খােলা বাজার২৪, সোমবার, ২৩ জানুয়ারি ২০১৭: বিএনপির সামনে এখন সবচেয়ে বড় লক্ষ্য রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে একটি নিরপেক্ষ ও যোগ্য সার্চ কমিটি গঠন করানো। সেই সার্চ কমিটির মাধ্যমে একটি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করানো। আপাতত এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তারা সব ধরনের চেষ্টা করছে। বিএনপির নেতারা এই ব্যাপারে তাদের মনোভাব তুলে ধরছেন। সেই সঙ্গে তারা খোঁজ খবর রাখছেন রাষ্ট্রপতি কি করছেন। তারা জানতে পেরেছেন বিএনপির প্রস্তাবের আলোকে সার্চ কমিটি করা হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের ফর্মূলাতেই সার্চ কমিটি হচ্ছে। এই কারণে তাদের উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা বেড়েছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারক একজন নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বাইরে রাষ্ট্রপতি যেতে পারবেন না। তাকে আওয়ামী লীগের উপর থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে, যাতে করে তাদের পছন্দমতো নামের ব্যক্তিদের নিয়ে সার্চ কমিটি করা হয়। এই জন্য আওয়ামী লীগ সার্চ কমিটির নামের তালিকা ও আগামী দিনের নির্বাচন কমিশনার কারা কারা হবেন এই ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে আগেই জানিয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি হয়তো শেষ পর্যন্ত বিএনপির প্রস্তাব অনুযায়ী সার্চ কমিটি করবেন না এবং নিরপেক্ষদের দিয়ে কমিশন গঠন করবেন না। যারা আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থাভাজন,আওয়ামী লীগের পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি ও কমিশন গঠন করবেন। তা জেনেই সরকারি দল তেমন সুনিদিষ্ট করে সার্চ কমিটি গঠনের বিষয়ে প্রস্তাব দেয়নি। তারা যা করতে চাইছে সেটা কেবল রাষ্ট্রপতিকে করিয়ে নিতে চাইছে। আওয়ামী লীগ সরকারই ভোটিং করতে চায় ও এই কমিশন নয় এর পরিবর্তে যে কমিশন হবে ওই নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন করতে চায়। এই জন্য তারা সেটাই দিয়েছে। আবার তারা বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করবে এই জন্য তারা বলেছে নির্বাচনকালীন সরকার রুটিন কাজ করবে। আওয়ামী লীগ এই তিনটি বিষয় তাদের মতো করে করেছে। একটি বিষয় যেটি রাষ্ট্রপতি করবেন তা হলো সার্চ কমিটি। এতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নেই। রাষ্ট্রপতির ওপর আস্থা রেখেছেন, মানেই হলো, তারা যা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি সেই হিসাবেই কাজ করবেন। সেই জন্য পুরোপুরি আস্থা জ্ঞাপন করেছেন। এই কারণে বিএনপির আশঙ্কা আরও বেড়েছে।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তারেক রহমান ও খালেদা জিয়া দুই জনেরই আশঙ্কা রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগের কথার বাইরে যেতে পারবেন না। যদি যেতে পারেন তাহলে রাষ্ট্রপতি সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হবেন। তিনি যদি তা না করে আওয়ামী লীগের পছন্দমতো ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি করেন, তাহলে একদিকে রাষ্ট্রপতি প্রমাণ করে দিবেন তিনি দেশের নন আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি। আর স্বাধীনভাবে কিছুই করতে পারেন না। আমরা নানা ধরনের আশঙ্কা করছি। কিন্তু এরপরও বলবো শেষ ভরসাস্থল রাষ্ট্রপতি। কারো না কারো উপরতো ভরসা রাখতে হবে। এই কারণে রাষ্ট্রপতির উপর আস্থা রাখা হয়েছে। দেখা যাক, তিনি আসলে কতখানি দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে পারেন এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এটা এবার রাষ্ট্রপতির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবের বাস্তবায়ন করবেন নাকি বাকি ৩০টি দলের মতামতকে প্রাধান্য দিবেন। সেই অনুযায়ী কাজ করবেন। সঙ্গে আওয়্মাী লীগের যে অংশ সব দলের সঙ্গে মিল আছে সেটা নিবেন।
