Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

3kখােলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭: নোয়াখালী জেলার ডানে-বাঁয়ে যেদিকেই চোখ যায় শুধু ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছোট-বড় সাইনবোর্ড। সরকার অনুমোদিত, জটিল রোগের সুচিকিৎসা হয়- এমন লেখা নিয়ে এসব সাইনবোর্ড ঝুলছে দোতলা-তিনতলা ভবনে কিংবা ছোটখাটো দোকানঘর এমনকি বসতঘরের সামনেও।

নোয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ফটকে দাঁড়িয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়বে সচরাচর। মনে হবে, এ যেন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হাট-বাজার।

অপরদিকে, বৃহত্তর নোয়াখালীর রোগীদের চিকিৎসাসেবার প্রধান আশ্রয়স্থল জেলা শহরে অবস্থিত নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালটি দালাল চক্রে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। যার ফলে হয়রানি ও অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন রোগীরা।

দুঃখজনক হলেও সত্য, নোয়াখালী শহরে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে যতটুকু সেবা মেলে, এর চেয়ে বেশি মেলে হয়রানি ও অপচিকিৎসা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এ অরাজকতা বন্ধে তেমন কোনো তৎপরতা নেই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের।

তবে কিছুদিন আগে জেলা প্রশাসন ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারগুলোতে অভিযান শুরু করে। এরই মধ্যে রয়েল, প্রাইম, ইনসাফসহ বেশকিছু হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিককে জরিমানাও করা হয়েছে।

জানা যায়, সরকারি হাসপাতালে কাক্সিক্ষত চিকিৎসাসেবা না পেয়ে বা না পাওয়ার আশঙ্কায় অনেক রোগীই বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা নেয়। আবার দালালদের খপ্পরে পড়েও বিপুলসংখ্যক রোগী হাসপাতাল এলাকা থেকেই ক্লিনিকগুলোতে চলে যায়।

একইভাবে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ না পেয়ে বা ব্যবস্থা না থাকায় অনেক রোগী বাইরের ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের দ্বারস্থ হয়। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে যে যেভাবে পারছে রোগীদের পকেট কেটে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।

সূত্র জানায়, এই বিপুলসংখ্যক রোগীর বিষয়টি মাথায় রেখেই হাসপাতাল ফটকের উল্টো দিকের কয়েকটি গলি এবং পাশের মাইজদী বাজার ও হাউজিং এস্টেট এলাকায় কয়েক বছরে ছোট-বড় পরিসরে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার।

চিকিৎসক, স্থানীয় প্রভাবশালীমহল এমনকি হাসপাতালের কর্মচারীরাও এগুলোর মালিক। এগুলোর মধ্যে কয়েকটির চিকিৎসা ব্যবস্থা ও সেবার মান প্রশংসনীয়। কিন্তু বেশির ভাগেরই মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। দালালদের মাধ্যমে রোগী এনে টাকা হাতিয়ে নেয়া, অপচিকিৎসা বা ভুল চিকিৎসার অভিযোগ রয়েছে বেশ কয়েকটির বিরুদ্ধে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের বেশ কয়েকটির অনুমোদন নেই। আবার বেশ কয়েকটির অনুমোদন থাকলেও চিকিৎসাসেবা সন্তোষজনক নয়। অনেকগুলোর নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও।

স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তার মতে, অনুমোদনহীন বা অনুমোদন পাওয়া অনেক ক্লিনিক ও সেন্টারে নির্দিষ্ট কিছু অনিয়ম ও অব্যবস্থা খালি চোখেও ধরা পড়বে। যেমন পর্যাপ্তসংখ্যক চিকিৎসক, নার্স ও টেকনোলজিস্ট না থাকা, দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নোংরা, ময়লা, ঘিঞ্জি ও দুর্গন্ধময় পরিবেশ, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব, মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট। এছাড়া অনেক ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের কাগজপত্র ঠিক থাকলেও বাস্তবে অনেক শর্তই পূরণ করা হয় না।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী, নোয়াখালীতে অনুমোদিত ক্লিনিক, ডায়াগনোস্টিক ছাড়াও আরো কিছু আবেদন রয়েছে। নিয়মানুযায়ী এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মিত নজরদারি করার কথা। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, এগুলো বেপরোয়া বাণিজ্য চালালেও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তা বন্ধে তৎপর নয়। কয়েক মাস পরপর হঠাৎ দু’একটি অভিযান পরিচালানা করে থাকেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তাদের নির্বিকার ভূমিকার কারণেই এ ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারগুলো বেপরোয়া।

জানা গেছে, শহরের ভুক্তভোগী ও নাগরিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষেিত জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি ক্লিনিকে অভিযান চালানো হয়। এ সময় নিবন্ধন না থাকা ও অন্যান্য অভিযোগে কয়েকটি হাসপাতালকে জরিমানা করা হয়।

একাধিক সূত্র জানায়, অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই তা বন্ধ করার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী মহল বিভিন্নভাবে অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

সিভিল সার্জন ডা. মজিবল হক বলেন, অনুমোদনহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই নতুন করে অভিযান শুরু হবে।