Wed. Jun 18th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি ২০১৭:  56রাজধানী গুলশানের ডিসিসি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা, না পরিকল্পিত নাশকতা তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ডা. রিয়াজুল হক।

মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর রিয়াজুল হক এ মন্তব্য করেন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা খতিয়ে দেখার জন্য কমিটি গঠনেরও কথা বলেছেন তিনি।
এ কমিটির মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও কেনো অগ্নিনির্বাপণে দেরী হলো তা খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য সুপারিশ করবে এই কমিটি।
কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, সে বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের কোনো বক্তব্য পাওয়া না গেলেও এ অগ্নিকাণ্ডকে পরিকল্পিত নাশকতা বলে অভিযোগ তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরাও।
ডিসিসি মার্কেটের গুলশান চিকেন হাউজের স্বত্ত্বাধিকারী (দোকান নং-৬৯) ব্যবসায়ী মো. পারভেজ বলেন, রাত দুইটায় আগুনের সূত্রপাত। খবর পেয়েই ছুটে আসি। তবে চোখের সামনে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কিছুই বের করতে পারিনি।
তিনি ফায়ার সার্ভিসের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পানির ট্যাংকে পানি ছিল না। আর যে পানি আনা হয়েছিল তাও মাঠে ছড়িয়ে দেয়া হয়। আগুন নেভাতে তাদের কোনো তৎপরতা ছিল না।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিকল্পিত বলে অভিযোগ তুলে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতা কোনোভাবেই আগুন নেভানোর জন্য যথেষ্ঠ ছিল না। এর উপর দীর্ঘদিন ধরে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের দোকান ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছিল। যে কারণে সব কিছু মিলে এটা পরিকল্পিত ঘটনা ছাড়া আর কিছু নয়।
এই ব্যবসায়ীর সোনাগাঁয়ের পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে ব্যবসা করতেন। ডিসিসি মার্কেটে তার তিনটি দোকান ছিল। এখন তিনি পথে বসে গেছেন।
পরশুদিনও তিনি দোকানে দেড় লাখ টাকার মালামাল তুলেন। তিন দোকানে অন্তত ৩০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। এগুলোর মধ্যে ছিল মুরগি, কসমেটিক্স, ভেজিটেবল, মসলাপাতি। এছাড়া তার তিন দোকানে এক লাখ টাকা ক্যাশ ছিল।
ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
ক্ষতিগ্রস্ত আরেক ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান। তার তিন ভাইয়ের মার্কেটে আটটি দোকান ছিল। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চার ভাই আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন। তাদের দোকানে ছিল ক্রোকারিজ, র‌্যাক্সিন ও ফ্লোরম্যাট।
কান্নারত মাহবুব বলেন, দোকান থেকে কিছু বের করতে পারেননি। চোখের সামনে সব পুড়ে ছাই হয়েছে।
ময়মনসিংহ সদরের দাপুনিয়ায় মাহবুবের বাড়ি। আঠারো বছর আগে তিনি ডিসিসি মার্কেটে ব্যবসায় শুরু করেন। তার দেখাদেখি অন্য ভাইয়েরাও এখানে এসে ব্যবসায় শুরু করেন। আজ সব হারিয়ে তারা নি:স্ব হয়ে গেছেন।
আক্ষেপ নিয়ে মাহবুব জানান, ছোট ভাই ফরহাদ গ্রামের বাড়িতে ছিল। খবর পেয়ে ঢাকায় আসে। পরে খবর পায় দোকানের শোকে তার শ্বশুর প্রাণ হারিয়েছে।
এদিকে তাদের ৯০ বছর বয়সী বাবা হাজী আব্দুল গণিও অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
মাহবুব বলেন, এত বছর ব্যবসা করলাম কোনো দুর্ঘটনা নেই। হঠাৎ করে এমন দুর্ঘটনাই ঘটলো, যা তাদের সব কেড়ে নিল।
অপর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী শেখ মো. শাহিন বলেন, মার্কেটের চারটি কসমেটিক দোকানের সবগুলোই পুড়ে গেছে। আজ আমি নি:স্ব। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া তারা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
মার্কেট কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আবু তালেব বাবুলের দুটি কসমেটিক দোকান ছিল। তার বড় ভাই আবু সাঈদের একটি ও ভায়রা ভাই মিজানেরও দুটি দোকান ছিল ডিসিসি মার্কেটে। সর্বনাশা আগুন সবগুলো দোকানই পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে। প্রতিটি দোকানে ৩-৪ কোটি টাকার মালামাল ছিল। আর দোকানগুলোতে ক্যাশ ছিল প্রায় ৫-১০ লাখ টাকা। কিছুই বের করা সম্ভব হয়নি।
আবু তালেব বলেন, রাত দুইটায় দারোয়ানের মাধ্যমে খবর পেয়ে মার্কেটের সামনে আসি। উত্তর বাড্ডার বাসা থেকে এসে দেখি আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ঠিকই আসে। তবে তারা চারটা পর্যন্ত কোনো পানি দেয়নি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এটি পরিকল্পিত আগুন। আমাদের উচ্ছেদের জন্যই পরিকল্পিতভাবে এ আগুন দেয়া হয়েছে। কারণ মেয়র এবং সিটি কর্পোরেশনের অন্যান্য লোকজন দীর্ঘদিন ধরে মার্কেট ছেড়ে দেয়ার জন্য আমাদের চাপ দিচ্ছিল। সোমবারও সিটি কর্পোরেশনের লোকজন এসে দোকান গুণে লিস্ট করে গেছে। এসময় তারা দোকান সরিয়ে নেয়ার জন্যও ব্যবসায়ীদের চাপ দেয় বলে জানান তিনি।
আবু তালেব বলেন, দোকানের দলিল ও অন্যান্য কাগজপত্র দোকানে ছিল। পাঁচশ টাকা নিয়ে বের হয়েছিলাম। এই টাকা শেষ হয়ে গেলে আমি ফকির হয়ে যাবো।
ব্যবসায়ীরা জানান, মেয়র খোকার আমলে মার্কেটের ৭.৭ বিঘা জমি মেট্রো গ্রুপকে দেয়া হয় বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য। কিন্তু কোনো রকম ক্ষতিপূরণ না দিয়ে উঠে যাওয়ার নির্দেশনার কারণে ব্যবসায়ীরা দোকান ছাড়তে রাজি হয়নি। আর এসব কারণেই আগুনকে নিছক দুর্ঘটনা বলতে নারাজ ব্যবসায়ীরা।
তবে সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এ ঘটনাকে নাশকতা নয়, দুর্ঘটনা বলে মন্তব্য করেন মেয়র আনিসুল হক।