Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

16kখােলা বাজার২৪, সোমবার, ২৩ জানুয়ারি ২০১৭: পাঁচ মাস আগে থেকে জরুরি জন্মবিরতিকরণ পিল খেতে শুরু করলেন কৃপা (ছদ্মনাম)। তবে খাওয়ার আগে গুগলে সার্চ করে বোঝার চেষ্টা করলেন কোনটা কিনতে হবে। কিন্তু এর জন্য বিশেষজ্ঞের কাছে গেলেন না তিনি। বললেন, তারা বিভিন্ন অস্বস্তিকর প্রশ্ন করেন। এগুলো নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে না। এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করলেন। একদিন সকালে জরুরি ভিত্তিতে জন্মবিরতিকরণ পিল খেতে হলো তাকে। তিনি গুগল থেকে পাঁট তারকা চিহ্নিত একটি পিল বেছে নিলেন।
দুই মাস হয়েছে বিভিন্ন সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছেন ২২ বছর বয়সী কৃপা। পিরিয়ডের সময় অনেক বেশি রক্ত বের হচ্ছে। সম্ভাব্য কারণ বুঝতেও গুগলের আশ্রয় নিলেন। এক বন্ধু পেইনকিলার খেতে বললেন। কিন্তু কিছুই হলো না। অবশেষে গত মাসে তিনি বিশেষজ্ঞের কাছে গেলেন। গাইনকোলজিস্ট বললেন, কৃপা ভুল জন্মবিরতিকরণ পিল ব্যবহার করেছেন। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ২১ বছর বয়সী কৃতি রাতির জীবেন। সম্প্রতি অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা নিয়ে গেছেন গাইনকোলজিস্টের কাছে। বিশেষজ্ঞের কারণ বুঝতে বেশি সময় লাগেনি। অনিরাপদ যৌনতার পর সকালে জন্মবিরতিকরণ পিল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলেন রাথি। গত দুই বছর ধরে তিনি মাসে দুই-তিনটি পিল খেয়ে আসছেন। গত ছয় মাস ধরে তার পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে বিশেষজ্ঞের কাছে আসা।
গ্রামে-গঞ্জে বা শহরের অনেক নারীই জানেন না বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া জন্মবিরতিকরণ পিল খাওয়া ঠিক নয়। ভুল সিদ্ধান্তে স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে পারে, জানালেন গাইনকোলজিস্ট ড. চারুশিলা সাবনে। বলেন, জরুরি ভিত্তিতে জন্মবিকরতিকরণের কাজে নিয়মিত জরুরি জন্মবিরতিকরণ পিল খাওয়া ঠিক না। এতে পিরিয়ড চক্র নষ্ট হয়ে যায়। এতে গর্ভের উর্বরতা নষ্ট হয়, হরমোন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে, ব্যথা ও অবসাদ দেখা দেয়। এ ছাড়া এলোমেলো পিল নিয়মিত খেলে সার্ভিক্যাল ইরোসিওনের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যগত সমস্যাও দেখা দেয়। জরুরি জন্মবিকরতিকরণ পিল বা রাতে যৌনতার পর সকালে উঠে খাওয়ার মতো পিল ফার্মেসিতে অহরহ মেলে। কিন্তু এগুলো বুঝে-শুনে-জেনে ব্যবহার করতে হবে।
বিশেষজ্ঞ ত্রিপাত চৌধুরি বলেন, নিয়মিতভাবে এসব পিল ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তা ছাড়া এসব পিলের অকার্যকারিতার হার অনেক বেশি। যদি কোনো নারী মাসে ৩-৪টি পিল গ্রহণ করেন, তবে তাকে নিয়মিত সাধারণ পিলেই চলে যাওয়া উচিত। হঠাৎ দুর্ঘটনা এড়াতে একটা খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু মাঝে মাঝেই ব্যবহার করলে পিরিয়ড চক্র নষ্ট হয়ে যাবে। গর্ভধারণও কঠিন হয়ে পড়বে।
অনলাইনে আসলে যেকোনো মানুষ নিজেকে জন্মবিরতিকরণ পিল বা গর্ভধারণ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হিসাবে তুলে ধরতে পারেন। এখান থেকে পরামর্শ নিয়ে নিজে নিজে পিল বাছাই করার কারণে স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে নারীদের আনাগোনা বেড়েই চলেছে। কম বয়সী মেয়েরা কখনোই বুঝতে পারেন না যে, তাদের কোন ধরনের পিল দরকার। কিভাবেই বা তা খেতে হয় তাও তারা জানেন না। এমনটাই বললেন গাইনকোলজিস্ট ড. অনিতা সোনি। বিশেষ করে ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সী মেয়েরা সবচেয় বেশি সমস্যায় জর্জরিত হয়ে বিশেষজ্ঞের কাছে ছোটেন।
তবে প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে। অনাকাক্সিক্ষত গর্ভাধারণ এড়াতে জন্মবিরতিকরণ ইঞ্জেকশনকে বেশ কার্যকর ব্যবস্থা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আসলে বাজারের কোনো পদ্ধতিই শতভাগ কার্যকর নয়। যারা নিয়মতি যৌনতা আগ্রহী, তাদের জন্য সাধারণ জন্মবিরতিকরণ পিল বেশ কাজের। সবেচয়ে বড় কথা হলো, জন্মবিরতিকরণ পিল যাই খান না কেন, কখনোই নিজে পছন্দ করতে যাবেন না। বিশেষ করে জরুরি জন্মবিকরতিকরণ পিলের বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে।
মানুষ সহজেই ইন্টারনেট থেকে তথ্য বের করতে পারেন। কিন্তু সেই তথ্য আপনার জন্য খাটে কিনা তা ভাবতে হবে। এ কাজটি আপনাকে নিরাপদে করে দিতে পারেন একজন বিশেষজ্ঞ।