Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারি ২০১৭:চিকিৎসক সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল চিকিৎসক সংকট আর অপ্রতুল ওষুধ সরবরাহের কারণে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল। প্রয়োজনীয় জনবল আর অবকাঠামোগত সংকীর্ণতায় অন্যতম মৌলিক চাহিদা কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার কয়েক লাখ সাধারণ মানুষ। চিকিৎসা না পেয়ে অনেককেই যেতে হচ্ছে রংপুর, দিনাজপুর সহ বিভিন্ন স্থানে। অপরদিকে প্রয়োজনীয় টেকনিশিয়ান আর চিকিৎসকের অভাবে অকেজো হয়ে পড়ে আছে কোটি টাকা দামের এক্স-রে ও আল্ট্রাস্নোগ্রাম মেশিন গুলো।
ষাটের দশকে পঞ্চগড় মহুকুমায় ক্ষুদ্র পরিসরে নির্মিত পঞ্চগড় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ১৯৮৪ সালে জেলা ঘোষণার পর ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়ে পরিণত হয় পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে।
২০০৫ সালে এই হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়ে পরিণত হয় আধুনিক সদর হাসপাতালে। এরপর থেকেই শুরু হওয়া চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় জনবল সংকট আজও ঘোচেনি।
দেশের সর্ব উত্তরের এই জেলা শহরে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ কম হওয়ায় সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা এখানে এসে বেশিদিন থাকতে চায়না।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড়ে পোষ্টিংকে চিকিৎসকরা পানিশমেন্ট বদলি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বাধ্য হয়ে অনেক চিকিৎসক যোগদান করলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যে তদবির করে অন্যত্র চলে যান।
চলতি বছরে চর্ম ও যৌন বিভাগের একজন সিনিয়র কনসালটেন্টকে পঞ্চগড়ে পোষ্টিং দেওয়ায় তিনি একেবারেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে স্থাপিত এই হাসপাতালটিতে প্রতিদিন বহিঃবিভাগে প্রায় ৩ থেকে ৪ শত জন রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। আর আন্তঃবিভাগে ভর্তি থাকেন প্রায় ১৪০ থেকে ১৫০ জন। ১০০ শয্যা হওয়ায় প্রায় সব সময়ই ৪০ থেকে ৫০ জন রোগীকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে হয়।
১০০ শয্যার এই আধুনিক সদর হাসপাতালটিতে ৩৬ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও এর বিপরীতে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ১০ জন। সিনিয়র কনসালটেন্ট ৭ টি পদের মধ্যে খালি রয়েছে ৪টি। জুনিয়র কনসালটেন্ট ১০ টি পদের মধ্যে খালি রয়েছে ৬ টি । প্যাথলজিষ্ট ও রেডিওলজিষ্ট এর ১টি করে পদের দুটিই খালি। মেডিক্যাল অফিসার ও সহকারি সার্জনের ১৫ টি পদের মধ্যে খালি রয়েছে ১১টি। এছাড়া হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স সহ দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তার ১৫টি, তৃতীয় শ্রেণীর ১২টি এবং চতুর্থ শ্রেণীর ২টি পদ এখনো শুন্য রয়েছে।
হাসপাতলের তিনটি এক্স-রে মেশিন থাকলেও প্রায় ৬ থেকে ৭ বছর ধরে নষ্ট হয়ে আছে দুটি এক্স-রে মেশিন। দক্ষ টেকনিশিয়ান আর আল্ট্রাসনোগ্রাম চিকিৎসকের অভাবে ষ্টোর রুমে প্যাকেট বন্দি থাকতে থাকতে অবশেষে নষ্ট হতে বসেছে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটিও। এতে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা প্রায় সকলকেই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বে-সরকারি ডায়াগনেস্টিক সেন্টারগুলো থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে।
এদিকে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে পঞ্চগড় জেলার ৩৬টি ছিটমহল বাংলাদেশ ভূখন্ডে অধিভুক্ত হওয়া জেলায় যুক্ত হয়েছে প্রায় ২০ হাজার নতুন বাংলাদেশী। বৃহত এই জনগোষ্ঠি পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নির্ভর হলেও তাদের জন্য বাড়েনি কোন অবকাঠামো বা শয্যা। এতে স্বল্প জনবল নিয়ে জেলার এই বৃহত জনগোষ্ঠিকে চিকিৎসা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
এদিকে সময়মত ডাক্তার না আসা, বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কেনা, হাসপাতালের অপরিচ্ছন্ন টয়লেটে দূর্গন্ধ ও নার্সদের দূর্ব্যবহার সহ নানান অভিযোগ সাধারণ রোগী ও তাদের স্বজনদের। এছড়াও বেশিরভাগ চিকিৎসকই বাইরের ক্লিনিকগুলোতে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে ব্যস্ত থাকেন এমনও অভিযোগ অনেকের।
জেলার সদর উপজেলার শেখেরহাট এলাকার ইসমাইল হোসেন বলেন, “কয়েকদিন হলো আমার মেয়েকে পেটের ব্যাথার কারণে ভর্তি করিয়েছি। এখানে আসার পর একটি স্যালাইন দিয়েছে পরবর্তীতে ডাক্তারের লিখে দেওয়া বিভিন্ন ট্যাবলেট, ইনজেকশন আর স্যালাইন বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। আমি ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাই এতো ঔষধ তো আর কিনতে পারিনা।”
মাগুরমারী এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, “মাথায় আঘাত পেয়ে আমার স্ত্রী ভর্তি হয়েছিল। এখন এখানে ভালো ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা ভালো হচ্ছে না এজন্য তাকে রংপুর মেডিক্যালে নিয়ে যেতে হচ্ছে।”
নার্সদের দূর্ব্যাহারের ব্যপারে জানতে চাইলে সিনিয়র স্টাফ নার্স শেফালী রানী রায় বলেন, “সারাদিনে যদি ৫০ জন রোগী আসেন তাহলে তাদের সাথে আরো ৫০ জন লোক আসেন। বিভিন্ন সময়ে নতুন লোকজনের সাথে কথাবলার সময় হয়ত অনেকেই শুনতে পাননা বা ব্যস্ততার কারণে তাড়াহুড়ো করে বলতে গিয়ে অনেকেই ভুল বুঝে বলেন নার্সদের ব্যবহার খারাপ। আসলে বিষয়টি সত্য নয়।”
পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা. পীতাম্বর রায় বলেন, “৩৬ জন চিকিৎসকের জায়গায় মাত্র ১০ জন থাকায় চিকিৎসা সেবা দিতে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। তার পরও আমরা দিন রাত পরিশ্রম করে রোগীদের যথাযথ সেবা প্রদানের চেষ্টা করছি। ঔষধ সংকটের ব্যাপরে তিনি বলেন সরকার কর্তৃক সরবরাহ কৃত যে সকল ওষুধ আমরা পাই তার পুরোটাই রোগীদে মাঝে দেওয়া হয়। তবে পর্যাপ্ত চিকিৎসকের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।”
পঞ্চগড় জেলার মানুষের একমাত্র চিকিৎসা সেবার আশ্রয়স্থল এই হাসপাতলটিতে আরো চিকিৎসক ও পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ করে এই এলাকার মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা পূরনে সরকারের সু-দৃষ্টি থাকবে এমনটিই প্রত্যাশা জেলাবাসীর।