এদিকে খালেদা জিয়া নিজেরও সার্চ কমিটি গঠন ও কমিশন গঠন নিয়ে তার উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কথা বলেছেন। তিনি শনিবার রাতে অবস্থানও স্পষ্ট করে বলেছেন, আওয়ামী লীগের চাওয়া অনুযায়ী সার্চ কমিটি হলে সেটা জনগণ ও বিদেশিদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। রাষ্ট্রপতি কোনো দলের না, দেশের রাষ্ট্রপতি, তিনি সকলের কাছে সমান। আশা করব, জনগণ যেটা আশা করে রাষ্ট্রপতি সকলের কথা শুনে এমন সব ব্যক্তিদের দিয়ে সার্চ কমিটি বা নির্বাচন কমিশনটা গঠন করবেন। সবাই যেন বুঝতে পারে রাষ্ট্রপতি সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। তিনি যদি সরকারি দলের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য কোনো নির্বাচন কমিশন গঠন করে দেন, সেটা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার কাছে খবর রয়েছে, আওয়ামী লীগ যখন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছে তখন তারা চার দফার বাইরেও কাদের নিয়ে সার্চ কমিটি ও কমিশন চায় সেই বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। তবে সেই অংশটি প্রকাশ করা হয়নি। এখন রাষ্ট্রপতি দোটানায় পড়েছেন। ৩০ দলের প্রস্তাবের মধ্য থেকে কিছু নিবেন নাকি আওয়ামী লীগের দেওয়া প্রস্তাব ও ফর্মূলা মেনে চলবেন। আর এনিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণে সার্চ কমিটি গঠনে এত সময় নিচ্ছেন। কারণ কমিশনের আর মেয়াদ আছে পনের দিন।
খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখনই হতাশ হতে চাইছেন না। তিনি চাইছেন, রাষ্ট্রপতি সব দলের মত বিচার বিশ্লেষণ করে ও খোঁজ খবর করেই সার্চ কমিটি করবেন। তিনি মনে করছেন যে ব্যক্তি কোনো দলের প্রতি অনুগত তাকে সার্চ কমিটির সদস্য করা যাবে না। এর আগে সার্চ কমিটি সব সাংবিধানিক কমিটির প্রধানদের দিয়ে করা হয়েছিল। এবার সেটাও করা যাবে না। কারণ ওই পদে যাদেরকে বসানো হয় তাদেরকে সরকার বসায়। এই কারণেই তারা সরকারি দলের প্রতি অনুগত। সেই জন্য তাদের দিয়ে সার্চ কমিটি করা যাবে না। যেটা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান করেছিলেন।
খালেদা মনে করছেন, একজনকে সার্চ কমিটিতে ও কমিশনে নিয়োগ দেওয়ার আগে পরীক্ষা করে দেখতে হবে তিনি দলীয় কিনা ও নিরপেক্ষ কিনা। দলীয় হলে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। নিরপেক্ষ হলে দেওয়া যাবে।
খালেদা জিয়া মনে করেন, শুধু নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন হলেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ সরকার হতে হবে। সেই জন্য আরও নিরপেক্ষ সরকারের কথাও বলছি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা আমাদের আশঙ্কার কথা বলেছি। আমাদের চেয়ারপারসনও বলেছেন। এখন দেশের মানুষকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের পাশাপাশি তাদেরকে সোচ্চার হতে হবে। দেশের হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য তাদেরকে কাজ করতে হবে। এটা বিএনপির একার সংগ্রাম নয়। সবার সংগ্রাম। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির কোর্টে এখন বল। তিনি কি করবেন সেটাই দেখার বিষয়। আর আমরা এটাও বলে রাখি এর আগের যে পদ্ধতি অনুসরণ করে সার্চ কমিটি করা হয়েছিল তেমনটা হলে মেনে নেব না। সূত্র: আমাদের সময়.কম