খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারি ২০১৭: ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের পর আরো কিছু পরিবর্তন আসছে। আরো কয়েকটি ব্যাংকেও এই পরিবর্তন আসন্ন। ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যাংকের ‘মালিকানায়’ পরিবর্তন হলেও সেগুলো খুব আলোচিত হয়নি। ‘এক নম্বর ব্যাংক’ হওয়ায় ইসলামী ব্যাংকের ঘটনা আলোচনার জন্ম দেয়।
জামায়াতে ইসলামীর কবলমুক্ত করতে নেওয়া সরকারের শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হয়। পরিচালনা পর্ষদকেও ঢেলে সাজানো হয়দ; যা নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত বরাবরই ‘দুষ্টচক্রে’র কবলে পড়ায় এর প্রত্যাশিত বিকাশ ঘটেনি। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মালিকানা রাজনৈতিক পরিচয়ে এবং সরকারি ব্যাংকগুলোতেও রাজনৈতিক আধিপত্যে ঋণ প্রদানের সংস্কৃতি বিদ্যমান রয়েছে। ব্যাংক সংস্কার কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করেও ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় গুণগত পরিবর্তন আনা যায়নি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অতিমাত্রায় খবরদারি কিংবা নীতি গ্রহণ জটিলতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাংকিং খাত। ইমেজ সংকটেও দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করতে হয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ব্যাংকিং খাতকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি রয়েই গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। পরিচালনায়ও নানা সমস্যা রয়েছে। সরকারি ব্যাংকে সরকার মনোনীত পরিচালকমণ্ডলীর আদেশ-অনুরোধেই কাজ করতে হয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষও। একই ভাবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোও কোনো না কোনো গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি। অথচ এ সব ব্যাংকের বড় ভূমিকায় রয়েছেন আমানতকারীরা। নামমাত্র শেয়ারের মালিকানা নিয়ে পরিচালনায় গিয়ে কোনো কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ দেখাই যেন বড় হয়ে ওঠে পরিচালনা পর্ষদের।
সূত্রমতে, ব্যাংকিং সেক্টরের এই বিশৃঙ্খলা রোধে নেওয়া নানা পদক্ষেপ খুব বেশি কার্যকর হয়নি বরং নামে-বেনামে একই গ্রুপ একাধিক ব্যাংকের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেছে। এ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানকে কুক্ষিগত করার পাঁয়তারা রোধের পদক্ষেপ হিসেবে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। একই ভাবে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকেও অনুরূপ পরিবর্তন আনা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
আরো কয়েকটি ব্যাংকও হাতবদল হওয়ার গুজব রয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংক পুরোপুরি নেওয়ার চেয়ে কিছু শেয়ার নিয়ে পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে বলে সূত্র জানায়। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের প্রথম দিকের ব্যাংকও রয়েছে। কোনো কোনো বেসরকারি ব্যাংক অন্তত শেয়ার দিয়ে দফারফা করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও ব্যাংকিং খাতে গুজব রয়েছে।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ব্যাংকিং খাতের মতো স্পর্শকাতর খাতে এ ধরনের পরিবর্তন যাতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, এখনো শিল্পায়নের বড় উৎস হিসাবে ব্যাংকিং খাতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।