খোলা বাজার২৪,শনিবার, ৭ জানুয়ারি ২০১৭: নাটোরের চলনবিলের শুঁটকি মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। চলতি বছর প্রায় ৫০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হবে যার বাজার মূল্য কোটি টাকারও বেশী। স্থানীয় বাজার সৃষ্টি, শুঁটকি সংরক্ষণাগার তৈরী আর সেই সাথে সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক পদ্ধতিতে এই শুঁটকি তৈরী করতে পারলে তা বিদেশে রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে হবে বলে মৎস্য কর্মকর্তাদের অভিমত।
জেলা মৎস অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নাটোর সদর সহ সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম উপজেলা জুড়ে রয়েছে বিস্তীর্ন চলনবিল। মৎস্য সম্পদে ভরপুর চলনবিল এলাকার মৎস্যজীবীদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে শুঁটকি তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করে। চলনবিলের মাছ স্বাদ যুক্ত হওয়ায় এ মাছের শুঁটকির চাহিদাও বেশী। বছরের ৬ মাস টেংরা, পুটি, চান্দা, চিংড়ী, গুচিসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ শুকিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে তারা।
সরেজমিনে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের পাশে সিংড়া উপজেলার নিঙ্গুইন এলাকার শুঁটকি শুকানোর চাতালে গিয়ে দেখা যায়, দলবেধে নারী ও পুরুষ শ্রমিকেরা শুঁটকি শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। রোদের মাঝে শুঁটকি ওলট-পালট করে দিচ্ছে কেউ কেউ। তাদের মধ্যে কেউ আবার ছোট-বড়, ভাল-মন্দ শুঁটকি আলাদা করতে দম ফেলার সময় পাচ্ছে না। মহাসড়কের পাশেই বসে গেছে অস্থায়ী বাজার। গাড়ি থামিয়ে দামদর করে বিলের বিভিন্ন ধরনের শুঁটকি কিনছেন অনেকেই। কথা হয় শুঁটকি ব্যবসায়ী জয়নাল মিয়ার সাথে। তিনি জানান, চলনবিলের মাছ প্রক্রিয়াজাত করণের মাধ্যমে শুঁটকি তৈরী করে সৈয়দপুর, রংপুর, তিস্তার আড়তদারের কাছে পৌঁছে দেন। এখনো চলনবিল এলাকায় বাজার সৃষ্টি হয়নি। এখান থেকে শুঁটকি মাছ জেলার বাহিরের মোকামগুলোতে নিয়ে যেতে মৎস্যজীবীদের খরচ অনেক বেশী পড়ে। সে কারণে তাদের লাভের পরিমান কমে যায়। আড়ৎদার ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা নাটোরে এসে শুঁটকি কিনে নিয়ে গেলে তাদের লাভের পরিমান বেশী হত বলে জানান তিনি।
আরেক ব্যবসায়ী জমির উদ্দিন জানান, মান ভেদে প্রতিকেজি শুঁটকি দুইশ’ থেকে তিনশ’ টাকায় বিক্রি হয়। তবে এবছর মাছের পরিমাণ কম। চলনবিলে অবৈধ বাধাই জালের ব্যবহার বেশী। এ কারণে বিলে মাছ কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে চলনবিলের মাছ আর শুঁটকির ব্যবসায়ে ধ্বস নামবে। তাই বাধাই জালের ব্যবহার বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম জানান, চলনবিলের শুঁটকি কোন রকম রাসায়নিকের প্রয়োগ ছাড়াই প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এটা অত্যন্ত সুস্বাধু হওয়ায় সারা দেশে এর চাহিদা আছে। তবে চলনবিল অঞ্চলে একটা শুঁটকি সংরক্ষণাগার খুবই দরকার।
ট্রাক থামিয়ে শুঁটকি কিনতে আসা সবুজ মন্ডল জানান, জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন জেলায় ছুটাছুটি করতে হয়। নাটোরের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি চলনবিলের শুটকি কিনে নিয়ে যান। দাম সাশ্রয় ও মান ভালো হওয়ায় তিনি বরাবরাই এখানকার শুটকি কিনতে আগ্রহী।
শুঁটকি আড়তে কাজ করে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেকের। তার মধ্যে নারী শ্রমিকের সংখ্যই বেশী। বছরের ছয় মাস কর্মসংস্থান হলেও এখানে নারী শ্রমিকদের খুবই কম মজুরী দেওয়া হয়। পুরুষ শ্রমিকদের দিনহাজিরা ৩০০ টাকা হলেও মাত্র ১২০ টাকা দিন হাজিরায় কাজ করেন রাজিয়া বেওয়া, আম্বিয়া বেগমের মতো অনেকেই।
আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা গেলে চলনবিলের শুঁটকি রপ্তানি করে বৈদাশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে উল্লেখ করে জেলা মৎস কর্মকর্তা আতাউর রহমান খাঁন জানান, চলনবিলে প্রচুর মাছ উৎপাদন হয়। এখান থেকে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ কোন রকম ক্যামিকেলের প্রয়োগ ছাড়াই শুঁটকি করা হয়। চলনবিল অঞ্চলে এককোটি টাকার বেশী মূল্যের শুঁটকি উৎপাদন হয়। তবে স্থানীয়ভাবে বাজার সৃষ্টি ও সেই সাথে একটা সংরক্ষণার থাকলে ব্যবসায়ীরা আরও লাভবান হতো। স্থানীয় মৎস অধিদপ্তর শুঁটকির বাজার তৈরী এবং সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে সংরক্ষণাগার তৈরীর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।