খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি ২০১৭: লন্ডনের চারিং ক্রস স্টেশনের লর্না টাকারের কাহিনী সত্যিই অদ্ভুত। তার জীবনের সবচেয়ে বড় এবং অনাকাক্সিক্ষত সফলতা আসে সবচেয়ে বাজে সময়টাতে।
ছিলেন ওই স্টেশনের স্রেফ এক ভিখারিনী। মাদকের অর্থ জোগাতে এককথায় ভিক্ষা করতেন। বেঁচে থাকার জন্য মানুষের কাছে অর্থ সহায়তা চাইতেন। বয়স তখন ১৭। আর সেখান থেকেই হয়ে উঠলেন সফল এক মডেল।
এখন তার বয়স তিরিশের কোঠায়। তিন সন্তানের জননী তিনি। গত ৭ বছর ধরে সব ধরনের মাদক থেকে দূরে রয়েছেন। ইতিমধ্যে বিশ্বের বড় বড় কিছু মডেল কম্পানির সঙ্গে কাজ করেছেন। পাশাপাশি তিনি পেশাদার ডকুমেন্টরি নির্মাতাও হয়ে উঠেছেন।
এখন বড় মাপের মডেল তিনি। জীবনটা অন্যরকম হয়ে গেছে। তাই বলে পুরনো জীবনের কথা ভুলে যানিন। সেই ১৫ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন। এই একটি ভুল সিদ্ধান্ত তাকে রাস্তায় নিয়ে ফেলে দেয়। হেরোইনে আসক্ত হয়ে যান।
সফল ও অর্থশালী হওয়ার পর তিনি ‘সেন্টারপয়েন্টস ইয়ং অ্যান্ড হোমলেস হেলপলাইন আপিল’ এর মাধ্যমে একটি সেবামূলক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি যেমন ছিলেন, ঠিক তেমন মানুষের সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছেন।
নিজেই বললেন, বাড়িছাড়া মানুষগুলোর জীবন চালানো খুব কঠিন ব্যাপার। অন্তত আমি সেই বিষয়টি বুঝি। আমি চাই অন্য মানুষরা এইসব গৃহহীন অসহায় মানুষের জীবনটা সহানুভূতির সঙ্গে অনুভব করুক। এই মানুষগুলো একটা সময় পুরোপুরি অন্ধকার দুনিয়ায় কাটিয়ে দেন। শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায় ভোগেন। এক চরমভাবাপন্ন পরিবেশে তাদের জীবন কাটে। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনাটা অন্যদেরই দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
বাবা-মা আর চার ভাই-বোন মিলে জীবনটা কাটছিল লর্নার। তাদের পারিবারিক জটিলতা ছিল, কিন্তু সেখানে ভালোবাসার অভাব ছিল না। কিন্তু টিনএজার লর্নার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় পরিবারের সঙ্গে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান লর্না। পরিবারের এক বন্ধুর বাসায় ওঠেন। কিন্তু কিছু দিন বাদেই রাস্তার মানুষ হয়ে যান।
স্মৃতিচারণ করলেন লর্না, পালিয়ে যাওয়ার পর গ্রীষ্মের শেষদিকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ি আমরা। এমন হলে আপনি বুঝতে পারবেন যে, আপনার মাদক ছাড়া আর কিছুই দরকার নেই। আর কাউকে দরকার নেই। ভেতরে ভেতরে আপনি ভালোবাসা খুঁজবেন, কিন্তু কোথাও তা মিলবে না। আমি চারিং ক্রস টিউব স্টেশনে ভিক্ষা করু শুরু করি। সেখানেই একটি মডেলিং এজেন্সি আমাকে খুঁজে পায়। যখন তারা আমার সঙ্গে কথা বলে, তখন ভালোই লেগেছিল। বিষয়টি স্বপ্নের মতো লেগেছিল। তখনই প্রথম মনে হয়েছিল যে আমি কারো না কারো চোখে সুন্দর। কিন্তু আমার যা অবস্থা ছিল তার সঙ্গে নতুন জীবন মানানসই ছিল না। কিন্তু বিষয়টি গভীরভাবে আমার মনে গেঁথে যায়।
ষোল বছরে পা দেওয়ার পর লর্না অনুভব করলেন, এভানে আর জীবন কাটানো যায় না। মাদক দিয়ে আর জীবন চলছে না। জীবনের চরম অবস্থা যাচ্ছে তার। আর তখনই ঘুরে দাঁড়ানোর চিন্তা করলেন।
সৌভাগ্যক্রমে সেই সময় তার পরিবার ও বন্ধুরা তাকে খুঁজে পান। তাদের সহায়তার জীবনটা বদলে ফেলার চেষ্টা করেন। মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে যান এবং আর্ট স্কুলে ভর্তি হন।
এর এক বছর বাদে আবারো একটি মডেলিং এজেন্সি তাকে প্রস্তাব দেয়। এ সুযোগ আর ছেড়ে দেওয়ার নয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই লর্না মডেলিং শুটের জন্য লন্ডন, প্যারিস এবং মিলানে পাড়ি জমান। তার ক্যারিয়ারে ফটোগ্রাফার হিসাবে পেয়েছিলেন স্টিভেন ক্লেইন এবং র্যানকিনের মতো তারকা ফটোগ্রাফারের। লেভিস ক্যাম্পেইনের মডেলিং করছিলেন তখন।
তখন আমি এমন এক দুনিয়ায় পা রাখলাম যেখানে কোনোদিন আসার চিন্তাও করিনি। দ্রুত পরিবর্তন আসলো আমার চিন্তা ও অভ্যাসে।
এখন লর্না বাস করেন ইস্ট সাসেক্সে লন্ডন এবং লিউইসের মাঝামাঝি। দুটো ফিচার-লেন্থ ডকুমেন্টরি পরিচালনা করেছেন তিনি। স্থানীয় নারীদের নির্যাতন এবং তাদের মাদকাসক্তি বিষয়ে কাজ করেছেন।
সবাই এক কথা স্বীকার করেন যে, লর্না জীবনের এমন এক অবস্থা থেকে যেখানে উঠে এসেছেন তা গল্পের মতোই শোনায়।
কিন্তু লর্নার মতে, যেকোনো মানুষ তার জীবনটাকে বদলে দিতে পারে। আমি বিশ্বাস করি না যে, একটা চিতা কখনো তার লক্ষ্য বদলায় না। কারণ আপনি তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন যে বদলেছে।
সূত্র : ইনডিপেনডেন্ট