Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, রবিবার, ৮ জানুয়ারি ২০১৭: 35গুনগত মানের দিক থেকে জামালপুরের ছনকান্দার সিলিকা বালুর দেশজুড়ে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। নির্মান সামগ্রী ছাড়াও এ বালুতে থাকা সিলিকন কাঁচশিল্পের কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহার উপযোগী বলে জানা গেছে। তাই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বালু ব্যবসায়ীরা এসে প্রতিনিয়তই ভীড় করছে বালু ক্রয়ের জন্য। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা তাদের ফায়দা লুটছে।

জামালপুর শহরের ফেরিঘাট থেকে জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে পিয়ারপুর, সরিষাবাড়ি, তারাকান্দি, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদীর ৫৫ টি পয়েন্টে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বালু মহাল দখল করে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। তাদের নেই কোন বালু উত্তোলনের লাইসেন্স বা অনুমোদন। তবে প্রশাসন বলছে এ ব্যাপারে আমরা অবগত। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও দাবী করেন জেলা প্রশাসন।
জামালপুর পৌর এলাকার রশিদপুর, সদর উপজেলা ফেরিঘাট, নাওভাঙ্গা, ছনকান্দা, চরযথার্থপুর, নান্দিনা, নুরুন্দি, পিয়ারপুর পর্যন্ত ব্রক্ষ্মপুত্র নদের প্রায় ২২ কিলোমিটার এলাকায় চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন। এছাড়াও সরিষাবাড়ি, তারাকান্দি, পিংনা, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহসহ বিভিন্ন স্থানে। যেন দেখার কেউ নেই।
স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল সিন্ডিকেট ড্রেজার দিয়ে নদী পাড় কেটে ফসলী জমি থেকে যত্রতত্র বালু উত্তোলন করলেও নির্বিকার রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। যত্রতত্র এই বালু উত্তোলনের ফলে ব্রহ্মপুত্র সেতুসহ নদীর তীরবর্তী বিস্তির্ণ এলাকার ফসলী জমি, ব্রিজ,নদী রক্ষাবাঁধ ভাঙ্গনের কবলে পড়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
জামালপুর শহরের ফেরীঘাট থেকে পিয়ারপুর পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ব্রহ্মপুত্র নদে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন। এতে করে সরকার প্রতি বছরে হারাচ্ছে প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব। বালু হচ্ছে সরকারী সম্পদ, এ সম্পদ আহরণ করতে হলে অবশ্যই অনুমোদন প্রয়োজন। কেউ তোয়াক্কা করছে না আইনের।
ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা ব্রহ্মপুত্র সেতুর নীচ থেকে বালু উত্তোলন ছাড়াও ট্যানারী বালুঘাটসহ নদীর বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে এবং নদীর পাড় কেটে ফসলী জমি থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করে আসছে। জানা যায়, বালু মহাল ইজারা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা থাকায় প্রভাবশালীদের বেপয়োরা এই বালু উত্তোলনে বাঁধা দিতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন। ফলে একদিকে সরকার বছরে কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অপরদিকে পরিবেশেরও বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের একটি সুত্র জানিয়েছে, ২০০১ সনে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে কয়েক জন প্রভাবশালী নেতা খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয় থেকে ২৩টি লাইসেন্স নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বালু উত্তোলন শুরু করে। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বালু মহালগুলো জেলা প্রশাসকের হাতে ন্যাস্ত করলে তখন ইজারা দেয়ার উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। কিন্তু পূর্বের লাইসেন্সধারীরা হাইকোর্টে মামলা করলে বন্ধ হয়ে যায় ইজারা প্রদানের প্রক্রিয়া। বর্তমানে মামলাগুলো বিচারাধীন রয়েছে। বিএনপি নেতাদের নামে নেয়া ২৩টি লাইসেন্সের মধ্যে ১টি লাইসেন্স এখন আ.লীগ নেতাদের হাতে। এ লাইসেন্স দেখিয়েই বালুমহালগুলো ভোগ করছেন তারা। এমতাবস্থায় সচেতন মহলের দাবী, যাতে বালু খেকুরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান।
এ সিন্ডিকেটের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা স্থানীয় নেতা ও ঠিকাদারদের অনুমতি নিয়ে বালু উত্তোলন করছি। তাদের নাম ঠিকানা বলা যাবে না। বললে সমস্যা আছে।
জেলা প্রশাসক শাহাবুদ্দিন খান বলেন, এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বালু উত্তোলনের মেশিন জব্দ এবং জরিমানা করা হয়েছে। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।