Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

N’ganj-7-murder-caseখােলা বাজার২৪, সোমবার, ২৩ জানুয়ারি ২০১৭: র‌্যাব একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। জঙ্গি দমন, সন্ত্রাস দমন, মাদক নির্মূল- এসব কাজে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। একটি প্রশংসিত বাহিনী। উচ্চাভিলাষী কয়েক কর্মকর্তার কারণে সাত খুনের ঘটনা ঘটলেও র‌্যাবের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়নি- নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুন মামলার রায়ে আদালতের পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে।’ গতকাল রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রেস ব্রিফ্রিংয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন এ তথ্য তুলে ধরেন।

অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন ৭ খুনের রায়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেন, ‘র‌্যাব একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। এই বাহিনীর অনেক সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী থেকে আরম্ভ করে জঙ্গি দমন, মাদক নির্মূলসহ বিভিন্ন অর্জন রয়েছে; কিন্তু বাহিনীটির যে কয় ব্যক্তি পাবলিকের সঙ্গে মিশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, এর সব দায়-দায়িত্ব তাদের। তারা উচ্চাভিলাষী জায়গা থেকে ঘৃণ্যতম অপরাধটি সংঘটন করেছে। তাদের দ্বারা র‌্যাবের মান-সম্মান ক্ষুণ্ণ হলেও সার্বিকভাবে র‌্যাব বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়নি।

আদালত তার পর্যবেক্ষণে র‌্যাবকে প্রশংসাও করেছেন আবার তিরস্কারও করেছেন, যাতে করে ভবিষ্যতে র‌্যাব বাহিনীতে এ ধরনের উচ্চাভিলাষী, ঘৃণ্যতম অপরাধের সঙ্গে কেউ যুক্ত হতে না পারে। এ জন্য র‌্যাব বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়ার সময় সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ওয়াজেদ আলী বলেন, জাতির ক্রান্তিলগ্নে র‌্যাব গঠন হয়েছিল। র‌্যাবে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে আদালতের পর্যবেক্ষণে।

আদালতের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন আরও বলেছেন, দুই কাউন্সিলর নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আসামি নূর হোসেনের আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে নিরীহ ৬ জন খুন হয়েছেন। তবে হত্যার টার্গেট ছিলেন শুধু নজরুল।

তিনি বলেন, আমরা ৭ খুনের ঘটনায় দুটি মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সময় যেসব অভিযোগ এনেছিলাম সেই অভিযোগগুলো রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে। যারা নৃশংস ও জঘন্যতম এ হত্যাকা-ের শুরু থেকে শেষ অবধি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত সেই ২৬ জনকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন আদালত। আর ৯ জনের মধ্যে ৭ জন যারা অপহরণের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রত্যেককে সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন এবং ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন। দুই জনকে আলামত নষ্ট ও ধ্বংস করার চেষ্টার অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করেন আদালত। এই রায়ের কপি উচ্চ আদালতে যাওয়ার পর পর্যায়ক্রমে ডেথ রেফারেন্স শুনানিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হবে। আমরা আশা করব নিম্ন আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে, তা বহাল থাকবে।

পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, ৭ খুনের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছিল। এর মধ্যে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৫ জনকে হত্যার ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে একটি এবং নিহত অ্যাডভোকেট চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় তার জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে অপর একটি মামলা করেছিলেন। প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৫ জনকে হত্যার ঘটনায় সেলিনা ইসলাম বিউটির মামলায় যে শাস্তি ঘোষণা করেছেন আদালত; অপর নিহত আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম হত্যার মামলায় একই শাস্তি ঘোষণা করেছেন।

আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, দুটি মামলার রায় হলেও তারা সাজা ভোগ করবেন এক সঙ্গে। একইদিন থেকে সাজার গণনা শুরু হবে। যারা পলাতক আছেন তারা গ্রেপ্তারের দিন থেকে অথবা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করলে সেদিন থেকে তাদের সাজা গণনা শুরু হবে।

পাবলিক প্রসিকিউটরের প্রেস ব্রিফ্রিং শেষে একটি লাল কাপড়ে মোড়ানো ৭ খুন মামলার রায়ের কপি ও জুডিশিয়াল রেকর্ড, মামলার সিডিসহ বিভিন্ন নথিপত্র পুলিশ প্রহরায় হাইকোর্টে পাঠানো হয়।

বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, বাহিনী হিসেবে র‌্যাব ভালো কি ভালো না। জঙ্গি বা সন্ত্রাস দমনে তারা কতটুকু সফল, এটা আদালতের বিচার্য বিষয় নয়। এটা আদালতের অভিমত হতে পারে। বিচার্য বিষয় হলো কে অপরাধ করেছে, কী কী অপরাধ করেছে সেটি।

আদালতের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর আশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘এখানে অপরাধ যারা করেছে তারাই আসলে দায়ী। তবে এখান থেকে বাহিনী হিসেবে র‌্যাবের শিক্ষা নেওয়ার বিষয় আছে। শুধু র‌্যাবই নয়, আসলে সব বাহিনীরই শিক্ষা নেওয়া উচিত।’

এ প্রসঙ্গে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি সাত খুনের দায় ব্যক্তির, র‌্যাবের নয়। কারণ একজন মানুষ কোনো অপকর্ম করলে তার দায় কোনোভাবেই বাহিনীর ওপর বর্তায় না।’

মামলার নথিপত্র হাইকোর্টে : এদিকে আলোচিত সাত খুনের মামলার রায়সহ যাবতীয় জুডিশিয়াল নথিপত্র ডেথ রেফারেন্স মামলা শুনানির জন্য হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে গতকাল রোববার দুপুরে নথিপত্র হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে পৌঁছায় বলে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ নিশ্চিত করেছেন। নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড হওয়া রায় কার্যকর করার পূর্বে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স শুনানির মাধ্যমে তা নিশ্চিত করার পরই কার্যকর করা যায়। তাই কোনো আসামি আপিল না করলেও ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়।

এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদসহ ২৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় দেন আদালত। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ। পরদিন মেলে আরেকটি লাশ। নিহত অন্যরা হলেন- নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম। দৈনিক আমাদের সময়