Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, রবিবার, ১৫ জানুয়ারি ২০১৭: 3মূলত জামাই মেলা হলেও সবাই এটাকে বলে মাছের মেলা বলে থাকেন। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল গ্রামের মাছের মেলার কথা জানা নেই হয়ত সবার। দিনটিকে ঘিরে এখানে দিনব্যাপী চলে আনন্দ-উৎসব। দিনটির জন্য পুরো বছর অপেক্ষায় থাকে উপজেলাবাসী।

এটা জামাই মেলা হলেও এখানে মাছের বিরাট মেলা বসে। বিনিরাইল এবং এর আশপাশ গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন, সেসব জামাই হচ্ছেন মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শনার্থী। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ মেলাকে ঘিরে এলাকার জামাইদের মধ্যে চলে এক নীরব প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতা হচ্ছে, কোন জামাই সবচেয়ে বড় মাছটি কেনে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যেতে পারেন।
এ বছরের মেলায় ৪০ কেজি ওজনের একটা মাছ ঘিরে ক্রেতা জামাইদের প্রতিযোগিতা চলে। মাছটির নাম কাতল। বিক্রেতা দাম হেঁকেছেন ৬৫ হাজার টাকা। ক্রেতাদের মধ্যে স্থানীয় রামচন্দ্রপুর এলাকার জামাই রফিক সরকার মাছটির দাম সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা বলছেন। কিন্তু বিক্রেতা আরও বেশি দাম পাওয়ার আশায় মাছটি ছাড়ছেন না।
শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার জামালপুর, মোক্তারপুর ও জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের মধ্যে বিনিরাইল গ্রামে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলায় গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্য। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এ বাজারে মাছ কেনতে এসেছেন। জেলার বাইরে থেকেও অনেকে এসেছেন উপজেলার সর্ববৃহৎ এ মাছ মেলায়।
গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে অনেক মানুষ কেবল এ মেলা উপলক্ষে কালীগঞ্জে এসেছে। প্রতি বছর পৌষ-সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা। এবারের মেলায় তিন শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী নানা রকমের মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন।
মেলায় মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদির পসরাও বসেছে। মাছের মেলায় সামুদ্রিক চিতল, বাঘাড়, আইড়, বোয়াল, কালি বাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, কাইকলা, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানা রকমের দেশি মাছও।
বিনিরাইলের মাছের মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নুরু জানান, মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে। এটি অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে আয়োজন করা হতো। প্রায় ২৫০ বছর ধরে মেলার আয়োজন করে আসছে স্থানীয়রা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।
মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন শেখ জানান, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে শুরু হওয়া বিনিরাইলের মাছের মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। এ মেলা কালীগঞ্জের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে গণ্য হয়।
মেলায় কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা থেকে আসা মাছ ব্যবসায়ী নয়ন কুমার দাস জানান, তিনি ২০ বছর ধরে এ মেলায় দোকান করেন। শুরুতে বেচাকেনা ভালো হলেও বর্তমানে তেমন হয় না। তবে কেনার চেয়ে দেখতে আসা মানুষের ভিড় এখন বেশি। পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক স্থাপন হওয়ায় প্রতি বছর এ মেলায় যোগ দেন তিনি।
বিনিরাইলের মাছের মেলা সংলগ্ন মোক্তারপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের জামাই রফিক সরকার বলেন, শ্বশুরবাড়ি মাছ নিয়ে যাওয়া বলে কথা। তাই এলাকার সব জামাইর নজর বিনিরাইলের মাছের মেলার বড় মাছটার দিকে। স্থানীয় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা সপ্তাহখানেক ধরে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করেন। সেই অনুযায়ী মাছের দামও হাঁকানো হয়।
বিনিরাইলের মাছের মেলা নিয়ে কথা হয় কলাপটুয়া গ্রামের সোহেল আহমেদের সঙ্গে। তিনি জানান, এবার সাড়ে ১৫ হাজার টাকার চিতল, বোয়াল, আইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কিনেছেন বাড়িতে নেয়ার জন্য।
ঐতিহ্যবাহী এ মেলা সম্পর্কে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিল্লাল হোসেন জানান, মাছের মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক। মেলায় বেচাকেনা যা-ই হোক- এ মেলা আমাদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে বহন করছে, এটাই সবচেয়ে বড় কথা।