানপাট ও বিপনী বিতান গুলোর সামনে এবং সড়কের ফুটপাতের দু’পাশে সারি সারি মটর সাইকেল পার্কিং করা থাকে। পথচারী চলাফেরায় বেঘাতসহ যানজট লেগেই আছে। শিশু ও বৃদ্ধ বাদে সকলেই মটর সাইকেল চালাচ্ছেন এ অঞ্চলে। যত্রযত্র মোটর সাইকেল ব্যবহার এত বেড়েছে যা বলার উপায় নেই। দুর্ঘটনা ছাড়াও দিন-রাত মোটর সাইকেলের আওয়াজে অনেক শিশু ভয়ে আতংকিতসহ পরিবেশ দূষনের শিকার হচ্ছে। আবার অনেক মোটর সাইকেলের মালিক ও চালক মাদকাসক্ত, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত এবং চোরাই মটর সাইকেল কেনা-বেচার ব্যবসাকে জমজমাট করে তুলেছে। এ অঞ্চলে ৪/৫টি চোরাই সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে। সরকারি কতিপয় কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ তাদের শেল্টারে থাকায় তারা কাউকে পাত্তা দিচ্ছে না। জেলার দক্ষিনাঞ্চলের ৪টি উপজেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, অবৈধ মটর সাইকেলের ব্যাপারে আমরা খুবই চিন্তিত। এ ব্যাপারে উদ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সূত্রটি আরও জানায়, এ ধরনের মোটর সাইকেলের অধিকাংশই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চোরাইকৃত কিংবা ভারত থেকে চোরাই পথে আনা। এসব মোটর সাইকেল চালকদের অধিকাংশই সমাজের বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। দেখা গেছে, অনেক মোটর সাইকেলের নম্বর পে−ট নেই, আবার অনেকের নম্বর প্লেটে ‘অন-টেস্ট’, ‘আবেদিত’, ‘প্রেস’, ‘সংবাদপত্র’, ‘সাংবাদিক’ কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম লিখে বছরের পর বছর সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করলেও প্রশাসন অনেকটা নীরব ভূমিকায়। এতে একদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, অপরদিকে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দিন দিন রাস্তায় নামছে নতুন নতুন মোটর সাইকেল। ফলে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বাড়ছেই। জেলা দক্ষিনাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের অপর একটি সূত্র জানায়, লাকসাম, সদরদক্ষিণ ও নাঙ্গলকোটের পার্শ্ববর্তী চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় চোরাই পথে অহরহ ভারতীয় মোটর সাইকেল আসছে। চোরাই পথে আসা এসব মোটর সাইকেলের দাম কম হওয়ায় চোর-মাস্তান এবং উঠতি বয়সের ছেলেরা এসব মোটর সাইকেল কিনতে ঝুঁকে পড়ছে। অভিযোগ রয়েছে, কয়েকটি সংঘবদ্ধ চোরাই দলের সক্রিয় সদস্যরা নিয়মিত ভারত থেকে চোরাই পথে মোটর সাইকেল এনে এ অঞ্চলে বিক্রি করছে, আবার এসব চোরাই দলের সদস্যরা বিশেষ দিনে এ অঞ্চলের মোটর সাইকেল চুরি করে নিয়ে সীমান্ত পার করে ভারতে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে জেলা দক্ষিনাঞ্চলের পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নম্বরবিহীন ও চোরাই মোটর সাইকেল ধরার জন্য প্রায়ই চেকপোষ্ট বসিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। অবৈধ মোটর সাইকেলের দৌরাত্ম্য রোধে এ অভিযান চলমান রয়েছে। এছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিভিন্ন স্থানে চেক পোস্ট বসিয়ে নম্বর ও লাইসেন্স বিহীন মোটর সাইকেল এবং চালকদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ কার্যক্রম আরো জোরদার করা হবে।