খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি ২০১৭: আপামর ক্রিকেট বিশ্বকে একেবারে চমকে দিয়ে টি২০ এবং ওয়ান ডে অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। পরবর্তী বিশ্বকাপের জন্য নতুন দল তৈরি করতে সময় দিলেন নতুন অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে। অধিনায়কত্ব ছাড়ার এই সিদ্ধান্তে অবাক করলেও মাঠে কিন্তু বারবার তার সিদ্ধান্ত প্রতিপক্ষকে অবাক করে দিয়েছে। আর সেই সব ম্যাচ উইনিং সিদ্ধান্ত ঠান্ডা মাথায় নিয়েই তিনি ক্যাপ্টেন কুল। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ধোনির এমন কিছু সিদ্ধান্ত যা হয়ত তিনি ছাড়া অন্য কেউ নেওয়ার কথা ভাবতেনও না। যে সিদ্ধান্তগুলো তাকে বানিয়েছে ক্যাপ্টেন কুল।
# টি২০-তে যে কোনও দলের যখন লক্ষ্য থাকে প্রথম বল থেকে আক্রমণে যাওয়ার, ২০০৭ সালের টি২০ বিশ্বকাপে দলকে ঠিক উল্টোটা করতে বলেছিলেন ধোনি। ওপেনারদের বলেছিলেন, প্রথম ছয় ওভার কোনও ভাবেই উইকেট না হারাতে। তাতে প্রথম দিকে রান কম উঠলেও শেষ দিকে উইকেট থাকায় প্রতি ম্যাচেই ভাল স্কোর করতে পেরেছিল ভারত।
# ২০০৭ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লিগ ম্যাচে বোল আউটের সময় পাকিস্তান যেখানে দলের প্রধান তিন পেসারকে উইকেটে হিট করার দায়িত্ব দিয়েছিল, ধোনি সেখানে বেছেছিলেন শেবাগ, হরভজন এবং রবিন উথাপ্পাকে। যে উথাপ্পাকে বল হাতে কেরিয়ারে প্রায় দেখাই যায়নি। সবাইকে চমকে দিয়ে ভারতের তিন জনই উইকেটে বল লাগায়। সেখানে ব্যর্থ হন ইয়াসির আরাফাত, উমর গুলরা।
# টি২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে জয়ের জন্য শেষ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১৩ রানের। ফর্মে থাকা হরভজন সিংহের হাতে বল না দিয়ে শেষ ওভারে পাঠান যোগিন্দর শর্মাকে। আর তাতেই বাজিমাত।
# ইয়র্কারেও যে ছয় মারা যায়, ধোনির হেলিকপ্টার শটের আগে তা অজানা ছিল ক্রিকেট বিশ্বের কাছে। প্রথম দিকে এই শট নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সমালোচনা করলেও পরে এটাই তার ট্রেডমার্ক শট হয়ে যায়। বোলারদের সেরা অস্ত্রকে ভোঁতা করার এই নতুন অস্ত্রকে কুর্নিশ জানায় ক্রিকেটবিশ্ব।
# ২০০৮ সালের নাগপুর টেস্টে প্রথম ইনিংসে ভারতের ৪৪১ রানের জবাবে অস্ট্রেলিয়া তখন ১৮৯/২। ধোনি তার বোলারদের নির্দেশ দেন অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে বল করতে। এই নেগেটিভ স্ট্র্যাটেজিতে তখন প্রচুর সমালোচনা হয়। কিন্তু পরে এই স্ট্র্যাটেজিই কার্যকর হয়। ম্যাচও জেতে ভারত।
# ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে শ্রীলঙ্কার ২৭৪ তাড়া করতে নেমে ভারত তখন ১১৪/৩। ফর্মে থাকা যুবরাজকে না নামিয়ে পাঁচ নম্বরে নামেন ধোনি নিজেই। সিদ্ধান্ত নেমে নিতে পারেননি অনেক বিশেষজ্ঞই। কিন্তু সেই ধোনির ইনিংসে ভর করেই বিশ্বকাপ জেতে ভারত।
# ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতের ১২৯ রানের সামনে ইংল্যান্ডের তখন প্রয়োজন ১৮ বলে ২৮ রানের। হাতে ছয় উইকেট। এই অবস্থায় ধোনি বল করতে পাঠান ইশান্ত শর্মাকে। যে ইশান্ত আগের ৩ ওভারে ২৮ রান দিয়েছেন। চতুর্থ ওভারে ইশান্ত দুই উইকেট নিয়ে ভারতকে ম্যাচ জেতান।
# ২০০৭ থেকে ২০১২ পর্যন্ত মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নামা রোহিত শর্মার ব্যাটিং গড় ছিল ৩০.৪, স্ট্রাইক রেট ৭৮। ধোনিই তাকে ওপেনার হিসাবে নামান। পরের ৬২ ম্যাচে ওপেনার রোহিতের গড় ৫৬, স্ট্রাইক রেট প্রায় ৯০। ওয়ান ডেতে দু’টি দ্বিশতরানও করেন তিনি।
# ২০১৪ সালে লর্ডস টেস্টে ৩১৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ড তখন ১৫৬/৪। নতুন বল নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাউন্টার অ্যাটাক শুরু করেন ব্রিটিশ ব্যাটসম্যানরা। প্রথম চার বলে তিন বাউন্ডারির পর ধোনি ইশান্তকে বাউন্সার দিতে বলেন। সেই বাউন্সার অস্ত্রেই লর্ডসে ৯৫ রানে টেস্ট জেতে ভারত।
# ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচে শেষ বলে বাংলাদেশের জেতার জন্য তখন প্রয়োজন দু’রানের। বোলারকে শর্ট বল করতে বলে উইকেটের পিছনে এক হাতের গ্লাভস খুলে ফেলেন ধোনি। যেন তিনি জানতেন শর্ট বল ফস্কাবেন ব্যাটসম্যান আর তিনি রান আউট করবেন। বাস্তবেও হল তাই। হারা ম্যাচ জিতল ভারত।