Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২ জানুয়ারি ২০১৭:  60টানা চার বছর বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানির তেলের দামে ছিল নিম্নগতি। সেই ধারা থেকে বের হয়ে বিদায়ী বছরের শেষ দিন থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে।

গত বছরের শেষ দিন গত শুক্রবার পণ্যটির দাম হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। গত কয়েক বছরের সর্বনিম্ন দরের তুলনায় এই বৃদ্ধির হার প্রায় ৪৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছে, জ্বালানি তেলের দাম নতুন বছরে আর কমবে না, বরং বাড়ার এই ধারা অব্যাহত থাকবে। দ্য অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজের (ওপেক) সদস্য দেশগুলোর নেওয়া সিদ্ধান্তের ফলেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। তবে পাঁচ বছর আগে ২০১২ সালে যেখান থেকে জ্বালানি তেলের দাম কমতে শুরু করে সেই অবস্থায় এখনই ফিরছে না—এমন ব্যাখ্যা দিয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলো।
২০১২ সালে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটে (ডাব্লিউটিআই) অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ছিল ১০৫ ডলার। এর পরের বছর ১০৪ ডলার এবং তার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালে দাম ব্যারেলপ্রতি এসে দাঁড়ায় ৯৬ ডলার। তবে ব্যাপক হারে জ্বালানি তেলের দরপতন ঘটে ২০১৫ সালে। এ বছর ডাব্লিউটিআইয়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম গিয়ে ঠেকে ৫১ ডলারে। আর সর্বশেষ বছর ২০১৬ সালে তা গিয়ে দাঁড়ায় ৪৩ ডলারে। এ সময়ের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম ৩৩ ডলারেও নামে।
কিন্তু বিদায়ী বছরের শেষ দিন থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গতকাল রবিবার বাংলাদেশ সময় রাতে ডাব্লিউটিআইয়ে ব্যারেলপ্রতি দাম ছিল ৫৩ দশমিক ৭২ ডলার। আর লন্ডনের ইন্টারকন্টিনেন্টাল এক্সচেঞ্জে (আইসিই) ব্যারেলপ্রতি দাম ছিল ৫৬ দশমিক ৮২ ডলার।
বিশ্বব্যাংক, ব্লুমবার্গের মতো প্রতিষ্ঠান আগামী বছরে জ্বালানি তেলের দাম ৫৫ ডলারের মধ্যে থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে। ২০১৭ সালে ৫৩ থেকে ৫৫ ডলারের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে অন্যান্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা।
যে কারণে বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো-কমানোতে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। সৌদি আরব ১৯৬৫ সালের পর ২০১৫ সালে প্রথম প্রতিদিন ৪০ মিলিয়ন ব্যারেল করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন শুরু করে। অথচ এর আগের ২০ বছর দেশটি গড়ে প্রতিদিন ৩০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উত্তোলন করত। ২০১৫ সালে এসে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদিন প্রায় আট মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন শুরু করে। অথচ এর আগের পাঁচ বছর গড়ে যুক্তরাষ্ট্র সাড়ে তিন মিলিয়ন ব্যারেল করে তেল উত্তোলন করেছে। এ ছাড়া একই সময় রাশিয়া, ভেনিজুয়েলা ও ইরানের মতো জায়ান্ট তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো তাদের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদার চেয়ে তেলের জোগান বেড়ে গিয়ে জ্বালানি তেলের দাম পড়তে থাকে। অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে জ্বালানি তেলের বাজার এতটাই পড়ে যায় যে গত বছরের জুলাই নাগাদ ডাব্লিউটিআইয়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি এসে দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ২ ডলারে। গালফ যুদ্ধের পর গত আড়াই দশকের মধ্যে এটিই জ্বালানি তেলের সর্বনিম্ন দাম।
গত বছরের শেষের দিকে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর প্রভাবশালী জোট ওপেক একটি সিদ্ধান্ত নেয়। আর তা হলো ২০১৬ সালের শেষ দিন থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ওপেকভুক্ত ২৮টি দেশ মিলে সর্বোচ্চ ৩৩ মিলিয়ন ব্যারেল তেল প্রতিদিন তুলবে। এটি কার্যকর হয়েছে গত শনিবার থেকে।
জানা গেছে, গত বছরের শুরুতে উত্তোলন কমানোর উদ্যোগ নেয় ওপেক। তবে সেবার ওপেকভুক্ত দেশগুলো এ মতে সায় দেয়নি। গত ৩০ নভেম্বর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ওপেকের বৈঠকে সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে একটি চুক্তি করে সংগঠনটি। চুক্তি অনুযায়ী, ওপেকভুক্ত দেশগুলো সম্মিলিতভাবে দৈনিক ৩২ দশমিক ৫ মিলিয়ন থেকে ৩৩ মিলিয়ন ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন করবে। গত শনিবার এ চুক্তি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। ওপেকের পাশাপাশি রাশিয়াসহ আরো ১১টি জ্বালানি তেল উত্তোলক দেশ পণ্যটির উত্তোলন কমিয়ে আনতে একটি চুক্তি করেছে। চুক্তিগুলো বাস্তবায়িত হলে শীর্ষ পর্যায়ের উত্তোলক দেশগুলো দৈনিক ১৮ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল কম উত্তোলন করবে। ওপেকভুক্ত ২৮ দেশ ও আরো ১১টি জ্বালানি তেল উত্তোলক দেশের দুই চুক্তির প্রভাবেই ফের চাঙ্গা হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেলের বাজার।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে বাগে আনতে সৌদি আরবকে সঙ্গে নিয়ে চাহিদার বেশি তেল উত্তোলন শুরু করে। এতে রাশিয়ার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ দেশটির অর্থনীতির বড় অংশ গ্যাস ও তেলের ওপর নির্ভরশীল। তবে রাশিয়াকে বাগে আনতে গিয়ে খোদ যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবও চাপের মুখে পড়ে। সে কারণে সৌদি আরব নিজের স্বার্থেই এখন জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমাতে চায়। তবে জ্বালানি তেল উত্তোলন একটি সীমার মধ্যে রাখার ব্যাপারে একমত হয়নি ইরান ও লিবিয়া। সে কারণে জ্বালানি তেলের দাম খুব বেশি বাড়ার সম্ভাবনা কম।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি ওপেক ও ওপেকভুক্ত নয় এমন দেশগুলোর করা চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়, তবে ২০১৭ সালের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫৫ ডলারে গিয়ে উঠতে পারে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০১৮ সাল নাগাদ ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম গিয়ে দাঁড়াতে পারে ৬৫ থেকে ৭০ ডলারে।