খােলা বাজার২৪, বুধবার, ২৫ জানুয়ারি ২০১৭: দিন দিন ভূগর্ভস্তরের পানিস্তর কমে যাচ্ছে। কৃষিতে স্বল্প সময়ে কমপানিতে কৃষকদের রবিশষ্য আবাদের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। স্বল্প সময়ে ও কম পরিশ্রমে নওগাঁয় ভুট্টা চাষে উজ্জল সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় দিগন্ত মাঠ জুড়ে ভুট্টার গাছে সবুজ পাতা লক লক করছে। বাজার দর ভাল পেলে আগামীতে ভুট্টার আবাদ আরো বৃদ্ধিপাবে এমনটাই জানিয়েছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার জেলায় ৬ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে আত্রাই উপজেলায় ৪ হাজার হেক্টর, রাণীনগরে ৪৩০ হেক্টর সহ জেলার অন্যান্য উপজেলায় কমবেশি আবাদ করা হয়। এবার জেলায় ১হাজার ৬শ’ জন কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে উন্নতজাতের এনকে-৪০, সানসাইন, ৯৮১ ভুট্টা বীজ দেয়া হয়েছে। গত বছর ভুট্টার আবাদ হয়েছিল ৫হাজার ২০ হেক্টর জমিতে।
এ জেলায় প্রধান অর্থকারী ফসল ধান। গত কয়েক বছর থেকে কৃষকরা ধানের আবাদ করে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন। সরকার ধানের মূল্য নির্ধারন করে দিলেও কিছু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকরা ধানের মূল্য পাননা। আবার সরকারি গুদামেও ধান দিতে গেলে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়।
গুদামে নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান দেওয়ার পর বাজারে খুরচা ভাবে বিক্রি করে মূল্য পাওয়া যায়না। দেখা যায় ধান উৎপাদন করতে যে টাকা খরচ হয় সবকিছু বাদ দিয়ে কৃষকদের হাতে কোন টাকা থাকেনা। এতে করে কৃষকদের লোকসানে পড়তে হয়। কৃষকরা এখন ধানের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিয়ে স্বল্প পরিশ্রমে ও স্বল্প খরচে অধিক লাভের আশায় ভুট্টা চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন।
আত্রাই উপজেলার পাঁচুপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের কৃষক মেহেদী হাসান বলেন, এবার দুই বিঘা জমিতে উন্নজাতের ৯৮১ ভুট্টার আবাদ করেছেন। বিঘা প্রতি খরচ হয় ৪-৫ হাজার টাকা। আর ফলন হয় প্রায় ২৫-৩৫ মণের মতো। ভুট্টার আবাদে খরচও কম আবার পরশ্রিমও কম। দাম ভাল পেলে আগামীতে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে ভুট্টার আবাদ করবেন তিনি।
কৃষক আলতাফ হোসেন আড়াই বিঘা জমিতে সানশাইন ও মোরশেদ দুই বিঘা জমিতে ৯৮১ জাতের ভুট্টার আবাদ করেছেন। তারা বলেন, ধানের আবাদে পরিশ্রম বেশি। সে তুলনায় দাম পাওয়া যায়না। কিছু সিন্ডিকেটের কারণে মাঝখান থেকে লাভবান হয় মধ্যস্তভোগীরা। আর প্রতিবছরই কৃষকদের লোকসান গুনতে হয়। গত বছর কাঁচা ৪শ’ থেকে ৪৫০ টাকা এবং শুকনা ৫৫০-৬৫০ টাকা পর্যন্ত ভুট্টা বিক্রি হয়। এবার ভাল দাম পেলেই হয়।
রাণীনগর উপজেলা মিরাট ইউনিয়নের জালালাবাদ গ্রামের কৃষক আফছার আলী, মিরাট গ্রামে আব্দুর রহিম ও সাইদুল বলেন, ভুট্টার আবাদে রোগবালাই তেমন নাই। বোরো ধানের আবাদ কিছুটা কমিয়ে দিয়ে ওইসব জমিতে ভুট্টা চাষের দিকে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। ভুট্টার দাম সরকারি ভাবে নির্ধারন করা হলে কৃষকরা নায্য মূল্য পাবে এমনটাই জানান তারা।
আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেএম কাওছার হোসেন বলেন, বোরো চাষে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। বোরো চাষ কমাতে হবে অন্য ফসল বাড়াতে। ভূগর্ভস্তরের পানি সঞ্চয় করার জন্য কৃষকদের রবিশষ্যসহ স্বল্প পানি দিয়ে স্বল্প সময়ে ফসল চাষের জন্য উদ্বদ্ধ করা হচ্ছে। উপজেলার ২৫০ জন কৃষককে ভুট্টা চাষের জন্য প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আগামীতে ভুট্টার আবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে এমনটাই আশা করছেন তিনি।