খােলা বাজার২৪, বুধবার, ২৫ জানুয়ারি ২০১৭: হুঁশিয়ারী সত্বেও নাটোরে প্রকাশ্যে চলছে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের রমরমা ব্যবসা। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও পুস্তক বিক্রেতার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। স্থানীয় শিক্ষক সমিতির নেতাসহ কিছু অসাধু শিক্ষক এসব অবৈধ গাইড বই বাজারজাতের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ফায়দা হাসিল করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। ক্লাসে বুকলিস্ট দিয়ে নির্দিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নোট গাইড, গ্রামার, ব্যাকরণ বই কিনতে শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দিয়ে বাধ্য করছেন তারা। বিষয়গুলি খতিয়ে দেখে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ সহ জেলা শিক্ষা অফিস।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের টার্গেটে রেখে নতুন বছরের শুরুতেই জেলা সদর সহ প্রতিটি উপজেলায় বইয়ের দোকানে অবৈধ গাইড বইয়ে সয়লাব। লাইব্রেরীগুলোতে প্রকাশ্যে চলছে নিষিদ্ধ এসব গাইড বইয়ের প্যাকেজ ব্যবসা। নির্দিষ্ট প্রকাশনার প্রতিনিধিরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ম্যানেজ করে শিক্ষার্থীদের এসব গাইড কিনতে উৎসাহিত করছে। এজন্য তারা শিক্ষক সমিতিসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে অলিখিত চুক্তির মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থ প্রদান করছে।
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও পুস্তক বিক্রেতাদের গড়া সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে অভিভাবকদের বই কিনতে গিয়েও হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে। জেলা সদরে পাওয়া যায় না উপজেলার শিক্ষার্থীদের বই। স্ব স্ব উপজেলায় নির্দিষ্ট লাইব্রেরিতে এসব গাইড বই কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের । অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বা এজেন্টরা স্থানীয় পুস্তক ব্যবসায়ীদের সাথে অলিখিত চুক্তি করে বিভিন্ন উপজেলা সদরে বই বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন। স্ব-স্ব উপজেলার বই নির্দিষ্ট ওই কোম্পানী ছাড়া অন্য কোন কোম্পাণীর বই বিক্রি করছেনা পুস্তক বিক্রেতারা। আর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বুক লিস্ট ধরিয়ে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের।
সিংড়া উপজেলার দুর্গম পাঁচ লাড়–য়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা জানান, তার ছেলে শামিউল বসির উপজেলার পাঁচ লাড়–য়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণীতে পড়ে। তিনি নাটোর শহরের একটি দাতব্য চিকিৎসালয়ে চাকরী করেন। তাই ছেলের দেওয়া বুক লিস্ট অনুযায়ী গাইড বই কেনার জন্য শহরের বইয়ের দোকানগুলো গিয়ে বই পাননি। তাকে জানানো হয় সিংড়ার যে কোন স্কুলের বই কিনতে হলে সিংড়া উপজেলা সদর থেকে কিনতে হবে। তাদের কাছে ওই সব বই নেই। ওই বই কিনতে এখন একদিনের ছুটি নিতে হবে তাকে। এজন্য একদিনের বেতনও কাটা যাবে তার।
সিংড়া উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আফছার আলী এসব অভিযোগকে ভিতিহীন ও বানোয়াট দাবী করে বলেন, সমিতির কোন নেতৃবৃন্দ গাইড বই কেনার জন্য স্কুল শিক্ষকদের কোন নির্দেশনা দেননি। যেহেতু গাইড বইয়ের কোন প্রয়োজন নেই । সেখানে সিন্ডিকেট করার অভিযোগ কল্পনাপ্রসূত।
নাটোর মর্ডাণ লাইব্রেরী মালিক মহিফুল ইসলাম এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবী করে জানান, তারা কোন নোট ও গাইড বই বিক্রি করছেন না। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান যেভাবে তাদের বই দিচ্ছেন তারাও সেই ভাবে বাজারে বই বিক্রি করছেন। আর শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চাহিদার কারণে তারা অনুশীলন জাতীয় গাইড বই বিক্রি করছেন।
নাটোর জেলা পুস্তক বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আলী হোসেন জানান, অনুশীলন জাতীয় গাইড বই বিক্রির জন্য দীর্ঘদিন ধরে তারা আন্দোলন করে আসছেন। এ বিষয়ে হাইকোর্টে একটি মামলা চলমান আছে । শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকদের চাহিদার কারণে তারা এসব গাইড বই বিক্রি করেছেন ।
নাটোর গ্রীণ একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিমা বেগম জানান, তারা গাইড বই কিনতে কোন শিক্ষার্থীকে পরামর্শ দেন না। বরং যারা আগ্রহ দেখায় তাদের অনুৎসাহিত করা হয়। এখন প্রশ্ন পদ্ধতি হচ্ছে সৃজনশীল। একজন শিক্ষার্থী সরকারের সরবরাহকৃত মুল বই পড়লে গাইড বইয়ের প্রয়োজন হয় না।
জেলা শিক্ষা অফিসার আমজাদ হোসেন জানান, এধরনের কোন অভিযোগ তিনি পাননি। বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে গাইড বই আছে কিনা তা দেখা হচ্ছে। গাইড বই বিক্রি নিষিদ্ধ থাকার পরও যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এসব বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য বা পরামর্শ দিচ্ছেন তার প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে যথাপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।